জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য না পড়ার শাস্তি
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
শুক্রবার। আল্লাহ তাআলা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। প্রত্যেক সাবালক জ্ঞানসম্পন্ন পুরুষের জন্য জুমার নামাজ জামায়াতে আদায় করা ফরজ। জুমার নামাজের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ‘সুরাতুল জুমুআ’ নাজিল করেছেন।এই দিনে জোহরের ওয়াক্তে জামাতের সহিত যে দুই রাকায়াত নামাজ আদায় করা হয় তাকে জুমার নামাজ বলে। জুমা শব্দটি আরবি। এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া। জুমার নামাজ ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল।
সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন-মুসলমান একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই স্থানে একত্রিত হয়ে জামাতের সঙ্গে সে দিনের যোহরের নামাজের পরিবর্তে এই নামাজ ফরজরূপে আদায় করে। সে জন্য এই নামাজকে ‘জুমার নামাজ’বলা হয়। সপ্তাহের সেরা দিন শুক্রবার তথা জুমার দিন। এটি পৃথিবীর অন্যতম তাৎপর্যবহ দিবস। জুমা নামে পবিত্র কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল হয়েছে। সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআ, আয়াত : ১০)। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৪১০)।
জুমার দিনের গুরুত্ব : জুমার দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছিলেন এই দিনে। এই দিনেই হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে জান্নাতে একত্র করেছিলেন এবং এই দিনে মুসলিম উম্মাহ সাপ্তাহিক ঈদ ও ইবাদত উপলক্ষে মসজিদে একত্র হয় বলে দিনটাকে ইয়াওমুল জুমাআ বা জুমার দিন বলা হয়। জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতকালে কুবাতে অবস্থান শেষে শুক্রবার দিনে মদিনা পৌঁছেন এবং বনি সালেম গোত্রের উপত্যকায় পৌঁছে জোহরের ওয়াক্ত হলে সেখানেই তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।
জুমার দিনের ফজিলত : আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হন, তিনি যেন একটি উট কোরবানি করলেন, দ্বিতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করেন, তিনি যেন একটি গরু কোরবানি করলেন, তৃতীয় সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন, তিনি যেন একটি ছাগল কোরবানি করলেন। অতঃপর চতুর্থ সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে গেলেন, তিনি যেন একটি মুরগি কোরবানি করলেন। পঞ্চম সময়ে যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন, তিনি যেন একটি ডিম কোরবানি করলেন। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যান।’ ( বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।
১০ দিনের গুনাহ মাফ হয় : জুমার দিনের আদব যারা রক্ষা করে, তাদের ১০ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালোভাবে পবিত্র হলো, অতঃপর মসজিদে এলো, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনতে চুপচাপ বসে রইল, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী এ সাত দিনের সঙ্গে আরও তিন দিন যোগ করে মোট ১০ দিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে খুতবার সময় যে ব্যক্তি পাথর, নুড়িকণা বা অন্য কিছু নাড়াচাড়া করল, সে যেন অনর্থক কাজ করল।’ (মুসলিম : ৮৫৭)।
জুমার আদব রক্ষাকারীর ১০ দিনের গুনাহ মুছে যায় : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার সালাতে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। (ক) এক ধরনের লোক আছে যারা মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না। (খ) দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে যারা জুমা’য় হাজির হয় সেখানে দোয়া মুনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান তাকে কিছু দেন, আর যাকে ইচ্ছা দেন না। (গ) তৃতীয় প্রকার লোক হলো যারা জুমা’য় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে আগায় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তার দুই জুমা’র মধ্যবর্তী সাত দিনসহ আরও তিন দিন যোগ করে মোট ১০ দিনের গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন।’ (আবু দাউদ: ১১১৩)।
প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল রোজা ও এক বছরের সারারাত তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব অর্জিত হয়: যে ব্যক্তি আদব রক্ষা করে জুমার সালাত আদায় করে, তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার জন্য পুরো এক বছরের রোজা পালন এবং রাত জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার সওয়াব লেখা হয়।
আউস বিন আউস আস সাকাফী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন যে ব্যক্তি গোসল করে (অর্থাৎ সহবাস করে, ফলে স্ত্রী ফরজ গোসল করে এবং) নিজেও ফরজ গোসল করে, পূর্বাহ্ণে মসজিদে আগমন করে এবং নিজেও প্রথম ভাগে মসজিদে গমন করে, পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় (অর্থাৎ কোনো কিছুতে আরোহণ করে নয়), ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসে, মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শোনে, কোনো কিছু নিয়ে খেল তামাশা করে না; সে ব্যক্তির প্রতিটি পদক্ষেপের জন্য রয়েছে বছরব্যাপী রোজা পালন ও সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করার সমতুল্য সওয়াব।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৬৯৫৪, ১৬২১৮)। (চলবে)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কলাপাড়ায বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার শুভ উদ্বোধন
বদলগাছীতে সেলোমিশিন চালিত ট্রলির চাকায় পিষ্ট হয়ে হেল্পার জয় নিহত
সীমান্তে উদ্ভূত পরিস্থিতি : ভারতীয় হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্রসচিবের দপ্তরে ডেকেছে সরকার
ফরিদপুরে আবারও সড়ক দুর্ঘটনা ৫ ঘন্টার ব্যবধানে দুই মটরসাইকেল আরোহী নিহত
আগামী নির্বাচনকে ইতিহাসের সেরা ও ঐতিহাসিক করতে চাই
রাবিতে চার হলে পবিত্র কোরআন পোড়ানো: তদন্ত কমিটি, সর্বোচ্চ শাস্তির হুঁশিয়ারি
রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিদর্শনে - উপদেষ্টা ব্রি:জে:(অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
দুমকীতে বিএনপি অফিস ভাংচুর মামলায় ছাত্রলীগ নেতা আটক
তারেক রহমানের ৩১ দফা ছড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রসংস্কারে-আরিফুল ইসলাম বিলাত
বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, জনগণের স্বপ্ন পূরণে নতুন পুলিশ সদস্যরা কাজ করবে- অ্যাডিশনাল আইজি
ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ভোটগ্রহণ, আবারও এগিয়ে মিলানোভিচ
ঢাবিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
পোপ ফ্রান্সিসকে বাইডেনের প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল প্রদান
লিটনকে বাদ দেওয়ার যে ব্যাখ্যা দিলেন প্রধান নির্বাচক
টেকনাফ জিবির অভিযানে ২লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার
মোংলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে ট্রেনে কাটা পড়ে শিক্ষার্থী নিহত
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এমডি ও পিডিকে অপসারণ সহ ৯ দফা দাবিতে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মানববন্ধন
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসা সহজ করল বাংলাদেশ
ওজন কমাও মাসুদ, না হলে মানুষ মাংস কেটে নেবে!