অর্ধশতাধিক কিডনি বিক্রি, প্রতিটি ৫০ লাখ, দাতা পেতেন পাঁচ
২০ জুলাই ২০২৩, ০২:১৮ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ০২:১৮ পিএম
কিডনি বিক্রি করে প্রতারণার শিকার হয়ে নিজেই শুরু করেন কিডনি বিক্রির প্রতারণা। বিভিন্ন সময় জনপ্রতি কিডনি ৫০ লাখ টাকা চুক্তি করলেও দাতাকে দেওয়া হতো মাত্র পাঁচলাখ টাকা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন। গতকাল বুধবার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, এখন পর্যন্ত চক্রটি অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে অবৈধ উপায়ে কিডনি নিয়েছে। এভাবে বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তারা। চক্রের হোতা মো. আনিছুর রহমান। বাকি সদস্যরা হলেন- মো. আরিফুল ইসলাম রাজিব, সালাউদ্দিন তুহিন, সাইফুল ইসলাম ও এনামুল হোসেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ জানান, ২০১৯ সালে চিকিৎসার জন্য ভুয়া কাগজপত্রে ভারতে গিয়ে প্রতারিত হন আনিছুর রহমান। অর্থের বিনিময়ে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন। তবে সেখানে কিডনি প্রতিস্থাপনের রোগীদের ব্যাপক চাহিদা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে আনিছুর দেশে ফিরে নিজেই কিডনি বেচাকেনার অবৈধ ব্যবসায় নামেন। লে. কর্নেল মোস্তাক জানিয়েছেন, আনিছুর রহমান ভারতে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। অনলাইনে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহ করে বৈধ ও অবৈধভাবে বিমানে বা স্থলপথে ভারতে পাঠাতেন।
র্যাব-১ জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে অঙ্গিকারনামা এবং ভুক্তভোগীর সঙ্গে করা চুক্তির এফিডেভিট কপি উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘প্রতারণার মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কয়েকটি চক্র। এসব চক্রের ফাঁদে প্রলুব্ধ হয়ে সর্বহারা হচ্ছে অসহায় নিম্নমায়ের মানুষ। আইনবহির্ভূত, স্পর্শকাতর ও অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে অমানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি র্যাবের সাইবার মনিটরিং সেল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধভাবে কিডনিসহ অন্যান্য মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রয় সিন্ডিকেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আসছিল। এসব সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন অনলাইন এবং অফলাইন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহক ও ডোনারদের আকৃষ্ট করে থাকে।’
বিদেশে অবস্থানরত একেকজন কিডনি ক্রেতা জীবন বাঁচাতে ৪৫-৫০ লাখ টাকা খরচ করে কিডনি ক্রয় করেন উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘এই টাকার মাত্র ৪-৫ লাখ টাকা পায় প্রতারিত ডোনার। ৫-১০ লাখ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় দেশের অভ্যন্তরে সক্রিয় দালাল, অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট এবং অন্য প্রতারকদের মধ্যে। বাকি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ভোগ করে বিদেশে অবস্থানরত সিন্ডিকেট।’
র্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোস্তাক আহমেদ আরও জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দারিদ্রসীমার নিচের অসহায় মানুষগুলোকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই চক্র। কখনও তারা বলে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে একটির বেশি কিডনি দরকার নেই। কখনও মিথ্যা আশ্বাস দেয় যে চিকিৎসার খরচ তারা বহন করবে। টাকার লোভে কিডনি হারিয়ে প্রায়ই অকর্মন্য হয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে অসহায় মানুষগুলো।
যেভাবে ফাঁদে পেতে কিডনি নিতো চক্রটি
র্যাব-১ অধিনায়ক জানান, চক্রটি চারটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালী রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। দেশে থাকা হোতা আনিছ ঢাকায় বসে বিদেশে ডোনার পাঠানোর বিষয় তদারকি করে। চক্রের তৃতীয় দলটির সদস্য আরিফ এবং তুহিন প্রথম দলের চাহিদা মোতাবেক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অর্থের বিনিময়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য ডোনার হতে প্রলুব্ধ করে।
এর পর ঢাকায় নিয়ে এসে বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রত্যাশী রোগীর সঙ্গে ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ব্লাড ম্যাচিং এবং অন্যান্য টেস্টে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের উপযুক্ততা নিশ্চিত হলে চতুর্থ গ্রুপটির হোতা সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক সাইফুল ইসলাম প্রলোভনের শিকার ভুক্তভোগী কিডনি ডোনারদের পাসপোর্ট, ভিসা প্রসেসিং এবং ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভুক্তভোগী ডোনারকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করেন।
ডোনার নিয়ে কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের মূলহোতা আনিছুর রহমান বিমানবন্দর অথবা স্থলবন্দর দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রবেশ করেন এবং হাসপাতালের ডকুমেন্টেশন, অস্ত্রপচারসহ যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ভিকটিমদের বৈধ-অবৈধ উপায়ে বিমান বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত এলাকা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠান।
চক্রের অন্যতম সদস্য সাইফুল ইসলাম সাহেবানা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মালিক। তিনি কিডনি ডোনারদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট ব্যাংক অ্যান্ডোর্সমেন্ট, মেডিকেল ডকুমেন্টস, ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে থাকেন। যেসব ডকুমেন্টের ঘাটতি থাকে, তাদের কাগজপত্র জাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করে থাকেন। ২০২১ সালের র্যাব তাকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক