লক্ষ্মীপুরে শিশু পুত্রকে হত্যার দায়ে মায়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

Daily Inqilab লক্ষ্মীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার

০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৩৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৭ পিএম

লক্ষ্মীপুরে স্বামীর তালাকের হুমকিতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে একমাত্র সন্তান আয়ানুর রহমান আয়ানকে (৩) গলা কেটে হত্যার দায়ে বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে মা সাবিনা ইয়াছমিন শিল্পীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম। একইসঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত সাবিনা ইয়াছমিন সদর উপজেলার পার্বতীনগর ইউনিয়নের মতলবপুর গ্রামের মৃত ছেরাজুল হকের মেয়ে ও লাহাকান্দি ইউনিয়নের চাঁদখালী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আজিমুর রহমান আজিমের স্ত্রী।

লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, হত্যার ঘটনা স্বীকার করে আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

আদালত ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সাবিনা তার ছেলে আয়ানকে নিয়ে বড় বোন আয়েশা বেগমের বাড়িতে বেড়াতে যান। অসুস্থতার কারণে সাবিনা পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর বাড়িতে চলে আসেন। রাতে খাবার শেষে যে যার যার কক্ষে ঘুমাতে যান। মধ্যরাতে হঠাৎ সাবিনার ঘর থেকে বৈদ্যুতিক পাখার বিকট শব্দ শোনা যায়। এতে সবাই ঘুম থেকে উঠে তার কক্ষের সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে বেড়ার ওপর দিয়ে পরিবারের লোকজন দেখতে পান, সাবিনা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে পাখার সঙ্গে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এসময় খাটে আয়ানের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে দরজা ভেঙে ছাবিনাকে আত্মহত্যার থেকে রক্ষা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে আয়ানের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়।

ছাবিনাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আয়ানের দাদা হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে পরদিন সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া সাবিনার জবানবন্দিতে জানা যায়, ২০১৭ সালে চাঁদখালী গ্রামের আজিমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছরের মাথায় আজিম সৌদি আরব চলে যান। আয়ান তাদের একমাত্র সন্তান ছিল। ঘটনার আগের দিন বোনের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাবিনা। তাকে মাইজদি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বড় বোন আয়েশাও তার সঙ্গে আসেন। চিকিৎসার জন্য সাবিনার শ্বশুর হুমায়ুন কবির ও শাশুড়ি নাছিমা বেগমের কাছ থেকে কিছু টাকা চান আয়েশা। কিন্তু তারা টাকা দেননি। এতে আয়েশা নিজের বাড়িতে চলে যান।

পরে শ্বশুর-শাশুড়ি ছেলেকে দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেওয়াবেন বলে হুমকি দেন। আজিমও সৌদি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ফোন দিয়ে সাবিনাকে তালাক দেবেন বলে জানান। এতে হতাশ হয়ে রান্নাঘর থেকে বঁটি নিয়ে ছেলেকে জবাই করে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

২০২২ সালের ২ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া আদালতে সাবিনার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’
এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
কেরানীগঞ্জে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য  অপহৃত  উদ্ধার : অপহরণকারী  গ্রেফতার
ভেঙ্গে পড়লো উত্তরা আব্দুল্লাহপুরের অরক্ষিত বেইলি সেতু
খুনিদের বিচার ও সাদ পন্থীদের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সখভায় প্রধান প্রকৌশলী

বরিশালে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অংশীজন সখভায় প্রধান প্রকৌশলী

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক উর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

সংস্কারোত্তর পিআর পদ্ধতিতেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

‘রাষ্ট্রের সকল স্তরে ইসলামী সংস্কৃতির অনুশীলন নিশ্চিত করতে হবে’

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

মেট্রোকে থামিয়ে ফাইনালে রংপুর

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

৪৩ বছর পর কুয়েতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

আমরা আল্লাহর উপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারতে: দুলু

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?

মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল, কানাডায় কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন ট্রুডো?

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ

পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ

ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!

ভারতের সেবাদাসী হাসিনাকে পুনর্বাসনে এবার জঙ্গি মিশনে তারা!

মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ

মাহফুজকে উপদেষ্টা থেকে বাদ দেওয়া উচিত? যা বললেন ড. জাহেদ

৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

৬ বছরের মধ্যেই চীনের হাতে হাজার পরমাণু বোমা! উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি

বিগত সময়ে দলীয় স্বার্থ উদ্ধারে বড় ধরনের অপরাধ করেছে পুলিশ, এ জন্য আমরা লজ্জিত: আইজিপি

ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের

ব্রাহ্মণপাড়ায় পাঁচ দিনেও খোঁজ মিলেনি নিখোঁজ সোহাগের

কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড

কসবায় পাহাড় কাটার অপরাধে ২ জনের অর্থদণ্ড

নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে মাকে কুপিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা

চট্টগ্রামকে বিদায় করে টিকে রইল খুলনা

পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পলাতক ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!

ফ্রিজে রাখা বাসি ভাতে উপকার দ্বিগুণ!