‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাংস্কৃতিক জাগরণের আহ্বান’:জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনায় বক্তারা
১৬ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক জাগরণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা। বুধবার (১৬ আগস্ট) জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট আয়োজিত জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের অনেক সবক আমরা বিভিন্ন জায়গায় থেকে শুনি। এই দেশের মানুষ মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। যারা আমাদের সবক দিতে আসেন তাদের কারোই এতো ত্যাগের ইতিহাস নেই। যারা আমাদের মানবাধিকারের কথা বলে তাদের কণ্ঠ ১৯৭১ সালে কোথায় ছিল? ওই সময় তারা তো মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের পক্ষে ছিল। ‘৭৫-এ তারা তো সরাসরি যুক্ত ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে। সেদিন যারা নিহত হয়েছেন তাদের মানবাধিতার ছিল না? বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না? ২০০৪’র ২১ আগস্টে ১৯৭৫’র অসমাপ্ত কাজ করার জন্য সেই ঘাতকরা শেখ হাসিনাকে শুধু হত্যা করা নয়, সমগ্র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছিল। সেদিন আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হয়েছিল। তাদের মানবাধিকার ছিল না? ২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে মাসের পর মাস এই বাংলাদেশে হত্যা ধর্ষণের যে ভয়াবহতা আমরা দেখেছি, তাদের কোনো মানাবধিকার ছিল না? মানবাধিকার শুধু আছে সেই সব ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধ যারা করেছে তাদের। কারণ তাদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য সেই সব দেশের কর্তাব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বারংবার ফোন করেছেন, চাপ প্রয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, রাজনীতিতে শিষ্টাচার এর প্রয়োজন রয়েছে। যে রাজনীতি আমাদের দেশপ্রেম শিক্ষা দেয়। সব ক্ষেত্রেই শিষ্টাচারের প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির শিষ্টাচার বোঝে না। তারা অনন্তপক্ষে ২১ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। ৭৬ কেজি বোমা, ৪৮ কেজি বোমা, গ্রেনেড হামলা, সরাসরি গুলি কিছুই বাদ দেয়া হয়নি। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটা রাজনীতি আর কোনটা অপরাজনীতি। এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র চর্চার প্রধান অন্তরায় বিএনপি ও জামায়াত। ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিচার না করার জন্য ইনডেমনিটি আইন জারি এবং সংবিধান পরিবর্তন করা। আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়া ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করে যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রিপরিষদ সদস্য করা হয়- এসব কিছুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পরস্পর বিরোধী দুটো আদর্শিক ধারায় বিভক্ত করা হয়েছে। এটাই হলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাঙালির হাজার বছরের পথ চলায় নিষ্পেষণ, নির্যাতন সেসব ছিল। কিন্তু বাঙালির মুক্তির একটা আশা-প্রত্যাশার আস্বাদন ছিল। সেই মুক্তির পথ খুঁজেছে মানুষ। সেই পথের যে দিশা দেবেন সেই মানুষটির জন্মের জন্য হাজার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে নিপীড়িত বাঙালিকে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় নিভৃত পল্লীতে যার জন্ম হয়েছে। চোখে সমস্যা ছিল। কিন্তু অসম্ভব প্রতিভাবান পারিবারিক ঐতিহ্যে বেড়ে ওঠেন তিনি। পড়াশোনা করে একটি নিজস্ব ধীশক্তি অর্জন করে অসাম্প্রদায়িকতার ঘ্রানে সমৃদ্ধ হয়ে অত:পর প্রস্তুতি নিলেন রাজনীতির মহাকাব্য রচনার। আর তাঁর বুকে বেঁধে থাকা অদম্য স্পৃহায় একটি জাতিরাষ্ট্র সৃষ্টি। মূল লক্ষ্য হাজার বছরের শোষিত বাঙালিকে মুক্তির দোরগোড়ায় নিয়ে যেয়ে বাঙালির আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা। বঙ্গবন্ধু মুজিব পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন বাঙালির মুক্তির জন্য। পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাঁকে কারারুদ্ধ করেছেন লড়াইয়ের সময়ে। তাঁর চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি গেরিলা যোদ্ধা হয়েছেন। ৩০ লক্ষ মানুষ আত্মাহুতি দিয়েছেন। দু’লক্ষ মা-বোনের নির্যাতন সয়ে সয়ে বাংলার মানচিত্র অংকিত হয়েছে। সেসময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বিশ^জনমতের ভয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেয়ার সাহস পায়নি।’
ড. মশিউর রহমান আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। নতুন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করলেন। এটি যায় বিশে^র নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের পক্ষে। আর উঠতি ধনিক শ্রেণির বিপক্ষে। এই ধনিক শ্রেণি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুকে। কিন্তু বাঙালির বুকে ওই বিপ্লব গেঁথে গেঁথে যে জায়গা তিনি করে নিয়ে গেছেন- হত্যাকারীরা জানতো না বাঙালির আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে আরও গভীরভাবে মনে রাখবে নিজেদের বুকে। কেননা এই জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত হতে হতে প্রিয় বাংলাকে বিশ^ দরবারে মর্যাদাবান, আত্মপ্রতিষ্ঠার দুর্দমনীয় শক্তিশালী এক অপূর্ব বাংলাদেশ গড়ে তুলি মুক্তিযুদ্ধ আর বাংলাদেশের আবহনে।’
আলোচনা সভার শুরুতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিস্টিংগুইশ প্রফেসর ড. মো. মাহবুবর রহমান, আলোচক ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার আলোচনা সভা শেষে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন। এছাড়া আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন দপ্তরের বিভাগীয় প্রধান, অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার