কবি আল মাহমুদের সাহিত্য বৈভব
০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১২ এএম
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ । তিনি আধুনিক বাংলা সাহিত্যকে করেছেন সমৃদ্ধ।
আল মাহমুদের কাছে কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি রাবেয়া রাবেয়া আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট। (কবিতা এমন)
বস্তুত কবিতা এমন অনুভবের বাতায়ন দিয়ে জীবনের গহীনে ঢুকে পড়া যেন এক অভাবিত সৌন্দর্যে জীবন বোধকে স্পন্দিত করে ।আল মাহমুদের বহু কবিতা ও কবিতাংশ রয়েছে যা পাঠে আসে এরকমই অনুভূতি। প্রেম কবে নিয়েছিলো ধর্ম কিংবা সংঘের শরণ?
মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস। যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন তারপর কিছু নেই, তারপর হাসে ইতিহাস। (সোনালী কাবিন-৪)
কবি আল মাহমুদ বাংলা কবিতায় বাংলাদেশের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্য রচনায় অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন। আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেও ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নরনারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহ ছন্দের অপূর্ব গাঁথুনীতে আল মাহমুদের কবিতায় যেভাবে এসেছে তা আমরা আর কারো কাছে পায়নি।
আল মাহমুদ একজন মিথলজিক্যাল রোমান্টিক কবি। যেমন তিনি তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ‘সোনালী কাবিন’ । তিনি এখানে শক্তিমত্তার সঙ্গে রোমান্টিসিজম প্রবেশ করিয়েছেন যা ‘সোনালী কাবিন’ সনেট গুচ্ছকে করেছে অন্যান্য।
সোনার দিনার নেই, দেন মোহর চেয়ো না হরিণী
যদি নাও, দিতে পারি কাবিনহীন হাত দুটি
আত্মবিক্রয়ের স্বর্ণ কোনকালে সঞ্চয় করিনি
আহত বিক্ষত করে চারদিকে চতুর ভ্রুকুটি;
ছলনা জানিনা বলে আর কোন ব্যবসা শিখিনি।
কি অনন্য ভাবের প্রকাশ । সত্যি যে, এমন ভালোবাসা সত্য দৃঢ় কথা কজনই বলতে পারে? কিন্তু একজন কবিই অকপটে তা বলতে পারে। কেননা কবি হয় প্রেমের কান্ডারী সত্যের সাধক ও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী । তাই কবির এইসব পঙক্তিতে ভেসে উঠেছে ভালোবাসার চিত্র। ‘সোনালী কাবিন’ সনেটগুচ্ছ কবি উপমা রূপকের চর্চার কুশলতার যে নিদর্শন রেখেছেন, আধুনিক কবিতার ক্ষেত্রে তা নতুন এবং আন্তরিক সততায় উজ্জ্বল। এই একটি কাব্য কবিকে বাঁচিয়ে রাখবে মহাকালের অক্ষয় সীমান্তে । গ্রামের মাটি থেকে বিচিত্র আকুল আগ্রহকে কবি উন্মোচন করেছেন, নদীর চরের প্রতি কৃষাণীর অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপকল্পে প্রমাণিত হয়েছে নারীর প্রতি পুরুষের আকাঙ্ক্ষার ক্ষুধার্ত নদীর উপমায় নর-নারীর কামনার চিত্র।
বিবসন হও যদি দেখতে পাবে আমাকে সরল
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইয়ের পাতাও থাকবে না
তুমি যদি খাও আমাকেও দিও সেই ফল
জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হবো চিরচেনা (সোনালী কাবিন)
কবি আল মাহমুদ মানুষের মানবিক মেধা ও মননের বিষয়গুলো খুব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। কবির দৃষ্টিভঙ্গি যুগপৎ সমাজনিষ্ঠ। তিনি নারী নিসর্গ প্রেম ভালবাসায় নির্মাণ করেছেন নিজস্ব সৌধ। যেখানে তার উপমা তার সঙ্গে চলে।
সাধারণ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, আধুনিক কবিতা দুর্বোধ্য। আপনি এ-ধারণাকে কীভাবে খ-ন করবেন(মে ১৯৮৬) আল মাহমুদ বলেন, ‘একজন পাঠক হিসেবে আমার কাছে আধুনিক কবিতা দুর্বোধ্য নয়। একেবারেই বুঝতে পারি না এমন রচনার সংখ্যা খুবই কম। প্রচলিত আঙ্গিক ও উপমা ইত্যাদি পরিত্যক্ত হলেই এক ধরনের অসহিষ্ণু পাঠক আছেন যারা কবিতা দুর্বোধ্য বলে পরিহাস করতে চান। সুযোগ পেলেই তারা সমকালীন কবিদের বিদ্রুপ করেন এবং আবেগভরে রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করতে থাকেন। আধুনিক কবি ও দৈনন্দিন শিল্পচেতনা এদের মুখাপেক্ষী নয়। যে জাতি নগর গড়ে তোলে এবং এর গঠনশৈলী সম্বন্ধে সচেতন, যারা চিত্রকলা ও সংগীতের স্বাদ গ্রহণে পরাক্সমুখ নয়, যারা অ্যাবসার্ড নাটকের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটে, টেলিভিশনে ‘ডাইনেস্টি’ কিংবা ‘ডালাস’ দেখে উল্লসিত হয়, বর্ণবাদবিরোধী কবি বেঞ্জামিন মলয়েসেকে ফাঁসির দ- দিলে যে জাতি আতঙ্কগ্রস্ত হয়, সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যে জাতি তৃতীয় বিশ্বের জাতিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সতর্ক তারা কেন আধুনিক কবিতাকে দুর্বোধ্য বলবে তা আমার জানা নেই।’
