ধূমপানের ক্ষতি কমাতে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানোর দাবি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৪৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:০৬ পিএম

তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এবং দেশের রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রতিবছর জাতীয় বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বাজেটে সব স্তরের সিগারেটের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। দেশের আভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ১০ শতাংশ আসে সিগারেট খাত থেকে। সিগারেটের চারটি স্তরের মধ্যে নিম্নস্তরের ভোক্তাই ৭৫ শতাংশ। গত চার অর্থ বছর ধরে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৩ টাকা। এই স্তরের সঠিক মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় এখাত থেকে প্রবৃদ্ধি কমছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি আগের অর্থ বছরের তুলনায় ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ বছরও কোন প্রবৃদ্ধি দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের রাজস্ব বাড়াতে ও দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে আগামী বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।

সম্প্রতি গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তামাক ব্যবহারকারীকে (যারা মূলত নিম্ন স্তরের সিগারেটের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ব্যবহার করে) ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করে। একইসাথে উচ্চ স্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ভোক্তাদের মধ্যে সস্তা ব্র্যান্ড বেছে নেয়ার আগ্রহ কমে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম না বাড়ায় মূলত এই খাত থেকে আশানূরূপ রাজস্ব আহরণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে ও রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি বছর সিগারেটের দাম বাড়ানোর কথা থাকলেও গত ৪ অর্থবছর নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম (১০ শলাকা প্যাকেট) বেড়েছে মাত্র ৩ টাকা। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব সংগ্রহে। তাই নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো না হলে এ খাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ যেমন বাড়বে না, তেমনি কমবে না ধূমপায়ীর সংখ্যাও।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো সিগারেট। বাংলাদেশ সরকারের মোট যা রাজস্ব আয় করে তার প্রায় ১০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। তবে প্রতিবছর সিগারেটের উচ্চস্তরের দাম বাড়ানো হলেও প্রায় অপরিবর্তিত থেকে যাচ্ছে নিম্নস্তর। তাই আগামী বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো জরুরি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে ও নিম্নআয়ের ধূমপায়ীর সংখ্যা কমাতে অবশ্যই নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ালে দেশের নিম্ন আয় ধূমপায়ীদের মধ্যে এর প্রভাব ফেলবে। এতে কমবে ধূমপানের অভ্যাস। তাই দেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবশ্যই নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো উচিত।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ করা কমদামি ও বিভিন্ন ফ্লেভারের চোরাই সিগারেটের ক্রেতা হচ্ছেন উঠতি বয়সি তরুণ-তরুণীরা। কম নিকোটিনের দোহায় দিয়ে এসব সিগারেট দেদারসে বাজারে বিক্রয় হচ্ছে। যে কারণে তরুণ-তরুণীরা এই চোরাই সিগারেট কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফলে দিনদিন এই চোরাই সিগারেটের চাহিদা বাড়ছে। এতে দেশে বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ধূমপায়ীর সংখ্যা কমিয়ে নিয়ে আসতে ও রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি অবৈধ চোরাই সিগারেট বিক্রয় বন্ধে প্রসাশনকে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে হবে। অতিদ্রুত এই কঠোর ব্যবস্থা জোরদার করতে পারলে ও নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়লে রাজস্ব আয় যেমন বাড়বে একইসঙ্গে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল
ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির
আরও

আরও পড়ুন

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেপ্তারের ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

নাটোরে ৬ ট্রাকের সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২, আহত ৭

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

রাখাইনের অস্থিরতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি কমেছে ৯০ ভাগ

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

ক্রিসমাস মার্কেট হামলা, জার্মান কর্তৃপক্ষের কাছে গত বছরেই এসেছিল সতর্কবার্তা

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

উপদেষ্টা হাসান আরিফকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

ডলার বাজারে অস্থিরতা, দাম বেড়ে ১২৯ টাকা

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

উত্তরার বিপ্লবী জনতাকে যে কঠিন মূল্য দিতে হয়েছিল

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষকর্মী নিতে আগ্রহী লিবিয়া

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

ইইউভুক্ত দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি কাতারের

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

দক্ষিণ কোরিয়ার সৌন্দর্যের পেছনে ছুটে বিপদের ফাঁদে পর্যটকরা

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

২৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদ

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

হিরো নয় কারিনার ছেলের চরিত্রে অভিনয় করতে পারি

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

রাওয়ার নেতৃত্বে আবদুল হক ও ইরশাদ সাঈদ

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

স্লোভাক প্রধানমন্ত্রীর মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৩ কিশোর নিহত

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

গাজীপুরে কারখানা থেকে দগ্ধ আরও এক লাশ উদ্ধার

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান

সিরিয়ার আকাশে নিষিদ্ধ হলো ইরানের বিমান