ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

সাদ্দাম হোসেনের আমলই ভালো ছিল, বলেছেন বেশিরভাগ ইরাকি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম

নতুন একটি জরিপ বলছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকি মনে করেন যে ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকে সে দেশের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে তেলসমৃদ্ধ এ দেশটিতে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের ২০ বছর পূর্তির সময় এই জরিপে বিভিন্ন বিষয়ে ইরাকি জনগণের মনোভাব সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনাল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরাকের ১৮টি প্রদেশে জাতীয় প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অনুযায়ী ২,০২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ইরাকির সাথে মুখোমুখি দেখা করে এই জরিপ চালিয়েছে। মার্কিন হামলার আগের তুলনায় ইরাকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বলেছেন যে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ বলেন যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া আরব জনগোষ্ঠী ২০০৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অন্যদিকে সুন্নি আরব, কুর্দি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। আর এই সাম্প্রদায়িক বিভাজনটি এই জরিপেও ফুটে উঠেছে, যেখানে সুন্নি মুসলমান উত্তরদাতাদের প্রায় ৫৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন যে সাদ্দাম হোসেনের অধীনে তাদের জীবন সুন্দর ছিল।

জরিপের এ নিরাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। উত্তরদাতাদের প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন ইরাকের অবস্থাকে ‘খারাপ’ বলে বর্ণনা করেছেন। গ্যালুপ ইন্টারন্যাশনাল যখন তার আর্কাইভে গিয়ে ২০০৩ সালে একই প্রশ্নের উত্তরের সাথে এই জবাব মিলিয়ে দেখে, তখন দেখা যায় যে প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন ইরাকি তখন এই কথাই বলেছিলেন। আনবার প্রদেশের বাসিন্দা ৪৫-বছর বয়সী এক ব্যক্তি জরিপ দলকে বলেছেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি বা অবনতি হয়েছে কিনা তা বলা কঠিন। যে কোন পরিবর্তন মনে আশা জাগায় আর তখন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। অর্থনীতির উন্নতি হয়তো কিছুটা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন এবং নিরাপত্তা কমে গেছে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করেছিল এই বিশ্বাস থেকে যে দেশটির হাতে ‘গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র’ বা ডাব্লুএমডি রয়েছে এবং সাদ্দাম হোসেনের সরকার বিশ্ব নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। কিন্তু তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এর পরবর্তী যুদ্ধের ফলে কয়েক হাজার ইরাকি প্রাণ হারান এবং সে দেশে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এই হামলার জন্য মার্কিন সরকার যে অজুহাতই দিক না কেন, বহু ইরাকি যুদ্ধের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও সন্দিহান। প্রায় ৫১ শতাংশ ইরাকি বিশ্বাস করেন, ইরাকের সম্পদ লুঠ করার জন্যই যে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে ঐ হামলা চালিয়েছিল। এই মনোভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশগুলোতে এবং আনবার প্রদেশে যেখানে প্রচুর তেল ও গ্যাস সম্পদ রয়েছে।

অন্যদিকে জরিপকৃতদের মধ্যে ২৯ শতাংশ মনে করেন যে ঐ আক্রমণের লক্ষ্য ছিল সাদ্দাম হোসেনের সরকারকে উৎখাত করা। যুদ্ধের অন্যান্য কারণ, যেমন মার্কিন প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের স্বার্থ রক্ষা করা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো এবং ইরাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এগুলো সম্পর্কে উত্তরদাতাদের আগ্রহ ছিল কম। মার্কিন নেতৃত্বাধীন অভিযানের অবসান ঘটার পর বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরি হয়। প্রতিবেশী ইরানও ইরাকে হস্তক্ষেপের একটি সুযোগ খুঁজে পায়। বিশেষ করে যেহেতু ইরাকের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ শিয়া মুসলমান। সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলে দীর্ঘদিন ধরে এদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছিল।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, তাদের দেশে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার প্রশ্নটি নিয়ে ইরাকিরা এখনও বিভক্ত। ২০০৭ সালে যুদ্ধ যখন তুঙ্গে তখন ইরাকে মোতায়েন মার্কিন সৈন্যদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১,৭০,০০০। আর এখন মোতায়েন রয়েছে প্রায় ২,৫০০ মার্কিন সৈন্য। ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী উত্তরদাতারা অবিলম্বে মার্কিন প্রত্যাহারের পক্ষপাতী। কিন্তু কুর্দি অঞ্চলসহ ইরাকের উত্তর অংশের বাসিন্দারা মনে করেন সে দেশে কোন এক ধরনের মার্কিন উপস্থিতির এখনও প্রয়োজন রয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ভাবমূর্তি আরও বেশি উজ্জ্বল হয়েছে, যদিও ঐতিহ্যগতভাবে এই অঞ্চলটি মার্কিন নিরাপত্তা বলয়ের অংশ। বেইজিং সরকার সম্প্রতি ইরান ও সউদী আরবের মধ্যে ‘দাঁতাত’ বা বৈরিতার অবসান ঘটিয়েছে এবং ঐ দুই দেশ আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। কিন্তু ইরাকে তরুণদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তিশরিন কিংবা অক্টোবরের সামাজিক আন্দোলন যেটি ২০১৯ সালে বাগদাদের রাস্তা থেকে শুরু হয়েছিল এবং যে আন্দোলনগুলোকে নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল, তা থেকেই ব্যাপারটা ফুটে উঠেছে।


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইরানের প্রযুক্তিগত প্রকৌশল পরিষেবা রপ্তানিতে আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলার
আসাদের পতনের পর তুরস্ক থেকে ২৫ হাজার সিরিয়ান দেশে ফিরেছে
ইরানের আলোচিত গবষকদের মধ্যে নারীদের অবদান বাড়ছে
তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ সৌদি আরবে এবার মিললো 'হোয়াইট গোল্ড'
পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
আরও

আরও পড়ুন

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং :ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

৫ সাংবাদিককে হত্যা করল ইসরাইল বিমান

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

তুষারপাতে অচল হিমাচল দুই শতাধিক রাস্তা বন্ধ

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

ক্রিপ্টো রিজার্ভ গড়বেন ট্রাম্প?

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

মোজাম্বিকে কারাদাঙ্গায় নিহত ৩৩, পলাতক ১৫০০ কয়েদি

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরাইলের

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

পাকিস্তানে সড়ক অবরোধে শতাধিক শিশুর প্রাণহানি

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

আফগানিস্তানে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে পাকিস্তান

শুধু নারীদের জন্য

শুধু নারীদের জন্য

নিথর দেহ

নিথর দেহ

আত্মহননে

আত্মহননে

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম

শুধু নামেই জিমনেসিয়াম