প্রশ্ন ছিল : আপনি একবার বলেছিলেন ‘কবি হতে গেলে সারা জীবন উৎসর্গ করতে হয়’। এ-বিষয়ে আল মাহমুদ বলেন, ‘হ্যাঁ, একটা জীবন দিতে হয়। এটা কোনো পার্ট-টাইম জব নয়। একটা পুরো জীবন দিয়ে দিতে হয়। ফিরতে পারে না সে।’
কাব্যচর্চা মূলত সুন্দর ও নন্দনচর্চা। আর তাই সাহিত্যে অন্য বিষয়ের চাইতে কাব্যচর্চা অত্যন্ত সৃজনশীল শিল্পময় কিন্তু ঢের কঠিন। যদিও কবিতা সৃজনশীল মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ। এ বিষয়ে কবি আল মাহমুদ বলেছেন-কাব্য সহজ শিল্প নয়। কারণ কাব্য হলো ভাষারই অমরতার সোপানে আরোহণের বর্ণনা মাত্র। সবাই পারে না। কেউ কেউ পারে। আমরা তাদেরই একবাক্যে বলে উঠি এই তো কবি। আলোচকরা কবির কাব্য বিশ্লেষণে বের আনেন যে, মার্ক্সিস্ট থেকে ইসলামের বিশ্বাসী হয়েছেন আল মাহমুদ। কিন্তু তারপরও তার কবিতায় দেখা গেছে মাংসের গোলাপ, মিথুনরত কবুতর, ত্রিকোণ কর্দম। কারণ তিনি প্রথমত কবি, শেষত ওই কবিই । তিনি বলেছেন-কবিতা আমার জীবন। কারণ আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কবি। আমি তো অন্যকিছু হতে আসিনি। আমি আমার কবিসত্তার ব্যাপারে সচেতন ছিলাম। কখনোই এই সত্তাকে বিক্রি হতে দিইনি। বহুবার বলেছি, আমি কবি ছাড়া আর কিছু নই। সব কথার শেষ কথা আমি কবি এবং কবি, শুধুই কবি।
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদকের টাকা না পেয়ে মাকে কুপিয়ে হত্যা করে থানায় ছেলের আত্মসমর্পণ
তারেক রহমান ও কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহার না করলে আন্দোলনের হুমকি হিন্দু সম্প্রদায়ের
সুরমা-কুশিয়ারার জন্য ১৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প
নকলায় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
কালীগঞ্জে বিএনপি'র মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে ফুলের শুভেচ্ছা জানালেন হামিদ
পর্ন তারকা স্টর্মিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘুষ প্রদান মামলার রায় স্থগিত করলো আদালত
দৌলতপুরে মাদকাসক্ত যুবকের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন : যুবক আটক
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিক্ষোভ, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
পবিত্র কোরআন শরীফের পরে সত্য হিসেবে মানুষ সংবাদপত্রকে মনে করতো-বিটিভি মহা পরিচালক
লালমোহনে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিহত
বিচারের আগে ফ্যাসিস্ট আ. লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই : নাহিদ
ড. ইউনূসকে নিয়ে এক দশক আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি
গাজীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুতের তারের স্পর্শে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে হামলা, চার ইতালীয় সেনা আহত
এ আর রহমানের নামে মিথ্যাচার রটানোর অভিযোগে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন ছেলে এ আর আমিন
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোন ধর্মই নিরাপদ ছিল না-এড.আহমেদ আযম খান
শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন বাধ মানে না এমন ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে : পুতিন
ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় চতুর্থ
পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা
ছয়-সাত মাসেই টিয়ার কাবিখার ২০০ কোটি লুটেছিলেন হাসিনা দোসর মহিবুর