শীতকালের অজু ও গোসলে বিশেষ সতর্কতা
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৬ এএম
পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু ও গোসল করতে হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই এই বিষয় গুলো সঠিক ভাবে জানি না যে কোন ভুলগুলো হলে অজু ও গোসল হবে না। অজুর ক্ষেত্রে অজুর অঙ্গগুলো এবং ফরজ গোসলের ক্ষেত্রে পুরো শরীর পরিপূর্ণভাবে পানি দ্বারা ভেজানো আবশ্যক। অন্যথায় পবিত্রতা অর্জিত হবে না। বিশেষ করে অজুর কোনো অঙ্গ সামান্যও শুকনা থেকে গেলে তার জন্য হাদিসে জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোনো এক সফরে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের পেছনে পড়ে গেলেন। পরে তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন। এদিকে আমরা (আসরের) নামাজ আদায় করতে বিলম্ব করে ফেলেছিলাম। তাই (তা আদায় করার জন্য) আমরা অজু করা শুরু করলাম। এ সময় আমরা আমাদের পা কোনো মতে পানি দ্বারা ভিজিয়ে নিচ্ছিলাম। তখন তিনি উচ্চঃস্বরে বলেন, ‘সর্বনাশ! গোড়ালির নি¤œাংশগুলোর জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’ তিনি দুই বা তিনবার এ কথা বললেন। (বুখারি : ৯৬)।
অনেক সময় তাড়াহুড়া করে অজু করার কারণে মানুষের পায়ের গোড়ালি শুকনা থেকে যায়। বিশেষ করে শীতকালে এ ধরনের কাজ বেশি হয়ে যায়। তাই আমাদের উচিত অজু করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ রাখা, যাতে কোনো অঙ্গ বা অংশ শুকনা না থেকে যায়। পবিত্রতা অর্জনে এমন উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ ফরজ গোসল ও অজুর সময় কোনো অঙ্গের সামান্য থেকে সামান্য পরিমাণ শুকনা থাকলে পবিত্রতা অর্জন হবে না।
এ বিষয়ে আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন (রহ.) বলেন, ‘মানুষ যদি পবিত্রতা অর্জনের অঙ্গে তৈলাক্ত বস্তু (তেল, ক্রিম) ব্যবহার করে, তাহলে দেখতে হবে যদি উক্ত তৈলাক্ত বস্তুটি জমাট বাঁধা ও আবরণবিশিষ্ট হয়, তাহলে পবিত্রতা অর্জনের পূর্বে অবশ্যই তা দূর করতে হবে। যদি তৈলাক্ত বস্তু সেভাবেই জমাট বাঁধা অবস্থায় থেকে যায়, তাহলে তা চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধা দেবে। এতে করে তখন পবিত্রতা শুদ্ধ হবে না। কিন্তু যদি তৈলাক্ত বস্তুটির কোনো আবরণ না থাকে কিন্তু পবিত্রতার অঙ্গগুলোর ওপর সেগুলোর চিহ্ন অবশিষ্ট থেকে যায়, তাহলে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু এ অবস্থায় ওই অঙ্গের ওপর হাত ফিরিয়ে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সাধারণত তৈলাক্ত বস্তু থেকে পানি আলাদা থাকে। সুতরাং হতে পারে, পবিত্রতার ক্ষেত্রে পুরো অঙ্গে পানি পৌঁছবে না।’ (ফাতাওয়াত তাহারাহ, পৃষ্ঠা : ১৭৪)। এ ঋতুতে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো, নামাজ-অজুর প্রতি যতœশীল হওয়া এবং দান-খয়রাতে সম্পৃক্ত হওয়া বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ।
শীতকাল ও ইবাদতের রয়েছে বিশেষ সুযোগ : শীতকালে দিন ছোট হওয়ার কারণে সহজেই বেশি বেশি রোজা রাখা যায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শীতকালের রোজা বিনা পরিশ্রমে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের অনুরূপ (সুনানে তিরমিজি)। অন্যদিকে, রাত বড় হওয়ায় দীর্ঘ সময় নামাজে কাটানো যায়। আল্লাহ বলেন, তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। (সুরা জারিয়াত : ১৭-১৮)।
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও একটা অনেক বড় সোওয়াবের কাজ : শীতকালে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্টে থাকে। কেউ রাস্তার পাশে আবার কেউ নদীর তীরে। তাদের জন্য গরম কাপড় ও খাদ্য প্রদান একটি বড় ইবাদত। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন (আবু দাউদ)। মিসকিন, ইয়াতিম ও বন্দীদের খাদ্য দান করার বিষয়েও কুরআনে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে (সুরা আদ দাহর : ৮)।
