রাষ্ট্র মেরামতের পথিকৃৎ রাসূল (সা.)

Daily Inqilab আসিফ আল মাহমুদ

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

মহানবী (সা.) মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর সবচাইতে শ্রেষ্ঠ উপহার! মানব সভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ পর্যায়গুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.) -এর অতুলনীয় মহত্ত্ব ও গুণের ছাপ স্পষ্ট। সূরা আল-আহযাবের ৪৫ ও ৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বায়ক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’ পবিত্র কুরআনে সূরা আল-আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) -কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাকরুণা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘আমি (আল্লাহ) আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি।’

ইসলাম কেবল আধ্যাত্মিক বিধান অথবা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের নাম নয় বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যার মধ্যে মুসলমানদের সামগ্রিক জীবনবিধান, ধর্মীয় ও সামাজিক বিষয়াদি, দেওয়ানী-ফৌজদারী মামলা, ব্যবসাপাতি সংক্রান্ত, সামরিক বিচার বিভাগীয় এবং দন্ডবিধি বিষয়ক বিবিধ আইন-কানুন রয়েছে! এ ধর্মের প্রবর্তক হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি হলেন বিশ্বের প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক! যাঁর ছিল না কোনো নিয়মিত সৈন্যবাহিনী, না ছিল কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কর্মসূচী! অথচ তিনি এমন একটি আদর্শ রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেছিলেন যার নিদর্শন আজও ইতিহাসে বিরল!

একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার যতগুলো দিক ও বিভাগ থাকা আবশ্যক তার সবকিছু দিয়েই মানব সম্প্রদায়ের জন্য ‘দ্বীন ইসলাম’ নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সেইসব বিভাগের একজন দক্ষ মহামানব! একজন পূর্ণাঙ্গ মহামানব হিসেবে তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক আবার সেই সাথে ন্যায়পর প্রধান বিচারপতিও বটে! দক্ষতার সাথে তিনি যেমন প্রশাসন পরিচালনা করেছেন তেমনি তিনি সাম্য ও ইনসাফের সাথে বিচার ব্যবস্থাও তত্ত্বাবধান করতেন। তিনি তাঁর জীবদ্দশায় আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অনেক বিচার-ফয়সালা করেছেন। পক্ষপাতিত্ব, প্রভাবিত কিংবা আবেগতাড়িত হয়ে কোনো বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন এহেন একটিও নজির তাঁর বিচারক জীবনের ইতিহাসে নেই! তিনি ন্যায়ের পক্ষ অবলম্বন করতে গিয়ে কোনদিন নিজের আহাল, আত্মীয়-পরিজন ও জলিল-কদর কোনো সাহাবীর পক্ষও নেন নি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) উন্নত জীবনকে যে আলোকে দেখেছেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকেও সেই নিরিখে সাজিয়ে-গুছিয়ে সুস্থ দেহে বিশুদ্ধ মনের বিকাশ ঘটাতে এবং কেবলমাত্র পার্থিব জীবনের জন্যই নয় আধ্যাত্মিক জীবনকে প্রস্ফুটিত করতে এবং শুধু ইহলৌকিক নয় পারলৌকিক জীবনের সৌষ্ঠব বিকাশের সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্যও প্রস্তুত করেন যাতে কেবল ব্যক্তিজীবন নয় সমাজ জীবনও উন্নততর হতে পারে। এ থেকে বলা যায়, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক! নবী করিম (সা.) শিক্ষাক্ষেত্রে এখনো পথিকৃৎ, মূর্তিমান দিশারিতুল্য, উজ্জ্বল এক দীপশিখার ন্যায়! বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে নৈতিকতার আবরণমুক্ত করে অগ্রসরমান মানবগোষ্ঠী যেভাবে আজ এগিয়ে চলছে তা যে কোনো মুহূর্তে সমগ্র মানবসমাজকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে! আর তখন কিন্তু বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থাই হতে পারে একমাত্র উজ্জ্বল আলোকরশ্মি।

