ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.)
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম

শেরে খোদা মাওলা আলী (রা.) তখন আমিরুল মুমিনিন। তার খেলাফতের দিনগুলো ফুল বিছানো ছিল না। প্রতিটি পথ ছিল কাটা ভরিত। যে কাটা এখনো বিঁধে আছে ইতিহাসের গলায়। বাগানে ফুলের চেয়ে কাটাই বেশী থাকে। তবে দক্ষ মালি হাজারো কাটার ভেতর থেকে ফুল তুলে নিতে ভুল করেন না। মাওলা আলীও বেছে বেছে ফুলের যতœ নিয়েছেন। ইসলামের জন্য রুয়ে গিয়েছেন ফুলের বীজ। ছোট্ট শিশু সাবিত এসেছিলেন আলীর দরবারে। মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন তার বংশধরদের জন্য। দোয়ার বীজ মহিরুহ হতে বেশি সময় লাগেনি। মাওলা আলীর দোয়ার অনেক বছর পর ৮০ হিজরিতে সাবিতের বংশে নূরের বাতি জ¦ালিয়ে পৃথিবীতে আসেন নুমান নামের এক তুখোর প্রতিভার অধিকারী মানব শিশু। তার পুরো নাম নুমান ইবনে সাবিত ইবনে জুতি ইবনে মাহ। গবেষকরা বলেন, ইমাম আবু হানিফার পূর্ব পুরুষরা পারস্যের সম্ভ্রান্ত বংশের লোক ছিলেন। তার মাতৃভাষা ছিল ফারসি। (ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.), ২৭ পৃষ্ঠা।)
ইমাম আবু হানিফা পরিণত বয়সে বেশ কয়েকজন সাহাবির সাক্ষাত পেয়েছেন। ফলে জীবনীকাররা সন্দেহাতীতভাবে তাকে তাবেয়ি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, আনাস ইবনে মালেক (রা.), সাহল ইবনে সাদ (রা.), আবু তোফায়েল আমর ইবনে ওয়াসেলা (রা.) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফাসহ (রা.) আরো কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে আবু হানিফার সাক্ষাত প্রমাণীত। ইমাম আজমের তাবেয়ি হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত প্রমাণ পাওয়া যায় ইবনে সাদ, খতিব আল বাগদাদি, আবদুল করিম সামআনি, ইমাম নববি, ইমাম জাহাবি, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি ও জাইনুদ্দিন ইরাকির লেখায়। (মানাকিবে ইমাম আবু হানিফা, ২৯৬ পৃষ্ঠা।)
ইমাম আজমের বাবা ছিলেন তুখোর ব্যবসায়ী। তার দাদা পারস্য থেকে কূফায় হিজরত করে আসেন। ধারণা করা হয়, ইসলাম গ্রহণ করার কারণে জুতির পরিবারের ওপর সমস্যার পাহাড় নেমে আসে। তাই তিনি ধর্ম বাঁচাতে পারস্য থেকে কূফায় হিজরত করেন। তখন ছিল চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর শাসন। জুতির যাতায়াত ছিল খলিফার দরবারে।
ইমাম আবু হানিফা যখন জন্মগ্রহণ করে তখন স্বৈরশাসক হাজ্জাজ ক্ষমতায়। হাজ্জাজের পর ক্ষমতায় আসে ওলিদ। এ দুই শাসকের সময়কালে শৈশব ও কৈশর কেটেছে আবু হানিফার। এ সময় তিনি পৈত্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। পড়াশোনা তখনো শুরু করেননি তিনি। তার ইলমি সাগরে যাত্রা শুরু হয় সুলাইমানের শাসনের সময়। এ নিয়ে একটি সুন্দর গল্প প্রচলিত আছে। গল্পটি স্বয়ং ইমামের মুখেই শোনা যাক। ‘একদিন আমি বাজারে যাচ্ছিলাম ব্যাবসার কাজে। পথে কুফার বিখ্যাত আলেম ইমাম শাবির সঙ্গে দেখা। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা! তুমি কোথায় যাচ্ছো? আমি একজন সওদাগরের নাম বললাম। ইমাম বললেন, আমি জানতে চাচ্ছি, তুমি কারো কাছে পড়াশোনা করো কি না? আমার কণ্ঠে এক রাশ আক্ষেপ ফুটে উঠল। দীর্ঘশ^াস ফেলে বললাম, আমি কারো কাছে পড়ি না। আমার জবাব শুনে ইমাম শাবি বললেন, তোমার ভেতর আমি বিশাল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। তোমার অবশ্যই আলেমদের দরসে বসা উচিত। কথাগুলো আমার ভেতর ছুয়ে গেল। আমি এলম সাধনার জন্য পাগল হয়ে গেলাম।’ (মানাকিবে ইমাম আজম, ৫৪ পৃষ্ঠা।)
ইমা আবু হানিফার উস্তাদদের মধ্যে ইমাম হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কূফায় ইমাম হাম্মাদের মাদরাসা ছিল। তিনি বহু তাবেয়ির উস্তাদ। হজরত আনাস (রা.) থেকে তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম ফকিহ সাহাবি ইবনে মাসউদের ফিকহ শিক্ষা দিতেন। ইমাম আবু হানিফা দশ বছর ইমাম হাম্মাদের কাছে ফিকহ শিক্ষা করেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘ দশ বছর ইমাম হাম্মাদের মাদরাসায় পড়াশোনা করেছি। দশ বছর শেষে আমার মনে হল, এবার আমি পড়াতে পারি। কিন্তু উস্তাদের সম্মানে আমি পড়ানো থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি।’ (তারিখে বাগদাদি, ১৩ খন্ড, ৩৩৩ পৃষ্ঠা।)
ইমাম হাম্মাদের মাদরাসায় পড়ার সময়ই ইলমে হাদিসের ব্যাপারে আগ্রহী হন ইমাম আজম (রহ.)। কেননা ইলমে ফিকহে বুৎপত্তি লাভের জন্য ইলমে হাদিসের ওপর দখল থাকা প্রয়োজন। হাদিস শিক্ষার জন্য ইমাম আজম কুফার আলেমদের মজলিসে বসতে শুরু করলেন। কুফার মুহাদ্দিসদের থেকে দারস শেষ করে তিনি ইলমে হাদিসের জন্য মক্কা-মদিনায় ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিস আতা ইবনে আবু রাবাহ আল কুরাইশির কাছে ইলমে হাদিস শিক্ষা করেন। আতা ছিলেন যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। প্রায় দুইশ সাহাবির সান্নিধ্য থেকে ইলম আহরণ করেছেন তিনি। সাহাবিরাও তার মজলিসে বসত। তিনি সাহাবিদের উপস্থিতিতে ফতোয়া দিতেন এবং তার ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হত। এছাড়াও হাফেজে হাদিস আবদুল্লাহ ইবনে ইকরিমা, সুলাইমান ইয়াসার, সালিম ইবনে আবদুল্লাহসহ মক্কা-মদিনার শ্রেষ্ঠা মুহাদ্দিসদের থেকেও ইলমে হাদিস শিখেন ইমাম আজম (রহ.)। হাদিসের অন্যতম সেরা মনিষী ইমাম আওজায়ী (রহ.) ইমাম আবু হানিফাকে হাদিসের সনদ দেন।
হাদিসের জগতে তিনি ছিলেন স¤্রাট। এজন্য ইমাম আবু হানিফার বিশিষ্ট ছাত্র হাফেজ আবদুর রহমান মুকরী (রহ.) ইমাম আজমের সূত্রে হাদিস বর্ণনা করার সময় বলতেন, ‘আখবারানা শাহেন শাহ অর্থাৎ হাদিস জগতের স¤্রাট আমাদের কাছে হাদিস বর্ণনা করেছেন।’ জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিস মিসআর বিন কিদাম (রহ.) বলেন, ‘আমরা আবু হানিফার সাথে হাদিস পড়েছি, এ শাস্ত্রে তিনি আমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন। এরপর আমরা আত্মিক পরিশুদ্ধতা তথা তাজকিয়াতুন নফস অর্জনে মনোযোগী হই, এখানেও তিনি আমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। ইমাম আজমের হাত ধরেই কিতাবুল আছার নামে প্রথম সহিহ হাদিস গ্রন্থ রচিত হয়। অসংখ্য হাদিস থেকে যাচাই বাছাই করে তিনি এ গ্রন্থ রচনা করেন। ছদরুল আয়িম্মা মুওয়াফফাক ইবনে মক্কী বলেন, ইমাম আবু হানিফা ৪০ হাজার হাদিস থেকে যাচাই বাছাই করে কিতাবুল আছার সংকলন করেন। (মানাকিবু আবি হানিফা, ২৭ পৃষ্ঠা।)
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সৈয়দপুরে বিশাল বিক্ষোভ