শীতকালে নফল ইবাদতের গুরুত্ব : শীতকাল নফল ইবাদতের জন্য বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। বিশেষত, কিয়ামুল লাইল এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় বেশি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ ভাগে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে বান্দার দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার ডাক গ্রহণ করেন (সহিহ বুখারি)। এই সময় দোয়া, ইস্তেগফার এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনার গুরুত্ব অপরিসীম।
শীতকাল প্রকৃত অর্থেই মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। এ ঋতুর প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রোজা রাখা, কিয়ামুল লাইল করা, শীতার্তদের সহায়তা করা এবং অজু-গোসলের ব্যাপারে সতর্ক থাকা আমাদের দায়িত্ব। এ সময়ের ইবাদতগুলো সহজ হলেও ফজিলতে ভরপুর। আল্লাহর কাছে দোয়া, ইবাদত এবং সৎ আমল বাড়িয়ে নিকটবর্তী হওয়া শীতকালীন সময়ের এক মহৎ সুযোগ। রসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের আমল অনুসরণ করে আমাদেরও উচিত এই ঋতুকে ইবাদতের মাধ্যমে সফল করে তোলা।
শীতের গুরুত্বপূর্ণ কিছু আমল : প্রকৃতির বিচিত্র এক উপহার হলো শীতকাল। মুমিনদের জন্য শীতকাল হলো ইবাদতের বিশেষ সুযোগ। রসুলুল্লাহ (সা.) শীতকে মুমিনের বসন্তকাল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ এ ঋতুতে রাত দীর্ঘ হয়, যা কিয়ামুল লাইলের জন্য উপযোগী এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা তুলনামূলক সহজ হয়। আল্লাহ তাআলার গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো প্রতিদিন পাঁচবার তার জন্য নামাজ আদায় করা। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় অজু। শীতকালে এই অজুতে একটি ভুলের কারণে নামাজ সুন্দর করে পড়লেও আদায় না হতে পারে।
শীতকালে সাধারণত শরীরের ত্বক শুষ্ক থাকে। যে কারণে চামড়া ভিজতে একটু সময় লাগে। তাই অজু করার সময় ভালোভাবে ডলে ডলে অজুর অঙ্গের চামড়া বা চামড়া ভালোভাবে ভিজাতে হবে। এক চুল পরিমাণ শুকনো থাকলে অজু হবে না। ওই অজু দিয়ে নামাজ পড়ে ফেললে তা পুনরায় আদায় করতে হবে। পবিত্র কোরআনে নাজিল হয়েছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে সহজ জিনিসেরই দাবি করেন। তিনি কঠিন ও দুঃসহ জিনিসের প্রত্যাশী নন।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)। ঋতু পরিবর্তন আল্লাহ তাআলার দেয়া বিধানের অংশ। তিনি পৃথিবীর স্থান ও সময়ভেদে তাপমাত্রায় বৈচিত্র্য এনেছেন। আল্লাহ তাআলা তার দেয়া বিধানাবলিও মৌসুম ও ঋতু উপযোগী করে দিয়েছেন। তার কোনো হুকুমই বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য নয়।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে নাইজেরিয়ায় নিহত ১৮
আবু তাহের মিয়ার মৃত্যুতে শোক ও দোয়া মাহফিল
চীন জুলাই-আগস্টে আহতদের চিকিৎসা সরঞ্জাম দেবে
সনাতন ধর্মই ভারতের জাতীয় ধর্ম : যোগী আদিত্যনাথ
হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার চেকপয়েন্টে অপেক্ষমাণ: জাতিসংঘ
মধ্যরাতে তোপের মুখে হাসনাত আবদুল্লাহ
মধ্যরাত থেকে সারা দেশে বন্ধ হতে পারে ট্রেন চলাচল
দূষণের শীর্ষে ঢাকার বাতাস আজ ‘দুর্যোগপূর্ণ’, দ্বিতীয় স্থানে লাহোর
সংঘর্ষের পর এবার ঢাকা অবরোধের ঘোষণা ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের
গাজার উত্তরে ফেরার অনুমতি দিল ইসরায়েল, লেবাননে যুদ্ধবিরতি বাড়ল ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
শিক্ষার্থীদের দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় যা বললেন ঢাবি উপাচার্য
ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণকে গুলি করা সেই এসআই গ্রেফতার
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৭ হাজার ৩০০
মঞ্চে আসছে সুফিবাদী নাটক 'পাখিদের বিধানসভা; কেমন চলছে পাখিদের শেষ সময়ের প্রস্তুতি?
ভ্যালেন্সিয়াকে গোলবন্যায় ভাসালো বার্সা
বিবর্ণতা কাটিয়ে ইউনাইটেডের স্বস্তির জয়
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গ্রেফতার
রোনালদোর গোলে আল নাসেরের সহজ জয়
মৌলভীবাজার সীমান্তে বাংলাদেশীকে কুপিয়ে হত্যা করল ভারতীয়রা
আজ চরমোনাই পীরের সঙ্গে বৈঠক করবেন মির্জা ফখরুল