জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য
০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

(গত দিনের পর) জুমার সালাত আদায়কারীদের জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী গুনাহের কাফফারা স্বরূপ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম; ২৩৩)। জুমার ফজিলতের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, এই দিনে এমন একটা সময় আছে, যখন মুমিন বান্দা কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনে একটা এমন সময় আছে, যে সময়ে কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কোনো কিছু প্রার্থনা করলে, অবশ্যই আল্লাহ তাঁকে তা দান করবেন। (সহীহ মুসলিম : ৮৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৭১৫১, আস্-সুনানুল কুবরা : ১০২৩৪)। হজরত আনাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমার দিনের কাক্সিক্ষত সময়টা হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। (মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৪৬০ , তিরমিজি : ৪৮৯)।
জুমার দিনে হাদিসে বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ আমল : গোসল করা। ফজরের ফরজ নামাজে সূরা সাজদা ও সূরা দাহর/ইনসান তিলাওয়াত করা। উত্তম পোশাক পরিধান করা। সুগন্ধি ব্যবহার করা। আগেভাগে মসজিদে যাওয়া। সূরা কাহফ তেলাওয়াত করা। মসজিদে গিয়ে কমপক্ষে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করা। ইমামের কাছাকাছি গিয়ে বসা। মনযোগ দিয়ে খুৎবা শোনা। খুৎবা চলাকালে কোনো কথা না বলা। দুই খুৎবার মাঝের সময়ে বেশি বেশি দোয়া করা। অন্য সময়ে দোয়া করা। কারণ এদিন দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ওপর সারাদিন যথাসম্ভব বেশি দরূদ পাঠ করা।
জুমার নামাজে দুই রাকাত ফরজ রয়েছে। এছাড়া ফরজ নামাজের পূর্বে চার রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে চার রাকাত বা’দাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। যোহরের মত ব্যক্তি চাইলে এসময় অতিরিক্ত নফল নামাজ আদায় করতে পারে। তবে এসব নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না এবং তা আবশ্যকীয়ও নয় বরং ব্যক্তি তা স্বেচ্ছায় করতে পারে এবং না করলে তার দোষ হয় না। জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা আবশ্যিক এবং তা একাকী আদায় করার নিয়ম নেই। কুরআনে জুমার নামাজের সময় হলে কাজ বন্ধ করে নামাজের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রতি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তি যদি কারণবশত (যেমন খুব অসুস্থ ব্যক্তি) জুমা আদায় করতে না পারে তবে তার ক্ষেত্রে যোহরের নামাজ আদায় করা নিয়ম। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির উপর, যেমন মুসাফির অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে যোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে মুসাফির চাইলে জুমা আদায় করতে পারেন।
জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ ও ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। জুমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খুতবা। এতে ইমাম সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও কুরআন-হাদিসের আলোকে দিকনির্দেশনা দেন। যে ইমাম খুতবা দেন তাকে বলা হয় খতিব। এসময় দুইটি খুতবা দেওয়া হয়। দুই খুতবার মাঝখানে অল্প কিছু সময়ের বিরতি নেওয়া হয়। মসজিদের প্রতিদিনের ইমাম খুতবা দিতে পারেন বা জুমার দিন বিশেষ কেউ খুতবা দিতে পারেন। খুতবা সাধারণত আরবি ভাষায় দেওয়া হয়। তবে কিছু স্থানে স্থানীয় ভাষায় খুতবা দেওয়ার প্রথা দেখা যায়। শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুমার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। যা আমাদের জন্য আল্লাহর এক অন্যতম রহমত। কোরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই আমাদের মুসলমান হিসাবে জুমার নামায পড়া জরুরি। যারা জুমার নামাজ হতে বিমুখ থেকে অন্য কাজ-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। আল্লাহ তাআলা তার দিক থেকে বিমুখ থাকেন।
জুমার নামাজ না পড়লে যে শাস্তি : রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)। অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জুমা ত্যাগকারী লোকেরা হয় নিজেদের এই খারাপ কাজ হতে বিরত থাকুক। (অর্থাৎ জুমার নামাজ আদায় করুক), নতুবা আল্লাহ তাআলা তাদের এই গোনাহের শাস্তিতে তাদের অন্তরের ওপর মোহর করে দেবেন। পরে তারা আত্মভোলা হয়ে যাবে। অতঃপর সংশোধন লাভের সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়ে যাবে। (মুসলিম)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
তবে আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হলো- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)। এ ছাড়া নামাজ পড়া মুসলিমদের একটি নিদর্শন। তাই হজরত উমর (রা.) বলতেন, ‘নামাজ ত্যাগকারী নির্ঘাত কাফের’ (বায়হাকি: ১৫৫৯, ৬২৯১)। হজরত আলি (রা.) বলেন, ‘যে নামাজ পড়ে না সে কাফের’ (বায়হাকি: ৬২৯১)। নামাজ পরিত্যাগকারীর ব্যাপারে কোরআন-সুন্নাহর দলিলগুলো প্রমাণ করে, বেনামাজি ব্যক্তি ইসলাম নষ্টকারী বড় কুফরিতে লিপ্ত। তাই জুমা ও যেকোনো ওয়াক্তের ফরজ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া জরুরি।সুতরাং জুমার নামাজ মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফরজ ইবাদাত। আর জুমার দিনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। জুমার নামাজ এবং এ দিনের আমল বর্জন থেকে বিরত থাকা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এ দিনের নামাজ ও আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘ফরিদপুরে উত্তাল’ 'ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বাহিনীর গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ'

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে নিটারে মিছিল

গাজায় ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বেরোবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মুন্সীগঞ্জে ৩ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে নাগেশ্বরীতে বিেিক্ষভ মিছিল ও সমাবেশ

মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আটঘরিয়ায় সাদা সোনার বাম্পার ফলন

ভূরুঙ্গামারীতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

মাগুরায় নিহত যুবদলের নেতা মিরাজের নামাজে জানাজায় গন মানুষের ঢল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দাউদকান্দিতে হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল

সাভার পৌরসভায় দুদকের অভিযান, অনিয়মে ও দুনীর্তির প্রমাণ মিলেছে

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গোয়ালন্দে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পীরগনজ বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ -সমাবেশ

‘বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগ ইতিবাচক, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন’

রামুতে ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ আন্দোলনে ঢাবি সাদা দলের সংহতি

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ: মিছিলে উত্তাল বায়তুল মোকাররম এলাকা