‘ফরিদপুরে উত্তাল’ 'ফিলিস্তিনে ইসরাইলী বাহিনীর গনহত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ'

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় ইসরাইলের চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে নিটারে মিছিল

গাজায় ইসরাইলি বর্বর আগ্রাসনের প্রতিবাদে বেরোবিতে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মুন্সীগঞ্জে ৩ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবিতে নাগেশ্বরীতে বিেিক্ষভ মিছিল ও সমাবেশ

মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

আটঘরিয়ায় সাদা সোনার বাম্পার ফলন

ভূরুঙ্গামারীতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

মাগুরায় নিহত যুবদলের নেতা মিরাজের নামাজে জানাজায় গন মানুষের ঢল

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নির্বিচারে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে দাউদকান্দিতে হেফাজত ইসলামের বিক্ষোভ মিছিল

সাভার পৌরসভায় দুদকের অভিযান, অনিয়মে ও দুনীর্তির প্রমাণ মিলেছে

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে চিলমারীতে বিক্ষোভ মিছিল

গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে গোয়ালন্দে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

ফিলিস্তিনে গণহত্যায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পীরগনজ বিক্ষোভ মিছিল প্রতিবাদ -সমাবেশ

‘বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের উদ্যোগ ইতিবাচক, বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবেন’

রামুতে ফিলিস্তিনে গনহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’ আন্দোলনে ঢাবি সাদা দলের সংহতি