সত্য ও আদর্শের মহানায়ক বিশ্বনবীর জীবনকে আমরা পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই যে, জগতে যদি কোনো পূর্ণাঙ্গ সুন্দর, সার্থক মহামানব এসে থাকেন তবে তিনি হলেন ‘হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’। নবীজির জীবন ছিল এক মহাসমুদ্রের ন্যায় যেখানে অনন্তকাল ধরে আহরণ করলেও তার মনিমুক্তা শেষ হবার নয়! তিনি ছিলেন তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাতের দিকে আহ্বানকারী এক জীবন্ত সংবিধান! মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব ছিল পৃথিবীর মানুষকে ইসলামের দিকে ফেরানো ও ধরণীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা আর এটিই ছিল তাঁর চূড়ান্ত মিশন। মদিনা রাষ্ট্রের সামাজিক সুবিচার ও অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করা মহানবীর রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার নিদর্শন! সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনের দার্শনিক ‘জন লক’ বহুল আলোচিত এক তত্ত্বের ভিত্তিতে বলেছিলেন, ‘সেই রাষ্ট্রই সর্বশ্রেষ্ঠ যা শাসিতের সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় (ঞযধঃ মড়াবৎহসবহঃ রং ঃযব নবংঃ, যিরপয রং নধংবফ ড়হ ঃযব পড়হংবহঃ ড়ভ ঃযব মড়াবৎহবফ)। কথিত তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ঘটেছিল মদিনায়, ৬২২ খ্রিস্টাব্দে এবং যার মূলে ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মনীষী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। এই নগরীতে মহানবীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মসজিদে নববী’ যা ছিল গণতান্ত্রিক মদিনা রাষ্ট্রের নির্বাহী কর্তৃত্বের প্রাণকেন্দ্র, আইন প্রণয়নের কেন্দ্রবিন্দু, ন্যায়নীতি ও বিচার বিভাগের শীর্ষস্থান! বাংলাদেশে আজ যেখানে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সংস্কারের কথা বারংবার বলা হচ্ছে সেখানে রাসূল (সা.) -এর রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি ও কৌশল হতে পারে আমাদের জন্য ‘রোল মডেল’!

 


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

সকল সমস্যার সমাধান বাস্তবায়ন করতে চাই: নবাগত ডিসি জাহিদুল ইসলাম

সকল সমস্যার সমাধান বাস্তবায়ন করতে চাই: নবাগত ডিসি জাহিদুল ইসলাম

কুয়েটের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ২৪ এপ্রিল

কুয়েটের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন ২৪ এপ্রিল

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ, যুবক গ্রেফতার

রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষনের অভিযোগ, যুবক গ্রেফতার

অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা

অব্যাহতি পাওয়া এসআইদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা

রাজশাহীতে যুবদল নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষন, বাবা নিহত

রাজশাহীতে যুবদল নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষন, বাবা নিহত

খুবির অধীনে পাইকগাছা কৃষি কলেজ, ডিপ্লোমাধারীদের জন্য চালু হবে বিএসসি

খুবির অধীনে পাইকগাছা কৃষি কলেজ, ডিপ্লোমাধারীদের জন্য চালু হবে বিএসসি

তাবলীগ জামায়াতের উভয়পক্ষের বৈষম্য সংকট সমাধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

তাবলীগ জামায়াতের উভয়পক্ষের বৈষম্য সংকট সমাধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

টিউলিপের পদত্যাগ নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি : আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর

বিয়াই বাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেল গৃহবধুর

ফেনীতে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

ফেনীতে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী

ন্যায়ের উপর অবিচল থেকে শ্যামল-সুন্দর জন্মভূমির মানুষকে ভালোবাসি: আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী

গৌরনদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মটরসাইকেল চালকসহ নিহত - ২

গৌরনদীতে সড়ক দূর্ঘটনায় মটরসাইকেল চালকসহ নিহত - ২

বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক কারাগারে

বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক কারাগারে

পীরগঞ্জে আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

পীরগঞ্জে আইএফআইসি ব্যাংকের কম্বল বিতরণ

‘তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেতে হবে’

‘তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে যেতে হবে’

ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাবি

ছাত্রীদের আবাসনের জন্য মাসে ৩ হাজার টাকা দেবে ঢাবি

নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহ্বান ইউজিসি’র

নারী ও শিশুর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করার আহ্বান ইউজিসি’র

তাবলীগ জামাতে বৈষম্য নিরসনের দাবি

তাবলীগ জামাতে বৈষম্য নিরসনের দাবি

অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে যোগ হলো একটি ওয়ানডে

অস্ট্রেলিয়ার শ্রীলঙ্কা সফরে যোগ হলো একটি ওয়ানডে