যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝে ভুখণ্ডজুড়ে ইসরাইলি হামলা

গাজায় অনাহারে ২০ জনের মৃত্যু

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম

গণহত্যা বন্ধে আইসিজের কাছে ফের আবেদন দক্ষিণ আফ্রিকার
গাজার যুদ্ধ মানবসভ্যতার জন্য লজ্জার : চীন
কয়েক সপ্তাহের জন্য সংঘাত থামিয়ে রাখার একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে মিশরের আলোচকদের চেষ্টার মাঝেই, ইসরাইলের সামরিক বাহিনী, বুধবার গাজা ভুখন্ড জুড়ে বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়েছে। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।

হামাসের প্রতিনিধি দলটি চলমান আলোচনার মধ্যেই কায়রো ত্যাগ করেছে। তারা বলেছে যে, ইসরাইল একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মধ্যস্থতাকারীদের সমস্ত প্রচেষ্টা ‘বিফল’ করেছে। সরকারি কর্মকর্তা, মানবিক কর্মী এবং এনজিও কর্মীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছিটমহলটি দুর্ভিক্ষের গভীরে পতিত হওয়ার পরেও ইসরাইল গাজার জন্য ‘ভিত্তিহীনভাবে’ সকল সহায়তা কার্যক্রম অবরুদ্ধ করেছে। এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভুখন্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় অনাহারে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে করে অবরুদ্ধ এই ভ‚খÐটিতে অনাহারে মৃতের সংখ্যা পৌঁছাল ২০ জনে। এছাড়া হিসাবের বাইরেও ফিলিস্তিনি এই ভুখন্ডর আরও অনেকেই নীরবে মারা যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গতকাল পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

ইসরাইলি অবরোধের মধ্যে গাজা উপত্যকায় ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছেছে বলে বুধবার ভ‚খÐটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে আল-শিফা হাসপাতালে ১৫ বছর বয়সী এক শিশু এবং উত্তর গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সী একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এতে করে অপুষ্টি এবং ডিহাইড্রেশনের কাছে হার মেনে গাজায় প্রাণ হারানো মানুষের আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছেছে। আল-কুদরা জোর দিয়ে বলেন, ঘোষিত এই মৃত্যুর সংখ্যা শুধুমাত্র হাসপাতালে যারা পৌঁছেছেন বা হাসপাতালে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুকেই সামনে আনছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আরও বহু লোক হাসপাতালে না পৌঁছানোর ফলে অনাহারে নীরবেই মারা যাচ্ছেন।’ আশরাফ আল-কুদরা বিবৃতিতে আরও বলেছেন, ‘উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।’

এদিকে নুসেইরাত এবং দেইর আল-বালাহতে ইসরাইলি হামলায় ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এছাড়া নুসেইরাত শরণার্থী শিবির এবং দেইর আল-বালাহতে ইসরাইলি হামলার ফলে আরও অনেক ফিলিস্তিনি আহত এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ফিলিস্তিনের গাজা ভ‚খÐের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষ।

ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে আইসিজের কাছে ফের আবেদন দক্ষিণ আফ্রিকার : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পূর্ণ মাত্রায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) কাছে ফের আবেদন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষ থেকে এ আবেদন করা হয়। সেখানে ইতিমধ্যে ইসরাইলের প্রতি যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ইসরাইলি কঠোরতার কারণে গাজায় ভয়াবহ মাত্রায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ৮৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আগামী ছয় মাসেক্ষুধায় মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের আবেদনে জানায়, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা চালানোর কারণে ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ, শিশু ও নবজাতকরা চরম অবস্থার মুখে রয়েছে। এমন অবস্থায় আদালতের কাছ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ আমরা আশা করছি। উল্লেখ্য, দক্ষিণ আফ্রিকার আনা ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ২৬ জানুয়ারি আইসিজে অন্তর্র্বতী আদেশে ইসরাইলকে গণহত্যা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়া গাজায় আরও বেশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পাঠানো নিশ্চিত করতেও বলেছিল জাতিসংঘের এই আদালত।
দক্ষিণ আফ্রিকা এক বিবৃতিতে জানায়, দুঃখজনকভাবে ইসরাইল আদালতের ওই আদেশ পালন করেনি। বরং ইসরাইল ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর গণহত্যামূলক অপরাধের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হেগের আদালতে দক্ষিণ আফ্রিকার এ আবেদনটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রায় আসন্ন। কেবল গত সপ্তাহেই খাবারের অভাবে অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে।

গাজার যুদ্ধ মানবসভ্যতার জন্য লজ্জার : চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধকে ‘মানবসভ্যতার জন্য লজ্জাজনক’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং ‘শিগগির যুদ্ধবিরতির’ দাবি জানান। এক সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি মানবজাতির জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং সভ্যতার জন্য একটি লজ্জাজনক বিষয় যে ২১ শতকে এসেও এ ধরনের একটি মানবিক বিপর্যয়কে থামানো যাচ্ছে না।’

গত বছরের অক্টোবরে থেকে চলমান হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের শুরু থেকেই চীন যুদ্ধবিরতির আহŸান জানিয়ে এসেছে। ঐতিহাসিকভাবে চীন ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সহানুভ‚তিশীল। দেশটি এ অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল নামে দুইটি পৃথক, সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের (টু স্টেট থিওরি) মতবাদের প্রতি সমর্থন জানায়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি ‘আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন’ আয়োজনের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের আহŸান জানিয়েছেন। ওয়াং বলেন, ‘এ সংঘাত অব্যাহত রাখার পেছনে কোনো যুক্তি নেই এবং এই মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের পক্ষেও কোনো গ্রহণযোগ্য অজুহাত নেই।’ ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শিগগির উদ্যোগ নিতে হবে। তাৎক্ষনিক যুদ্ধবিরতি ও সহিংসতা বন্ধের উদ্যোগকে অন্য সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে এবং (গাজায়) মানবিক ত্রাণ পৌঁছানো নিশ্চিত করাকে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

বেইজিং এর শীর্ষ ক‚টনীতিক আরও জানান, চীন চায় ফিলিস্তিন জাতিসংঘের ‘স্থায়ী’ সদস্যপদ পাক। ওয়াং বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক সদস্যপদ গ্রহণের প্রতি সমর্থন জানাই।’ তিনি বলেন, ‘গাজার বিপর্যয় আবারও বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে ফিলিস্তিনি ভ‚খÐ দীর্ঘ সময় ধরে দখল করে রাখা হয়েছে এবং এ বিষয়টিকে আর অবজ্ঞা করা সম্ভব নয়। ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র দেশ গঠনের ইচ্ছাকে আর এড়িয়ে যাওয়া যায় না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফিলিস্তিনি জনগণ ঐতিহাসিকভাবে যে অন্যায়ের শিকার হয়েছে, তা সংশোধন করতে হবে।’ সূত্র : আল-জাজিরা, নিউইয়র্ক টাইমস, এএফপি।

 


বিভাগ : ইসলামী বিশ্ব


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হুথি-ইসরাইল সংঘাত বৃদ্ধির নিন্দা জাতিসংঘ মহাসচিবের
ব্যাংকখাত ঘুরে দাঁড়ালেও হতাশ করেছে ফার্মা ও কেমিকেল
ইরানের প্রযুক্তিগত প্রকৌশল পরিষেবা রপ্তানিতে আয় ৩৫ বিলিয়ন ডলার
আসাদের পতনের পর তুরস্ক থেকে ২৫ হাজার সিরিয়ান দেশে ফিরেছে
ইরানের আলোচিত গবষকদের মধ্যে নারীদের অবদান বাড়ছে
আরও

আরও পড়ুন

বিমানবন্দর থানায় যোগ দিলেন নারী ওসি

বিমানবন্দর থানায় যোগ দিলেন নারী ওসি

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম

চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে : নাহিদ ইসলাম

সোমালিয়ায় নতুন মিশন অনুমোদন ইউএন-এর

সোমালিয়ায় নতুন মিশন অনুমোদন ইউএন-এর

জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

জাসদ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম মিন্টু অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার

নতুন বছরের বন্দি বিনিময়ের আশায় ইউক্রেন

নতুন বছরের বন্দি বিনিময়ের আশায় ইউক্রেন

রামগতি-কমলনগরে চলছে ৫৮ টি অবৈধ ইটভাটা সংবাদ প্রকাশের পরও টনক নড়েনি প্রশাসনের

রামগতি-কমলনগরে চলছে ৫৮ টি অবৈধ ইটভাটা সংবাদ প্রকাশের পরও টনক নড়েনি প্রশাসনের

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে যা জানালো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে যা জানালো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সদরপুরে হেরোইনসহ দুই যুবক আটক

সদরপুরে হেরোইনসহ দুই যুবক আটক

নিউইয়র্কে কারাগারে বন্দি হত্যার ভিডিও প্রকাশ, তদন্ত শুরু

নিউইয়র্কে কারাগারে বন্দি হত্যার ভিডিও প্রকাশ, তদন্ত শুরু

জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ও ইনসাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়-হারুনুর রশিদ

জামায়াতে ইসলামী ন্যায় ও ইনসাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায়-হারুনুর রশিদ

সড়ক দুর্ঘটনায় পবিপ্রবির উপপরিচালকের মৃত্যু

সড়ক দুর্ঘটনায় পবিপ্রবির উপপরিচালকের মৃত্যু

'মলম' ময়ূখ বিধ্বস্ত তারেকের যুক্তির কাছে: অতঃপর পলায়ন!

'মলম' ময়ূখ বিধ্বস্ত তারেকের যুক্তির কাছে: অতঃপর পলায়ন!

হাসিনাকে ফেরাতে ঢাকার অনুরোধকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত?

হাসিনাকে ফেরাতে ঢাকার অনুরোধকে কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না ভারত?

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল