প্রতিবছর করোনার থেকে ৫ গুণ বেশি মৃত্যু হয় তামাকে!

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ মে ২০২৩, ০২:২৫ পিএম | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩, ০২:২৫ পিএম

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সবমিলিয়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যা করোনায় মৃত্যুর চেয়েও ৫ গুণ বেশি। এমনকি একদিনেই তামাক ব্যবহারের চূড়ান্ত পরিণতিতে প্রাণ হারাচ্ছেন সাড়ে ৪৫০ মানুষ। এ অবস্থায় আগামী সংসদ অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাসের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব তথ্য জানান। বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগ যেমন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশই অসংক্রামক রোগের কারণে ঘটছে। আর এই অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির কারণ মূলত ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার (ক্লিনিক্যাল রিসার্চ) ডা. শেখ মোহাম্মদ মাহবুবুস সোবহান। তিনি জানান, দেশে ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে। এর কারণ বাংলাদেশ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ এবং তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রণোদনা নির্মিত করার ক্ষেত্রে এখনও সর্বোত্তম মান অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রণীত সংশোধনীটি আসন্ন সংসদ অধিবেশনে উত্থাপন এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে পাস করে চূড়ান্ত করা হলে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর হবে। এসময় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মু. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, তামাকে শুধু যে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, তা নয়। এছাড়াও শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে সুপারি, গুল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন যেসব তামাক রয়েছে ব্যবহার করছে, সেগুলোর কারণে জিহ্বা, ঠুঁটের ক্যান্সার হয়।

তিনি বলেন, তামাকের এই ভয়াবহতা রোধে আমরা শক্তিশালী আইনে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই আইনটিকে আরও শক্তিশালী ও জোরদার করা হোক। কারণ শুধু মানুষকে সচেতন করে কখনই শতভাগ তামাকের ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়। আমরা যদি কঠোর একটি আইন করে তামাক বন্ধ করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের সমস্যাগুলো ৮০-৯০ ভাগ প্রতিহত করতে পারব।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী) বলেন, আমরা শুধু তামাকে ক্ষতির একটা আংশিক হিসাব দেখি, কিন্তু তামাকের প্রভাবে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হয়, সেটি আমরা হিসাব করি না। এমনকি সেই ক্ষতি হিসেব করার সক্ষমতাও আমাদের নেই। কিন্তু তামাক কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্মসংস্থান, সরকারের আয়ের কথা বলা হয়। কিন্তু এই আয়ের তুলনায় বরং ক্ষতিটাই যে বেশি হয়, সেটাকেও আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নতির ধারা বজায় রাখতে জনগণের সুস্থ থাকা জরুরি। অসুখ হয়ে গেলে কষ্টই, এরমধ্যে আছে অর্থনৈতিক কষ্ট, সামাজিক কষ্ট। অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাক। যারা জর্দা, তামাক খায়, তাদের ফুসফুস, মুখগহ্বরের ক্যান্সার হয়।

অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন তামাক বিরোধী সংগঠন ও ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে।
সেগুলো হলো,

১. আইনের ধারা ৪ ও ৭ বিলুপ্ত করা, অর্থাৎ সকল পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান' নিষিদ্ধ করা।

২. তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা।

৩. তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

৪. তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।

৫. বিড়ি- সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

৬. ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং ট্যোবাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে বিদেশী প্রভুদের কাছে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে: আমিনুল হক
বদরের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর চেতনার বাতিঘর
বদর যুদ্ধ শিরক ও কুফুরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে
প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাতিলের মোকাবেলা করতে হবে
মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ ভারত বিরোধীতা : নাছিম
আরও

আরও পড়ুন

আজ জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

আজ জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা

মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে চালকের মৃত্যু

মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে চালকের মৃত্যু

গাজীপুরে প্যাকেজিং কারখানায় আগুন

গাজীপুরে প্যাকেজিং কারখানায় আগুন

বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন মারা গেছেন

বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন মারা গেছেন

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেল ও চোরাই মালামাল উদ্ধার, ৩ চোর আটক

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেল ও চোরাই মালামাল উদ্ধার, ৩ চোর আটক

মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

গরুচোর সন্দেহে গাজীপুরে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত

গরুচোর সন্দেহে গাজীপুরে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন চীন

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন চীন

এবার বেশি দামেই খেতে হবে আলু

এবার বেশি দামেই খেতে হবে আলু

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান

সিরিয়াতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৩ সেনা নিহত

সিরিয়াতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৩ সেনা নিহত

কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ নিয়েও এবার মোদি সরকারকে ‘খোঁচা’ যুক্তরাষ্ট্রের

কংগ্রেসের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ নিয়েও এবার মোদি সরকারকে ‘খোঁচা’ যুক্তরাষ্ট্রের

গাজায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের

গাজায় দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় ইসরায়েলকে নির্দেশ আন্তর্জাতিক আদালতের

আজ গুড ফ্রাইডে কী? খ্রিষ্টানদের কাছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

আজ গুড ফ্রাইডে কী? খ্রিষ্টানদের কাছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ

দুই মাসের জন্য মাঠের বাইরে রেদোনদো

দুই মাসের জন্য মাঠের বাইরে রেদোনদো

তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভেনিস

তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ভেনিস