কেউ একজন
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
মোবাইলের টর্চটা জ্বালিয়ে তরকারি গরম করছি কিচেনে। কিচেনের বাল্ব বেডরুমে সেট। ডাইনিং এর আলো ভালো মতোই আসে তাই আর অসুবিধে হচ্ছে না। কিন্তু গত পরশু ডাইনিং এর বাল্বটাও ফিউজ হয়ে গেছে। আমার স্বামী তিতুম। নতুন ব্যবসা শুরু করেছে। তাই খুব বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে ওর। কোনমতে বাজারটা করার অবকাশ পাচ্ছে মাত্র। আমার শরীরটাও তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না যে আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসবো। যদিও আজ সকাল থেকে শরীরটা বেশ ফুরফুরা কিন্তু মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে। তিতুম এই অবস্থার মাঝেও বোনের বাড়ি গেছে। সেখানে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন, উনারা ছেলেকে দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন তাই তার যাওয়া। কি অবাকীয় ব্যাপার ওর যাওয়ার ঘন্টা দুয়েক পরেই ওয়াশরুমের বাল্বটাও ফিউজ হয়ে যায়। রাগে দুঃখে আর নিচে নামেনি বাল্ব আনার জন্য। তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট শুধু বেড রুমেই আলো বাকি সবখানে অন্ধকার। সন্ধ্যে নামার আগেই যেন আমার ঘরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ভেবেছি যাব বাল্ব আনতে কিন্তু তিতুম যাওয়ার পর নিজে থেকে মাত্র একবার ফোন দিয়েছে তাও সেই দুপুরে। আর আমি দিয়েছি দু চারবার। শেষ তিনটের দিকে কথা হয়েছিল। এরপর আর কল দেয়নি। মূলত তার উপর অভিমান করেই আমার এই না যাওয়া। কিন্তু পায়ের আওয়াজ! না না এ-কি করে সম্ভব! মেইন দরজা তো বন্ধই। যদিও সকাল দশটার দিকে ম্যানেজার এসে এক ভদ্র মহিলাকে রুম দেখিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি ত তখন দরজা ভালো করেই এঁটে দিয়েছিলাম। আবারো আওয়াজ, তবে পায়ের না, কোন কিছু পড়ে যাওয়ার। এবার কিচেন থেকে ডাইনিং পেরিয়ে বেডরুমে আসলাম। সবই ঠিকঠাক। হয়ত মনের ভুল। একা বাসায় কি না! পোড়া গন্ধ নাকে। দৌড়ে গেলাম কিচেনে তরকারি পুড়ে গেছে। যাইহোক, চুলা নিভিয়ে যখন বেসিনে কড়াই পরিষ্কার করতে নিচ্ছি তখন আবারো পায়ের আওয়াজ। নিজে কে কে বলে ভীরুতার প্রমাণ দিতে চাইনি। এমনকি পিছন ফিরে তাকায়ওনি। কিছু বাসন-কোসন পরিষ্কার করে শেষবারের মতন সবকিছু গোছাতে থাকলে কি যেন একটা পাশ কাটিয়ে গেল বলে অনুভূত হয়। দেয়ালে হঠাৎ ছায়া চোখে পড়ে। এবার আর গুরুত্ব না দেওয়ার কোন উপায় দেখছি না। মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবারও সবকিছু খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখতে লাগলাম। ওয়াশরুমে দরজাটা খুলেও দেখলাম। না কোন কিছুই নেই। আমার ভেতর কিন্তু এতটুকু ভয় হচ্ছে না। কেননা আমি ভালো করেই জানি একা বাড়িতে মানুষের কল্পনা শক্তি প্রচন্ড তেড়ে কাজ করে। এ জল্পনার হাওয়া সজোরে হৃদযন্ত্রে পেরিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত করে আর তখনই মানুষের মনে অদ্ভুত ভাবনার সঞ্চার হয়। ঘন্টা খানেক আগেই এশার নামাজ পড়ে খেয়ে নিয়েছি। এখন শরীরটা ক্লান্ত লাগছে খুব, কিছুটা ঘুমও পাচ্ছে। আমি সচরাচর ঘুমাবার আগে বই পড়ি কিন্তু আজ পড়তে ইচ্ছে করছে না। তাই জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনতলা বাড়িটার দুতলায় থাকি। জানলা ছুঁয় ছুঁয় প্রায় একটা নারকেল গাছের ডাল পূর্ব দক্ষিণ কোণায় পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাদ্র মাসের চাঁদের আলোয় দু-একটা ডাল হালকা বাতাসে দোল খেয়ে কি জানি পূর্বাভাসের ইঙ্গিত দিতে চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। শো শো আওয়াজ আর হীম বায়ুতে শরীরটা বেশ চাঙ্গা লাগছে। দু হাত প্রসারিত করে লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিলাম। এভাবে মিনিট দু’য়েক থেকে জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। রাত সাড়ে এগারো। মসজিদ থেকে আওয়াজ আসছে ‘একটি শোক সংবাদ’, ‘একটি শোক সংবাদ’। নিশ্চিত মৃত্যু সংবাদ। আলফাজ উদ্দিন। উনার চেহারাটা বার বার চোখে ভাসছে। লোকটা যে অতি ভালো ভদ্র মানুষ ছিল তা কিন্তু নয়। তবে খারাপ যে তাও কেউ বলতে পারবে না। এ জীবনে অন্ততপক্ষে কারো উপকার বৈ ক্ষতি করেনি। আমাদেরও করেছে। এই এলাকায় উনার আশ্রয়েই প্রথম আমরা আশ্রিত হয়েছিলাম। বেকার স্বামী-স্ত্রী। নতুন সংসার, নতুন সবকিছুই। উনার সাহায্য সহযোগিতা অস্বীকার করার মতো নয়। তবে বেশিদিন উনার ছায়াতলে থাকা হয়নি কারনটা ওনার লম্পট ছেলে। শকুন চোখের নজর কৃতজ্ঞ থাকার দিন প্রশস্ত করেনি। পরদিনই বাসা চেঞ্জ করে এ বাসায় উঠি। তবে আলফাজ চাচার সাথে আমাদের সম্পর্কটা কিন্তু একই রকম রয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ম্যাসেঞ্জারে লিখতে থাকি, আসসালামু ওয়ালাইকুম তিতুম, কেমন আছো, কি করছো? রাতে খেয়েছ? মা-বাবাসহ বাদবাকি সবাই কেমন আছে? জানো, আলফাজ চাচা মারা গেছেন। উনাকে যেন আল্লাহ ভেস্ত নসিব করেন। সেন্ড করলাম কিন্তু রিপ্লে আসেনি! যদিও তখনো ওর প্রোফাইলে সবুজ বাতি জ্বলছিল। ফোন দিতে মন সায় দেয়নিথ ওই তো অভিমান আর কি! যদিও প্রচন্ড ইচ্ছে করছে কথা বলতে। দিব না কল যদি না সে আগে না দেয় এই ভেবে ফোন হাত থেকে ফেলে পাশ ফিরে রইলাম। আচমকায় কে যেন আমার পায়ে চেপে ধরে। আমি চিৎকার করে উঠে বসে পড়ি। রুমে ডিমলাইট জ্বলছে। রীতিমতো ভয়ে কাত হয়ে আছি। তখনকার কথা মনে পড়তেই ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটরের কথা মনে আসল। এক লাফে বিছানা থেকে নামলাম হাতে ফোনটা নিয়ে। রুমের লাইট না জ্বালিয়েই ডাইনিং রুমের দরজা খুলে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়াই। ওয়াশরুমের দরজাটা তো বন্ধই কিছুটা স্বস্তি। কিন্তু ভেন্টিলেটর চেক করা দরকার। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে ভেন্টিলেটরে চোখ পড়তেই বুক পানি শূন্য। সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে। ভেন্টিলেটরের গ্রিলটা নেই! তার মানে নিঃসন্দেহে কেউ একজন রুমের ভিতরে আছে। কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না। চিৎকার করব নাকি অন্য কিছু। আর অন্য কিছু করলেই বা সেই অন্য কিছুটা কি তার কূল পাচ্ছি না। তিতুম, কল দেয়া যাক কিন্তু দুর্ভাগ্য! ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের ওয়াশরুমের ভেন্টিলেটর গ্রিলটা কাঠের তৈরি আর এটা খোলা যায়। তিতুম আর আমি একদিন গোসল করার সময় বাজি লেগেছিলাম তাও সেটা ছিল ফ্ল্যাটে ওঠার মাস তিনেক পর হবে। আমি বলেছিলাম লোহার গ্রিল কিন্তু সে বলেছিল কাঠের। আসলে কাঠের উপর ওমন লৌহ কালারের প্রলেপ দিলে বোঝারই বা কি উপায় এটা যে লোহার নয়। তারপর যেই তিতুম ধরতে গেছে তখন খুলে গেছে। বাড়িওয়ালাকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। আসলে কেউ ভেন্টিলেটর খুলে রুমে আসতে পারে চুরি বা ডাকাতি করতে তা বাড়িওয়ালার কাছে হাস্যকর ছিল। যেখানে কিনা উনার নাম শুনলেই এলাকার গুন্ডারাও সালাম দিয়ে দৌড়ে পালায়। কিন্তু আমার পালানোর পথ কোথায়? এ কি চোর নাকি ডাকাত! যদি তাই হত তবে এত লুকোচুরি কেন? তখন যে আওয়াজগুলো হল সেগুলো সত্যিই! তবে সে কি চায়! আমার সতীত্ব নাকি প্রতিশোধ! বুকের ভেতরের প্রাণটা যেন ওষ্ঠাগত প্রায়। কাঁপা কাঁপা পায়ে অন্ধকার হাতরিয়ে রুমের ড্রেসিং টেবিল ঘেঁষে দাড়ালাম। নিজেকে শান্ত রাখার অদ্ভূত চেষ্টা করছি। বললাম, কেথ কে এই লুকোচুরি আমার সাথে খেলছ? বেরিয়ে এসো এখনি, বেরিয়ে এসো বলছি। সাহস থাকে তো সামনে আসো। আমার শরীর কাঁপতে থাকলেও মনে প্রচন্ড সাহস। বিছানা হতে নামার সময় মোবাইলটা নেওয়ার সাথে সাথে বালিশের নিচে থেকে আতিফকে খুন করার ছুরিটা নিতে ভুল হয়নি। হঠাৎই খাটের নিচ থেকে কেউ একজন বেরিয়ে এলো।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান