কারাবন্দি আলেমদের ছেড়ে দিন নইলে গদি থাকবে না
২২ জুলাই ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম | আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৩, ০৫:২৬ পিএম
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, সময় শেষ হয়ে এসেছে। আলেমদের আর জেলে রাখতে পারবেন না। আজকে কারাবন্দি আলেমের মুক্তির দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আমি সরকারকে বলবো, যদি নিজেদের ভালো চান, অবিলম্বে কারাবন্দি সকল আলেমকে মুক্তি দিন। হয়রানি বন্ধ করুন। না হলে অবস্থা করুণ হবে। তোমাদের জন্য বঙ্গোপসাগর আছে। গদিসহ সাগরে নিক্ষেপ করা হবে। যদি গদি টেকাতে চাও। অতি দ্রুত আলেমদের মুক্তি দাও। জাতির কাছে ক্ষমা চাও। নিজেদের মুক্তির পথ বের করো। আজ শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কাজী বশির মিলানায়তনে শায়খুল হাদিস পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি সকল ওলামায়ে কেরামের মুক্তি, দেশব্যাপী আলেম ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আলেমদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় করণীয় নির্ধারণে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
হেফাজত আমীর আরো বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ইনসাফ কায়েমের জন্য। অথচ দেশে ন্যায় ও ইনসাফ কল্পনাও করা যায় না। সকলের অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটাধিকার ছাড়া আগামী নির্বাচন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা দেশকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলবে। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিবেন না। সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করুন। তিনি বলেন, আলেমরা আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও মুক্তি পাচ্ছে না। নতুন মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হচ্ছে। কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। জুমার খুৎবা ও ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণ করার বারবার চেষ্টা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে।
ওলামা সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বলেন, যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে জালেম সরকারের পতনের এক দফার দাবিতে রাজপথে নামতে হবে। জেল জুলুম মিথ্যা মামলা দিয়ে গণমানুষের আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। নিদর্লীয় নিরেপক্স সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। এই মুহররম মাস হক ও বাতেলের মধ্যে পার্থক্যের মাস। এই জালেম সরকার দেশ জাতি ও মাসের অধিকার বুঝে না । এরা শুধু ক্ষমতা বুঝে। সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে কারাবন্দি আলেমদের মুক্তিসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে প্রয়োজনে বঙ্গভবন অভিমুখে লংমার্চ করতে হবে।
সমাবেশের সভাপতি ও শায়খুল হাদীস পরিষদের সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আজকে ওলামায়ে কেরামদের ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। বের হলেই গ্রেফতার করা হয়। গোটা দেশ আজ কারারুদ্ধ। শুধু মামুনুল হক নয়, গোটা দেশকে কারারুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করতে হবে। আমাদের যেটুকু সামর্থ আছে তা নিয়ে নামতে হবে। আপনারা যদি বাঁচতে চান অতি দ্রুত কারাবন্দিদের মুক্তি দেন। সরকারকে সতর্ক করবো। এখনো সময় আছে। মুক্তি দেন। অন্যথায় আপনাদের মুক্তি মিলবে না। যারা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নিবেন। তাদের বিরুদ্ধে আলেমরা গর্জে উঠবে। এসময় কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আমাদের প্রথম কর্মসূচি হলো মামুনুল হকসহ আলেমদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী ও জেলা উপজেলায় স্মারকলিপি দেয়া হবে। কথা না শুনলে রাজপথে নামতে বাধ্য হবো। মসমাবেশে হেফাজত ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান বলেন, আমার বিশ্বাস আজকে ঐক্য হয়ে গেছে। সকল আলেমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কারাবন্দি ওলামাদের মুক্তি চায়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আলেমদের মুক্তি করা যাবে না। আলেমদের আদালতে হাজিরা দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থা। আমরা চাই মামলা প্রত্যাহার করা হোক। তাদের হাজিরা থেকে মুক্ত দেয়া হোক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মামুনুল হককে মুক্ত করতে চাই। মুক্ত করে ছাড়বো। হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগরের সাবেক সভাপতি ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব বলেন, রাস্তাঘাটে যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে গেফতার করা হয়েছে। অনেককে নামাজ থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি ১৯ মাস জেল খেটেছি। কি দোষ করেছিলাম। কি অন্যায় করেছিলাম। আমরা কি এদেশের ঘর জামাই। আমরা বন্যায় ভেসে আসিনি। আমরা যেখানে যাই ফুলের মালা দেয়া হয়। তোমরা যেখানে যাও সেখানে জুতার মালা দেয়া হয়। জনগণ তোমাদের বয়কট করেছে। শাপলা চত্বরের মতো আরেকবার ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। মাঠে না নামলে আলেমদের মুক্তি দিবে না। মুক্তি কাদের কাছে চাবো। যাদের ক্ষমতা হারানো দামামা বেজে গেছে। আমাদের যদি রাজপথে নামতে হয় আর পালানোর জায়গা পাবেন না। সমাবেশে শায়খুল হাদিস পরিষদের সভাপতি তাফাজ্জুল হক আজিজ বলেন, ঐক্যের বিকল্প নেই। আমাদের একদফা হলো আলেম ওলামেদের মুক্তি। সরকারকে বলবো, আপনারা যদি সম্মানের সাথে বিদায় নিতে চান। তাহলে মামুনুল হকসহ সকল আলেমদের মুক্তি দেন। না হলে আন্দোলনের গণবিস্ফোরণ সৃষ্টি হবে। তখন আর সামাল দিতে পারবেন না।
খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের আমীর মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী বলেন, আমাদের ঐক্যের সূচনা হয়েছে। এই সরকার খুনি সরকার। ২০১৩ সালে আলেমদের শহীদ করেছে। এই সরকার পাগল হয়ে গেছে। তাদের পাবনা পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী এক কথা মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায় না। আপনার আমাদের নেতাদের মুক্তি দিতেই হবে। না হলে গদি ছাড়তে হবে। সে সময় আর বেশিদূর নয়। খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন বলেন, একদিন মামুনুল হক মুক্তি পাবে। কারাগার পড়ে থাকবে। একদিন আপনাদের পতন হবে। তখন আপনার কারাগারে যাবেন। কেউ ঠেকাতে পারবে না। কারণ জালেমদের আল্লাহ ক্ষমা করে না।
সদ্য কারামুক্ত হেফাজত ইসলামের সাবেক সহ সভাপতি মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন রাজি বলেন, আমরা যদি নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারি তাহলে দেশের এমন কোন সরকার নেই আলেমদের বন্দি করে রাখবে। আমাদের মধ্যে ঐক্য নেই। তারা আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। আমাদের ঐক্য নেই বলেই তারা সুযোগ নিচ্ছে। নিজের মধ্যে ঐক্যের ভিত মজবুত করতে পারলে তাহলে খাঁচা ভেঙে আমাদের নেতাদের মুক্ত করতে পারবো। বাংলাদেশে নিয়ে বিদেশীরা ছেলেখেলা করছে। আমি চাই সরকারের পরিবর্তন হোক। আমরা চাই যারাই ক্ষমতায় আসুক তাদের উলামাদের পক্ষে থাকতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই আমরা তাদের আমরা সমর্থন দিবো।
হেফাজত ইসলামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আজকে আমেল ওলামাদের মুক্তি করতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না। তাদের মুক্ত করতে হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। সোজা আঙ্গুলে ঘি ওঠে না। আঙ্গুল বাঁকা করতে হবে। তবেই সরকার বাধ্য হবে আলেমদের মুক্তি দিতে। রক্ত বহু দিয়েছি। আর রক্ত দিতে চাই না। এখন প্রতিশোধ নিতে চাই।
মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনের সঞ্চালনায় ওলামা সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন, খতমে নবুওয়াত সংরক্ষণ কমিটির আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা ইসমাইল নূরপুরী, নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নায়েবে আমীর আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, নায়েবে আমীর মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা ফোরকান উল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মাওলানা তফাজ্জুল হক আজিজ, মাওলানা আবু তাহের জেহাদী, মাওলানা আব্দুল হক, মাওলানা ফেফায়েতুল্লাহ আযহারী, সদ্য কারামুক্ত মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা জাবের কাসেমী, মাওলানা আব্দুল আলিম নেজামী।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ
হাজীগঞ্জে কুমড়ার বাম্পার ফলন দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ
ইবিতে 'কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা বিধানে করণীয়' শীর্ষক কর্মশালা
সারা দেশে কমবে রাতের তাপমাত্রা,জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস
ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের হার
সোনা দিয়েছে ‘নীল ভাই’ ১১ কোটি হারাল বিজয় কুমার
অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন মামুন
সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
পবিপ্রবিতে ছাত্রদলের উদ্যোগে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন
জন্ম নিবন্ধন না থাকায় যৌনপল্লীর অনেক শিশু স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না
উইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ
মালানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা নিয়ে মুখ খুললেন তামিম
কালিগঞ্জে গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল
ব্যাংকারদের জন্য সুখবর
ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে পপ তারকা তাতালুর মৃত্যুদণ্ড
ভক্তদের জন্য নতুন সুখবর দিলেন টম ক্রুজ
আসাদ দিবস : দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান তারেক রহমানের
শহীদ আসাদ মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন : প্রধান উপদেষ্টা
ফুলপুরে তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত