সিলভিয়া প্লাথ-এর একগুচ্ছ কবিতা
২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
সকালের গান
ভালোবাসা তুমি অর্পণ করো পুরু স্বর্ণের ঘড়ির মত।
ধাত্রী চড় মারবে তোমার পায়ের তলায়,
এবং তোমার কান্না
স্থান করে নিবে আমার তন্ত্রে।
আমাদের কণ্ঠ গায়, অভিনন্দিত করে তোমার আগমন।
নতুন মূর্তি, কারুকার্যখচিত জাদুঘরে, তোমার নগ্নতা
আমাদের নিরাপত্তা জোগায়, আমরা প্রাচীরের মতো
দাঁড়িয়ে থাকি চারপাশে।
আমি আর তোমার মা নই
যেমন মেঘ আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি
প্রতিফলিত করে
ধীরে বাতাসের হাতে আত্মবিলুপ্তিতে।
তোমার আত্মজ সারারাত
ধূসর গোলাপের ভিতরে ছোটাছুটি করে।
আমি জেগে উঠি শুনতে
কানের কাছে দূর সমুদ্র খেলা করে।
কে যেনো কাঁদে, সচকিত হই বিছানা থেকে,
গরুর মত ভারী এবং ফুলেল
আমার ভিক্টোরিয়ান রাত্রি বসনের মাঝে
তোমার মুখটা বিড়াল স্বচ্ছ, খোলা জানালায়।
নিষ্প্রভ তারাগুলো সচকিত এবং নির্মিলিত,
এবং তুমি হাতড়াচ্ছো তোমার স্মৃতি
তোমার নির্মল কণ্ঠস্বর ভাসে বেলুনের মত।
রূপান্তর
মানব পা-যুক্ত বনদেবতার মত,
সে তরুবীথির ছায়াতলে সময় কাটায়
বনের সকল প্যাঁচা গাছের ক্ষুদ্র শাখায়,
পিছন ফিরে পাখা ঝাপটায় শাবকের দল
যা কিছু ছিলো এই মানুষের তৈরি।
কোনো শব্দ নেই, একটি সাঁতারকাটা মাতাল পাখি
বাস করে নদীর তীরে, নিশ্চুপ-একাকী
তারাগুলো ঝুলছে স্বচ্ছ পানির উপর,
দ্যোদুল্যমান তারকারাজী ভাসছে চোখের তারায়
যেখানে প্যাঁচাগুলো বসেছিলো।
একজন রোমান রাজন্যের হলুদ চোখ
খুঁজে ফেরে পরিবর্তন এ চিত্রকলার,
দেখে ক্ষুরÑ পা থেকে, দেখে সে ছাগলের শিং।
চিহ্নিত করে কিভাবে রূপান্তরিত হলো
এবং দ্রুত উদ্ধার করে সেখান থেকে ।
জমিদারের বাগান
ফোয়ারা শুকিয়ে গেছে এবং গোলাপ ফুলগুলোও তেমনি,
মৃত্যুর সুগন্ধ ¤্রয়িমাণ, তোমার দিন ফুরিয়ে আসছে।
নাসপাতিগুলো মোটা হয়েছে ক্ষুদ্র কুঁড়ি থেকে,
নীল কুয়াশা লেপন করে আছে সমগ্র হৃদ জুড়ে।
তোমরা মৎস্য যুগের মধ্যদিয়ে চলছো,
আত্মতৃপ্ত শৃগাল শাবকের শতকগুলো
মাথা, পায়ের পাতা এবং
আঙুলগুলোর ছায়া দেখে।
ইতিহাস লালন করে ভাঙা ভাঙা প্রতিচ্ছবি,
এই সম্মান একান্তভাবে তুমি পাচ্ছো,
আর তোমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাচ্ছো
সাদা পালক মৌমাছির পাখার মতো।
দু’টো আত্মহত্যা, পারিবারিক নেকড়ে বাঘের মতো
শূন্যতার ঘণ্টা ঘনিয়ে এসেছে। কিছু রুক্ষ তারকারাজী
ইতোমধ্যে আকাশকে হলুদ বর্ণ ধারণ করিয়েছে,
মাকড়সা নিজস্ব বাসা বাঁধার মতো সূতা তৈরিতে মগ্ন।
হৃদ পাড় হলো। পোকামাকড়গুলো
সচরাচর বাসাগুলো ত্যাগ করছে।
ছোট্ট পাখিগুলো আলাপচারিতায় মগ্ন
তাদের প্রকৃতিগত রুক্ষতার উপহার নিয়ে।
আমি আর তোমার মা নই
যেমন মেঘ আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি
প্রতিফলিত করে,
ধীরে বাতাসের হাতে আত্মবিলুপ্তিতে।
তোমার আত্মজ সারারাত
ধূসর গোলাপের ভিতরে ছোটাছুটি করে।
আমি জেগে উঠি শুনতে
কানের কাছে দূর সমুদ্র খেলা করে।
কে যেনো কাঁদে, সচকিত হই বিছানা থেকে,
গরুর মত ভারী এবং ফুলেল
আমার ভিক্টোরিয়ান রাত্রি বসনের মাঝে
তোমার মুখটা বিড়াল স্বচ্ছ, খোলা জানালায়।
নিষ্প্রভ তারাগুলো সচকিত এবং নির্মিলিত,
এবং তুমি হাতড়াচ্ছো তোমার স্মৃতি
তোমার নির্মল কণ্ঠস্বর ভাসে বেলুনের মত।
নির্ভীক সৈনিক
শাহনূর শহীদ
যুগ যুগ ধরে নিজ ভূমে রুদ্ধ জনপদ
হানাদার বুলেট যখন ঝাঁঝরা করে বুকের পাঁজর --
রক্তশোভিত মরুকণা গুলো ভাসে আর্তনাদে
কাঁধে নিথর দেহ --
চোখ দুটো ভিসুভিয়াস জ্বালা মুখ
দুখের ভয়াল তরঙ্গে ক্ষত-বিক্ষত
হৃদয় তাঁদের ভঙ্গিল পর্বত
আজন্ম মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা--
হাতে লাশ সনাক্তকরণ চিহ্ন বরাভয়
ওরা রক্ত দিতে শিখেছে
বুকের তাজা সতেজ রক্ত
চারিদিকে মর্ত্যের অমানিশা
বন্ধুর বাধা দমাতে পারে না
লক্ষ্য স্থির দৃঢ়-অটল হিমাচল
ভয় আতঙ্ক জয় করে আজ
সবাই বীর সালাউদ্দিন
বায়ান্নের পিছ ঢালা পথ
একাত্তরে বাংলার সবুজ শ্যামল মাঠ
রঞ্জিত খুনে--
তাঁদের স্তুতি প্রতি পদে
উচ্চ শির ইতিহাসে,
দেয়ালে পিঠ ঠেকে রক্তস্নাত বিপ্লব
মুক্ত ভিয়েতনাম, আফগান,
জল্লাদের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মুখে;
এক টুকরো পাথর হাতে গাজার আগুন শিশু
অমিত নির্ভীক সৈনিক।
ক্যাঙ্গারু সময়
মান্নান নূর
সময় হাঁটে না, দৌড়েও যায় না, লাফায়।
লাফাইয়্যা লাফাইয়্যা চলে,
গাড়ি গতিতে সময় গেলে সময়ের দুর্নাম হয়
সবুর মিয়া কয় সময়ডা বালা নারে বেঢা
ক্যাঙ্গারু সময় বারো আঠারোতে, পঁচিশ তিরিশে, চল্লিশ পঞ্চাশে ঠেকে।
সময়ের ট্যারা চোখ অকাল বার্ধক্য আনে
তারপরও আমরা কেহই দেখি না
সময় সময়ের মতো চইল্যা যায়
ক্যাঙ্গারু সময় -
খোলা সূর্য আর কালাধোঁয়া
রেশম লতা
ওদের একটা ঘর ছিল কুমোরপাড়ায়
এহন ওইখানে ঢেঁকির ঢেঁকুর শুধু!
হা করা গাছের ভিত্রে পরগাছা। আহ্ কি বিশুদ্ধ মরণ!
জীবন সিঁড়ি ধইরা আসমানে ঘর লইছে; খালি মেঘ আর মেঘ! জলভরা রাইত ছিল্লায় কয়, কাদার দিনে ঘাও না হইলেও আইজ এসি রুমের মগজে কিরার ঘা।
উফ্ রাষ্ট্র কি-ই-না অন্ধত্বের তকমা নিল!
আমি তো ইতিহাস পড়েও রাজনীতি শিখতে পারি নাই।
ড্রেসিং করা সমাজে মাছির পাখনা হয় ঈগল
সাপ হয় চৌচালা শকুন
তোমগো আক্কেলহীন পৃথিবীর কান্ড য্যান হোমোস্যাপিয়েন্স ব্যাপারস্যাপার; দাভাই তুই বুজ্জা ল!
শুনলাম, যুক্তিহীন সময় কলের লাহান কল বয়ে সুরত নিছে।
না, ওগো নিচে কোনো সবজির দাম নাই!
এসিল্যান্ড হক কথার ভাত কুত্তারে খাইতে দিয়া নিজে চাইনিজ খায়, ওরা গিলে খোলা সূর্য আর কালাধোঁয়া!
খেয়া ঘাটে ওঠে গান
উৎপলেন্দু পাল
তোর্ষার ঘাটে রোজ খেয়া বায় মথুরানাথ দাস
তবুও তার ঘরপোড়া মনডা পইড়া থাকে সেই
টোক নয়ানবাজারের পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে
সাত পুরুষের ইজারার ঘাট ছাইড়া আইছে কবে
তবুও মনে আছে কাসেম চাচা , সালেমার কথা
মঠখোলার বংশীদাস বাবাজির পবিত্র আশ্রম
আর বাড়ির আঙিনায় আম কাঁঠালের বাগিচা ।
এই বুড়ো বয়সেও ভুটভুটির হাল ধইরা বসে সে
যেমনটা গোলুইয়ে বসতো তার বাপ বৃন্দাবন দাস
বাঁশের লগি ঠেলতো তরুণ মথুরা তার নৌকায়
কাসেম চাচা প্রাণপনে দাঁড় টানতো হেঁইয়া হো ...
ঢেউ তুইলা বাইয়া যেতো পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের জলে
শীতলক্ষ্যার স্রোতে কিংবা বানারের তিরে তিরে
কাওরাইদ , বর্মি বাজার , মঠখোলার ঘাটে ঘাটে ।
তারপর সত্তুরের দশকের সেই আগুন ঝরা কালে
বাপ মা ভাই বোনের হাত ধইরা দেশান্তরী হওয়া
কুমিল্লা - আগরতলা - আসাম হইয়া কোচবিহার
এতকাল ধইরা এই দেশেই ঘর সংসার তবুও যেন
কাঁটাতারের ওপাড়েই রইয়া গেছে তার নিজ দ্যাশ
কাসেম চাচা , নলিন মাঝি , ফারুখ সরকারেরা
এখনো দাঁড় টানে যেন তার বাপের সেই নৌকায় ।
ছেলেরা কতশত বার কয় অবসর নেওয়ার কথা
তবুও মনটা হু হু কইরা ওঠে মথুরানাথ দাসের
ঘুম ভাঙলেই তাই নৌকার গোলুইয়ে গিয়া বসে
তার ঝাপসা চোখের সামনে ভাইসা ওঠে ছবি
বাজারের দূর্গাপূজায় নবীন চক্রবর্তির চন্ডীপাঠ
বড়ো মসজিদে রফিক মুন্সির আজানের সুর
আর মা শৈলবালার কন্ঠের সন্ধ্যাবাতির উলুধ্বনী ।
এখনো কি আছে সেই ঘাট , সেই খেয়া পারাপার ?
এখনো কি আছে তীর্থ ডাক্তারের ডিসপেনসারি ?
বেত হাতে এখনো কি দাঁড়ায় মকসেদুল মাষ্টার ?
কাসেম চাচার পোলাপানেরা কি এখনো নাও বায় ?
ব্রহ্মপুত্র কি ঠিক এখনো আগের মতোই বইয়া যায় ?
কত স্মৃতি ভাইসা ওঠে মনে , কত প্রশ্ন জাগে রোজ
কে ই বা তার খবর রাখে , কে ই বা তার উত্তর দ্যায় ?
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান