নতুন ধারার সাতকাহন
২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী, এভাবে কালের পরিক্রমায় দেখা যায় সব কিছু পরিবর্তনশীল হচ্ছে। তাই হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অভিনব ইতিহাস তৈরি করে নতুন ধারার ইস্তেহার ঘেষণার মাধ্যমে ২০২১সালে। যা বাংলা সাহিত্যে লেটেস্ট ধারা হিসেবে পরিচিত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- মূলত বড় কবিরাই অবিনব ইস্তেহার তৈরি করেছে এবং পৃথিবীর কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে। যেমন: কবি শালনবোদলেয়ার, কবি আদ্রেবেতো...। গৌণ কবিদের দিয়ে কখনো ইস্তেহার তৈরি করা সম্ভব হয় নি। ইদানিং নতুন ধারার কবিতায় বহু ভাষিকতা থাকার কারণে সমাজে সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয়তার স্বর্ণশেখরে পৌঁছে যাচ্ছে। আর নতুন ধারার মূল উপজীব্য হলো: সমাজের প্রান্তিক মানুষ, স্বজন-বন্ধু, সম্পর্কবাচক শব্দ, গ্রামবাংলার প্রকৃতি, চিত্রকল্প, ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রগতি, দর্শন নির্ভরতা ও ধ্বনিতে সাংগীতিক বিন্যাসসহ প্রভৃতি বিরাজমান থাকে। তবে নতুন ধারায় নাস্তিক, ধর্ম, অধর্ম, বাস্তব, অলৌকিক যোগ করা হয়েছে। যা কোনো আধুনিক কবিতার ধারের কাছেও নেই। মূলত ২০ থেকে ৩০ ভাগ লোকাল শব্দ থাকলে তার সঙ্গে প্রমিত শব্দ ৭০ ভাগ থাকলে তখন নতুন ধারা মানান সই হবে। ফলে নতুন ধারা একটি পূর্নাঙ্গ সার্থকতা লাভ করবে।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে জানা যায়- আধুনিক কবিরা খুব কমই শব্দ নিয়ে খেলা করেছে। অর্থাৎ খুব কমই নতুন শব্দ বা লোকাল ভাষা ব্যবহার করেছে। তা হিসেবে গুনলে শুধু হাতে গোনা কয়েকজন কবি মাত্র হবে। বহুরৈখিকতা একটি কবিতার অনুষঙ্গ বটে! একারণে নতুন ধারার কাঁচামালের একটু ভিন্নতা রয়েছে। সেখানে শুধু প্রান্তিক মানুষ বা বন্ধু-স্বজনের মধ্যে আল্লাপচারিত ঘনিষ্ঠতা শব্দ গুলো যেভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয় তা আধুনিক কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় না। উদাহরণ স্বরূপ- চা বিক্রেতা রমিজ বলছে, ও পাড়ার নাফিসার মা হাসছে...। এসব শব্দ নতুন ধারায় বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু আধুনিক কবিতায় নেই? কাজেই নতুন ধারার ইস্তেহার এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে তা একক ভাবে মূল স্বত্ত্বায় নির্ভর যোগ্য হবে। আর সেখান থেকে কেউ কোনো পয়েন্ট চুরি বা কপি করে সাহিত্যের নতুন কোনো ধারা তৈরি করতে পারবে না। তাহলে খুব সহজেই পাঠকের দৃষ্টি অগোচরে মুহূর্তে ধরা পড়বে।
কাজেই নতুন ধারার কবিতায় কোনো জটিলতা নেই, একদম সরল ও সোজা। এজন্য নতুন ধারার সাহিত্যের বোধগম্যতা সর্বসাকুল্যে অধিক ভাবে ফুটে ওঠে। যা হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের কবিতা থেকে আলাদা এবং স্বতন্ত্র ভাবে বহিঃপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে। যার ফলে পাঠক হৃদয়ে খুব সহজেই ঠাঁই পাবে। তবে আমাদের দেশের টিভি নাটকের ভাষা কোলকাতার দর্শকরা ভালো ভাবে বুঝতে পারে। এজন্য নতুন ধারার ভাষা সে রকম বোধগম্য হবে।
আমরা জগত ও জিবন সম্পর্কিত আত্মঃউপলব্ধিকে সাহিত্য বলতে পারি, কিন্তু প্রশ্ন একটাই? আধুনিক কবিতা নিয়ে সাধারণ পাঠক মহলে নানা কল্পনা-জল্পনার শেষ কোথায়? এর জন্য নতুন শতকে নতুন ভাবে সর্বজনীন সাড়া জাগানো ইস্তেহার আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। উপযুক্ত সময় এসেছে নতুন কে জাগিয়ে তোলার আর পুরোনোকে পরিহার করতে হবে। তা না হলে আমাদের মধ্যে সঠিক ভাবে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস জানতে ও বুঝতে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ নতুন ধারার কয়েকটি কবিতা উদ্ধৃতি করা যাক-
১. এত উঁচা গাছ কিন্তু ডাব পাড়ার মানুষ কই?/ নিশ্চই খাওইনা লোকের অভাব নাই.../নিরোপায়, রুবির মায় চেঁচিয়ে কয়/ ভয় ভয়--- হামার ডাবে হাত দিছে কিস্তিওলার পুত/ নিখুঁত চিনি কালাম উরফে কাউল্লা ছিল্লা দিছে।/ কিযে বিপাকে আছি অসহায় লজ্জায় নাক কাটা যায়!...(ডাব পর্ব- ফাহিম ফিরোজ)।
২. উত্তম--সবুজ আমরা - কার লিগা করি অপেক্ষা?/ আরেকদফা মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে; / পলিখিন ঠোঙ্গা চা কফির কাপ জুস ও পানি’র বোতল ড্রেন অভিমুখী করতিছে যাত্রা--/পাবলিকের চুল হালায়/ নাকে তেল দিয়া ঘুমায় ঢাকা ওয়াশা...(বহুরুপী আগুন- কবির আহাম্মদ রুমী)।
৩. আকাশ-মাটির মাঝে ঝুলে থাকা কলা আমার/চাপামুখ খুইলে দিছে; যখন আমরা চারজন!/ দু’হাজার আট, বারো, সতেরো আর বিশ/ সর্বোপরি নিজ্জলা পবিত্র কলঙ্ক/ কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্টিফেন মুলার দেশের হয়ে/ আমাকে গায়েবী নিমন্ত্রণপত্র পাঠায়/ সেন্টপল এর উল কাহিনী এবং জর্জিয়ার তাপ...(এমজি একটা দুঃস্বপ্ন-রেশম লতা)।
৪. তোর্ষার ঘাটে রোজ খেয়া বায় মধুরানাথ দাস/ তবুও তার ঘরপোড়া মনডা পইড়া থাকে সেই/ টোক নয়ানবাজারেরং পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের ঘাটে/ সাত পুরুষের ইজারার ঘাট ছাইড়া আইছে কবে/ তবুও মনে আছে কাশেম চাচা, সালেমার কথা...(খেয়া ঘাটে ওঠে গান- উৎপলেন্দু পাল)।
৫. সময় হাঁটে না, দৌড়েও যায়না, লাফায়।/ লাফাইয়্যা লাফাইয়্যা চলে,/ গাড়ি গতিতে সময় গেলে সময়ের দুর্নাম হয়/ সবুর মিয়া কয়- সময়ডা বাংলা নারে বেঢা...(ক্যাঙ্গারু সময়- মান্নান নূর)।
৬. মাইয়া, আইজ আমার আস্ত মনটারে ভাঙা হইসে, / যে যার মত কইরা এক একটা টুকরা খুইলা লইয়া যাইতাছে ঘরে.../ কেউ কেউ লইছে আমার স্মৃতি আবার কেউ লইয়া গেছে আমার কল্পনা/ আমার মেজ বউ, আমার আবেগ লইয়া ছিনিমিনি খেলিতেছে...(আস্ত মনটারে- সঞ্জয় সাহা)।
৭. আশ্বিনেও বৃষ্টি নামে কাশফুল ভিজ্যা যায়/ সিটি- শহরের ম্যানহোল-ড্রেনের ঢাকনা খুইল্যা যায় উন্নাকালে/ ফুলে ফেঁপে ওঠে নগর উন্নয়ন, বাতি ঘরে বাতি নাই গো সেলিনা বু কাঁদে-/ এইকালে এহন শরৎকাল....(সব সময়- নূর মোহাম্মদ দীন)
তবে এটাও ঠিক- হোক বিজ্ঞান অথবা হোক সাহিত্য, যখন নতুন ভাবে কোনো কিছুর আবির্ভাব ঘটে তখন নিন্দুকেরা অবশ্যই সমালোচনার ঝড় তোলে। মনে হয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। সচারচর আমরা বলতে পারি, মন্দের চেয়ে ভালো জিনিসের সমালোচক একটু বেশি বটে! তাই ওসবে কান দিলে চলবে না? সময় কারো জন্য থেমে থাকবে না, এটাই বাস্তবতার গন্ডি। ইদানিং লক্ষ্য করা যায়- নতুন ধারা ক্রমান্বয়ে কবিদের কলমে এগিয়ে চলছে... আর সমাজে নব দিগন্তে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। আশা রাখছি- আগামীতে এর জয়জয়ন্তি উপমহাদেশে দাপিয়ে বেড়াবে এবং সফলতার স্বর্ণশেখরে পৌঁছে যাবে।
এই নতুন ধারার কবিতায় ডান-বাম সকলের অংশ গ্রহনের কথা বলা হয়েছে। এ যাবত আমাদের ভারতবর্ষে সাহিত্যের যত ইস্তেহার ঘোষণা করা হয়েছে, তা সবই যেন বিদেশ থেকে ধার করা সম্পদ। কিন্তু নতুন ধারা কোনো ধার করা নয়, এটা আমাদের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করা দায়িত্ব আমাদের সবার ঘাড়ে পড়ে। আসুন, আমরা নতুন ধারা সম্পর্কে সকলেই অবগত হই। আর নতুন আশার আলো জাগিয়ে তুলতে হবে। তাহলে আমরা সঠিক ভাবে শিল্প ও সংস্কৃতিকে খুব সহজেই বুকের মধ্যে লালিত পালিত করতে পারব।
সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বেশ কিছু গুনী কবি, লেখকরা নতুন ধারার কবিতা কে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে এবং পাঠক মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এই নতুন ধারার প্রবর্তক ফাহিম-ফিরোজ। দিন শেষে লেখক ও পাঠকের একটাই স্লোগান- জয়তু নতুন ধারা...।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান