ঘুষ : একটি অবৈধ উপার্জন
১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৫ এএম

ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ একটি মারাত্মক জঘণ্য কারবার। অর্থ উপার্জনের একটি অতি ঘৃণিত নিষিদ্ধ বা হারাম পন্থা। অর্থের বিনিময়ে অর্থাৎ নির্ধরিত বেতনের চুক্তিতে নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি উক্ত কর্ম সম্পাদনের বিনিময়ে অথবা কেউ যখন অবৈধ পন্থায় কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো অর্থ অথবা অন্যভাবে আর্থিক কিংবা অনুরূপ সংশ্লিষ্ট সুবিধা গ্রহণ করে, তখন তাকে ঘুষ বলে।
ঘুষের কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য অনেক রকম হতে পারে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট কর্ম সম্পাদনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ইচছা করেই উক্ত কর্ম সম্পাদনে গড়িমসি, অবহেলা অথবা দীর্ঘসূত্রিতা করতে থাকে। উদ্দেশ্য, উক্ত ব্যক্তিকে হয়রানির মাধ্যমে মানসিকভাবে দুর্বল করে উক্ত কার্যসিদ্ধির জন্য তাকে ঘুষ প্রদানে বাধ্য করা। প্রার্থিত ঘুষ পেলেই সে তখন কর্মটি সম্পাদনে সক্রিয় হয়। অথচ এক্ষেত্রে উক্ত ঘুষ প্রদানকারী ব্যক্তিটি ওই ঘুষটি প্রদান করেছে তার ন্যায্য প্রাপ্তির জন্যও।
অন্যায্য প্রাপ্তির জন্যও ঘুষের কারবার চলে। এটি অত্যন্ত মারাত্মক এবং ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণকারী গৃহীত ঘুষের বিনিময়ে ন্যায্যপ্রাপ্তির ব্যক্তিকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে অন্যকে, অর্থাৎ তার প্রতিপক্ষকে প্রাপ্তি অথবা সুবিধা প্রদান করে থাকে। এতে করে একদিকে এই দ্বিতীয় ব্যক্তিটি যেমন অবৈধ সুবিধা ভোগের অধিকারী হয়, অপরদিকে তেমনি প্রথম ব্যক্তিটি তার বৈধ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়। এ এক করুণ ও মর্মান্তিক পরি¯ি’তি। এক চরম অকল্যাণকর অবস্থা। এ অবস্থা থেকে অনেক সময় পরিণতিতে একটি জীবন, সংসার ও সমাজকে চরমভাবে ধ্বংস করে ফেলে।
এজন্যই ঘুষকে ইসলাম ধর্মে হারাম করা হয়েছে। ঘুষের কর্মকা- থেকে মুক্ত থাকার জন্য কোরান ও হাদীসে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্-কোরানে সূরা বাকারার ১৮৮ সংখ্যক আয়াতে বলা হয়েছে : ‘আর মানুষের ধন-সম্পদের কিছু অংশ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের ঘুষ দিও না।’ এখানে ঘুষ প্রদানের ক্ষেত্র হিসেবে বিচারকের কথা উল্লেখ করা হলেও তা সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিচারক বলতে সর্বো”চ মীমাংসার ক্ষেত্র বোঝানো হয়েছে। সর্বো”চ ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য, নি¤œক্ষেত্রে তা তো অবধারিত বটেই। আর তাছাড়া যে ব্যক্তি কোনো কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব গ্রহণ করে, এক অর্থে সে তো বিচারকই।
আল্-কোরানের এ আয়াতটির বিশ্লেষণ রয়ছে বিভিন্ন হাদীসে। বোখারী শরীফে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনÑ‘আমরা যাকে (যে কাজের জন্য) যে পদে নিয়োগ করি, তাকে সেজন্য বেতন দেয়া হবে। তা (অর্ধাৎ বেতন) ছাড়া সে যা গ্রহণ করবে, তা ঘুষ। এই ঘুষ শুধু গ্রহণকারীই নয়, প্রদানকারীও অপরাধী। কারণ ঘুষ যে গ্রহণ করে, সে মন্দ অর্থাৎ অবৈধ কার্য সমাধা করে। আর যে ঘুষ প্রদান করে, সে উক্ত ব্যক্তিকে অবৈধ কার্য সমাধা করতে সহায়তা তো করেই; উপরš‘ সে ঘুষের মাধ্যমে অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে। তাই উক্ত অপরাধ বা পাপ থেকে কোনোক্রমেই সে মুক্ত হতে পারে না। বরং ঘুষের কর্মকা-ের জন্য ঘুষ প্রদানকারীর গরজ ও ভুমিকা বেশি থাকে। তাই তার অপরাধটি বেশি বলে গণ্য হওয়া সমীচীন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইব্নে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে : ‘যে বা যারা ঘুষ দেয়, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে অভিশাপ প্রদান করেছেন।’ (ইব্নে মাযাহ, আবু দাউদ)।
মুসলিম শরীফে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনÑ‘ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।’ তিবরানী শরীফে বর্ণিত অন্য আর একটি হাদীসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনÑ‘ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামী।’ একথার অর্থ হ”েছ, ঘুষ দাতাও ঘুষ গ্রহীতা যতই এবাদত করুক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না। অর্থাৎ তার কোনো এবাদতই আল্লাহ পাকের দরবারে গৃহীত হবে না। আর তার পরিণতি হবে চিরস্থায়ী আবাস জাহান্নাম। কোরান পাকে একথা আরও পরিস্কার করে বলা হয়েছে : ‘হারাম পন্থায় উপার্জিত খাদ্য দিয়ে যে দেহ বৃদ্ধি হয়, পরকালে ওই দেহ দোযখের আগুনের ইন্ধন হবে।’ সুতরাং হারাম পন্থা ঘুষের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ অথবা সম্পদে বৃদ্ধি শরীরের পরিনতি এতেই বোঝা যেতে পারে।
যারা ঘুষ লয় অথবা ঘুষ দেয়, এর পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে তারা জ্ঞাত নয়, এটি সত্য নয়। কিন্তু তা জেনেও অতি অবলীলায় তারা তা করে। এবং এই করার সপক্ষে তারা তাদের মনগড়া একটা পন্থাও তৈরি করে নেয়। এই পন্থাটির অন্যতম হচ্ছে, ঘুষের আধুনিক নামকরণ। এখন তারা এটাকে ঘুষ বলে না, বলেÑউপহার, উপঢৌকন, বখ্শিশ, চা পান ইত্যাদি। কিন্তু ঘুষের সাথে এগুলো কি সমার্থক? উপঢৌকন কেউ দেয় তার প্রিয়জনকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ। সেখানে কোনো পক্ষের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ থাকে না। থাকে শুধুমাত্র অন্তরের আবেগ।
উপহারও কিছুটা অনুরূপ। এটিও প্রিয়জনকে অনুরূপভাবে দেওয়া হয়। তবে তা বিশেষ অনুষ্ঠান অথবা উপলক্ষকে কেদ্র করে। বখ্শিশ দেওয়া হয় কারও স্বে”ছা প্রণোদিত আন্তরিক কাজে খুশি হয়ে। এখানে গ্রহীতার পক্ষ থেকে কোনো দাবি অথবা চুক্তি কিংবা শর্তের প্রশ্ন নেই। প্রদানকারী তা দিতে কোনো দিক দিয়েই বাধ্যও নয়। এটি সম্পূর্ণ তার একান্ত নিজস্ব ইচ্ছার ব্যাপার। আর চা পান। বর্তমানে এটিই ঘুষের সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক নামকরণ। এক কাপ চায়ের দাম যখন কয়েক হাজার টাকার অঙ্কে পৌঁছে যায়, তখন এর আসল সংঙ্গার্থকে কোনোক্রমেই ভিন্নপথে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে না।
তা সে যে অর্থ আর সংজ্ঞাতেই হোক, ঘুষের ব্যাপকতা এখন সর্বত্র জুড়ে। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে এর শাখা আজ প্রবহমান। যে জন্য সামগ্রিক অবক্ষয় আজ ব্যক্তি, সমাজ, দেশ এবং আন্তর্জাতিকতায়। পারলৌকিক তো বটেই, এমনকি পার্থিবভাবে এর প্রভাবে চরম অশান্তি বিরাজমান আজ সর্বত্র। তাই পারলৌকিক ছাড়াও পার্থিব ব্যক্তি ও বিশ্বমানবতার স্বার্থে ঘুষ নামের এ দুষ্টক্ষত থেকে মুক্ত হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চাঁদপুরে মিষ্টি তৈরিতে ভেজাল, দুই দোকানির জরিমানা

