যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ইসলামে মানুষের জীবনকে মূল্যবান ধন বলে গণ্য করা হয়েছে, আর এর প্রতিটি সময়ই আল্লাহর ইবাদতে উৎসর্গ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবু বিশেষভাবে যৌবনকালকে ইবাদতের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এ সময় মানুষ শারীরিকভাবে শক্তিশালী, মানসিকভাবে উদ্যমী এবং কর্মক্ষম থাকে। যৌবনের সময় করা ইবাদতের ফজিলত ও গুরুত্ব অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এই কলামে আমরা যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব।
যৌবনকাল হলো মানুষের জীবনের এমন একটি সময়, যখন ইবাদতের জন্য শক্তি ও ধৈর্য থাকে। এই বয়সে ইবাদত করা সহজ কিন্তু এর প্রতিদান ও মর্যাদা অনেক বেশি। এই সময় আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকার চেষ্টা করলে এবং নফস ও শয়তানের প্রলোভন থেকে নিজেকে রক্ষা করে ইবাদতে মনোনিবেশ করলে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করেন। যেমন, হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সাত শ্রেণীর মানুষ কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে, যখন আর কোনো ছায়া থাকবে না।’ এই সাত শ্রেণীর একজন হলেন সেই যুবক, যে তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটায়। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, যে যুবক আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকে এবং তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলে, সে আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কিয়ামতের দিন তার জন্য থাকবে বিশেষ ছায়া, যা অন্যরা পাবে না। এটা একটা বিরাট সম্মান, যা কেবল সেইসব যুবকদের জন্য নির্ধারিত, যারা তাদের যৌবনকালে আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করে।
যৌবনকালের ইবাদতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। এই বয়সে আল্লাহর ইবাদতে বেশি মনোনিবেশ করলে তাঁর রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। ইসলামে প্রাচীন ধর্মীয় কিতাবে এবং সহিহ হাদিসে আছে, ‘যে কেউ আল্লাহকে চিনে তার যুবক বয়সে, আল্লাহ তাকে বার্ধক্যের সময় চিনবেন।’ অর্থাৎ, যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে, আল্লাহ তার জীবনের প্রতিটি পর্বে তার প্রতি দয়াশীল থাকেন। যৌবনকাল অনেক প্রলোভন এবং পরীক্ষার সময়। এই বয়সে মানুষ নানা প্রলোভনে পড়ে পাপ কাজের দিকে ঝোঁকে, যা মানব চরিত্রের একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু একজন ধার্মিক যুবক যখন এসব প্রলোভন থেকে নিজেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর বিধান মেনে চলে, তখন সে তার চরিত্রকে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে। যৌবনের এ ধরনের সংযম এবং ইবাদত অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে ওঠে। যেমন, হাদিসে এসেছে, ‘যদি এক যুবক আল্লাহর ভয় পায় এবং খারাপ কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, তবে আল্লাহ তাকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করবেন।’ (তিরমিজি)।
যৌবনে শারীরিক শক্তি, মানসিক উদ্যম ও সাহস থাকে, যা অন্য যেকোনো বয়সের তুলনায় অনেক বেশি। ইসলামে শারীরিক শক্তিকে আল্লাহর পথে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে, এবং এটি অনেক সওয়াবের কাজ। হজ, সিয়াম (রোজা), কিয়ামুল লাইল (রাতের ইবাদত), জিহাদ ইত্যাদি আমলগুলো যৌবনে করা সহজ হয়।যৌবনে নিয়মিত নামাজ আদায় করা, সিয়াম পালন করা, বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা ইত্যাদি আমলগুলো এই সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের শারীরিক শক্তি ও সাহসকে আল্লাহর পথে কাজে লাগাও। তোমরা যদি শক্তিশালী ও সাহসী থাকো, তবে আল্লাহর পথে আরো বড় বড় কাজ করতে পারবে।’ (মুসলিম)। যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটানো যুবকদের জন্য কিয়ামতের দিন বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা থাকবে। কিয়ামতের দিন, যখন সবার জন্য ভীষণ প্রতিকূল অবস্থা হবে, তখন আল্লাহ সেইসব যুবকদের জন্য বিশেষ ছায়া প্রদান করবেন, যারা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। যেমন হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে যুবক তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটায়, আল্লাহ তাকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করবেন।’ এই হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, যৌবনকালে ইবাদত করা কেবল একটি নফল ইবাদত নয়, বরং এর মাধ্যমে একজন যুবক আখিরাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করতে পারে।
যে যুবক তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটায়, সে শুধু নিজের জন্যই সওয়াবের কাজ করছে না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছে। ইসলামিক সমাজে যুবকদের আদর্শ অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ইবাদত ও ভালো কাজ অন্যদের অনুপ্রাণিত করে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আল্লাহর পথে চলতে আগ্রহী হয়, সেজন্য যুবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে কাটানো শুধু একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, বরং এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি, কল্যাণ এবং নৈতিকতার উদাহরণ তৈরি করা যায়। আমরা যদি আমাদের যৌবনকালকে উপযুক্ত কাজে লাগাতে পারি তাহলে জীবন হয়ে যাবে স্বর্ণের খনি তুল্য। যৌবনে আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকা এবং তাঁর বিধান মেনে চলা যুবকদের জন্য আখিরাতে মহান সম্মান ও মর্যাদার ব্যবস্থা মহান রব রেখেছেন। তাই আমাদের সকলের উচিত যৌবনকালে বেশি বেশি ইবাদত করা, নেক আমল করা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু