মার্কিন ভিসানীতি সরকারের বুকে কাঁপন ধরিয়েছে : গণতন্ত্র মঞ্চ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৮ মে ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও আরেকটি এক তরফা ও তামাশার নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে, এটা বুঝতে পেরে ৭ মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে বলে মন্তব্য গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের। তাদের দাবি, নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে।

রবিবার (২৮ মে) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে পদযাত্রা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জোটের নেতারা এসব কথা বলে। পদযাত্রায় বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সভাপতির বক্তব্যে বলেন, খবর বেরিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাকি একই নীতি ঘোষণা করবে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলো নাকি একই নীতি গ্রহণ করতে যাচ্ছে।

২০১৪ সাল থেকে এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থেকে দেশের মানুষের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে- এমন মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, একটা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশকে তারা আজকে সোমালীয় ও নাইজেরিয়ার পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী মুখে যে উন্নয়নের কথা বলতেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জেনে গেছে-২০১৪ সালে তারা কীভাবে একতরফা ও জালিয়াতির নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে তারা দিনের ভোট রাতে করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে অপমান করেছে। তারা কতটুকু নির্লজ্জ যে নিজেদের আবার গণতান্ত্রিক সরকার দাবি করে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইতোমধ্যে নামজাদা, লাঠিয়াল সংসদ সদস্যের ভিসা যে রিজেক্ট হয়েছে তার খবরও পাওয়া গেছে। তলে-তলে কাজটা শুরু হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম আওয়ামী লীগ সরকার নষ্ট করে দিয়েছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, বহু বছর ধরে বলছি-ভোট চুরি করে, জালিয়াতি করে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, অত্যাচার-গুম করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা যায় না। অতএব, সময় এসেছে, এখন আপনাকে যেতে হবে। আপনি বিদ্যুৎ উৎসব করেছে, এখন পায়রা বন্দর বন্ধ হতে চলছে, ডলারের সংকটের কারণে কয়লা আনতে পারে না। জিনিসপত্র আমদানি করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা আন্দোলন শুরু করেছি, বন্ধ করছি না। আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির চেষ্টা করে, লোভ ও ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা করেছে। তবে, আমরা ভয় পাই না, লড়াই শেষ পর্যন্ত করবো। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। আমরা রাতের বেলায় কারও সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করি না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে এটা নাকি অন্যায় করেছে, আওয়ামী লীগের নেতারা এমনটাই বলছে। কিন্তু মানুষের ট্যাক্সের টাকায় সরকারে বসে লুটপাট করে আপনারা কেন বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেন। আপনারা কেন র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে মানুষকে রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন, মেরে ফেলেন, গুম করে ফেলেন। তার জবাব তো আপনারা দেন না। বাংলাদেশের মানুষ মাথা ঠুকে-ঠুকে তার জবাব চেয়েছে, সরকার বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে।

আওয়ামী লীগের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে দাবি করে সাকি বলেন, মানুষ পরিষ্কার বুঝতে পারছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একটা তামাশার নির্বাচন করতে চায় তারা, কিন্তু জনগণ হতে দেবে না। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদা, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি উল্লেখ করে সাকি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। কেবল গদি রক্ষার জন্য। দেশকে নিলামে তুলছে।

সাকি আরও বলেন, মানুষকে কতটা বোকা ভাবলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যুক্তরোষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির ফলে নাকি বিএনপি বেকায়দায় আছে। দেশে ভোট চুরি করে সরকার, সভা-সমাবেশ করতে দেয় না সরকার, মানবাধিবার লঙ্ঘন করে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে অকর্ম করায় সরকার, তাদের নামে বদনাম হচ্ছে সারাবিশ্বে, আর তারা বলছে ভিসানীতি নাকি বিরোধী দলের জন্য। এটা বলা একমাত্র এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের পক্ষে সম্ভব। নির্বাচন সুষ্ঠু করা জনগণের দাবি। জনগণ তো সুষ্ঠু নির্বাচনকে বন্ধ করতে যাবে না। দেশের মানুষ জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হবে? তারা ভেসে যাবে। এটা তাদের অপকর্মের ফল। কাজেই নির্বাচন বানচাল করার কোনও প্রয়োজন নেই বিরোধী দলের। জনগণ ও বিরোধী দল সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।

গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতার দাবি, আওয়ামী লীগ আরেকটি পরিকল্পিত নির্বাচন করতে চায়। অর্থাৎ নিজেরা ২০০ আসন রেখে বাকিগুলো অন্যান্য দলের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করতে চায়। তারা দেশের মালিক, অন্যদের ভিক্ষা দেবে? দেশের মানুষ এটা আর সহ্য ও গ্রহণ করবে না। সেই প্রত্যাখ্যানের আওয়াজ ও জাগরণ উঠছে। তার মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটবে।

অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধানের সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে শতাধিক নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এই পদযাত্রা মালিবাগ মোড় থেকে শুরু হয়ে মেরুল বাড্ডা গিয়ে শেষ হয়। এতে বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব প্রমুখ।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
সা'দ পন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আশুলিয়া থানায় স্মারক লিপি প্রদান
গভীর রাতে শীতার্ত মানুষের পাশে বিএনপি নেতা আমিনুল হক
আরও

আরও পড়ুন

পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক

পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারের গত ১৭ বছরের নির্যাতন ভুলে যাবার সুযোগ নেই: আমিনুল হক

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত

পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত

পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি

ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি

এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!

আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!

ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু

ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত

মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র

মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র

স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?

স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?

চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১

চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১

পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি

পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি

যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত

যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত

১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান

১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