প্যালেস্টাইনে গণহত্যায় ভারতের প্রতিক্রিয়া নিযে যা বললেন পিনাকী

মতলবে নানার বাড়িতে বেড়াতে এসে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

মাফিয়া শেখ তাপসের অবস্থান জানালেন ডিবি হারুন!

নিকলীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার আসামি গ্রেফতার

নাটোরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিডিআর জওয়ানদের জামিনের আদেশ ফের পেছাল

ঘোড়াঘাটে এসএসসি ও সমানের পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৩৩ জন

পানামা খাল চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারে না : যুক্তরাষ্ট্র

সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম রিজার্ভ মেটাল ক্রেডিট কার্ড-বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি ঘোষণা বিএনপির

দেশের সব মাদরাসায় দুই দিনব্যাপী বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশ

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের পর বাংলাদেশি পণ্যবাহী ৪ ট্রাক ফেরত পাঠাল ভারত

রাজনগরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, শিলাবৃষ্টির আশংকায় দুশ্চিন্তায় কৃষক

রাবির ভর্তি ফরম বিক্রিতে রেকর্ড আয়: এক মৌসুমেই ৩১ কোটি টাকা!

নীলফামারীর বিএনপি নেতা তুহিনের নির্দেশে তিস্তার বালুর বাধ পরিদর্শনে ডিমলা উপজেলা বিএনপি

পাঁচবিবিতে এসএসসি পরীক্ষার ১ম দিনে ৫৫ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত

টাঙ্গাইলে ৮৫টি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা চলছে

দিনাজপুরে এলজিইডি ভবনে আগুন, আটকে পড়া দুজন উদ্ধার

মোমবাতি জ্বালিয়ে বীরগঞ্জে এসএসসি ও সমমানের প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন