জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শেখ হাসিনা: রিজভী
৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শাসকগোষ্ঠীর হাতে চরমভাবে মানবতা লঙ্ঘনের শিকার হয়েও, দেশব্যাপী রুখে দাঁড়াচ্ছে নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী জনগণ। খালি হাতে রাজপথে নেমে আসছে, আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। খুনিদের প্রতিহত করছে কখনো রাস্তায় পড়ে থাকা ইট-পাথর দিয়ে, আবার কখনোবা অসীম সাহসে আওয়ামী অপশক্তির হাতিয়ার ছিনিয়ে। কিন্তু বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালাচ্ছে পুলিশ। জনগণের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি শব্দগুলোতেই আঁতকে উঠে বিরোধীদলকে বিনাশ করতে অস্ত্র নিয়ে নেমেছে সরকারের বাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে সকল হত্যাকা- সরকারের মাস্টার প্ল্যান। মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গায়ের জোরে আওয়ামী দুঃশাসন চলছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তাদের অনাচারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ। এমনই একটি পরিস্থিতি তৈরি করছেনে শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের সমালোচনায় ভাষা প্রয়োগ করা মানেই ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে তাই বন্দুকের নল তাক করা থাকে। অংশগ্রহণকারীদের ভাগ্যে থাকে আটক বা কারাবরণের জুলুম। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আক্রমণ নাৎসি জার্মানির গেস্টটাপোরাই চমকে উঠবে। বিস্তৃত পরিসর জুড়ে দেশবাসী মানুষের মিছিল প্রত্যক্ষ করেছে এক মহাসমুদ্র। এই দৃশ্য সহ্য করতে পারেনি সরকারের পেটোয়া বাহিনীরা। সমাবেশের মানুষদের লক্ষ্য করে খই ফোটানোর মতো বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে থাকে। নিহত, আহত আর গ্রেফতারের নির্বিচারে জুলুমের নারকীয় দৃশ্যের সূচনা হয়। রক্তরঞ্জিত করা হয় সমগ্র সমাবেশকে।
তিনি বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবি মহাসমাবেশে হামলা ও দলের মহাসচিবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘন্টা অবরোধের প্রথম দিনে শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালিয়েছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও কৃষকদল নেতা বিল্লাল মিয়া পুলিশ গুলি করে এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়ী চাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
রিজভী বলেন, বিএনপির চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তা-বলীলা চালাচ্ছে, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লাখ-লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত। বিএনপির নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির একটি উচ্ছিষ্টভোগী অংশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে বুলেটের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। সশস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গণবিরোধী আক্রমণে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের এই দুষ্কৃতিকারীরা আঘাত করছে স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা, বাঁশ, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, কাঠ ও চাপাতি দিয়ে। যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেফতার ও রায় নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্তে, রক্ত ও জীবন দিয়ে যাচ্ছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কারণ, লুন্ঠিত মানবতাকে ধারণ করেই আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমাদের অহিংস ও শান্তিপূর্ণ এই সংগ্রাম প্রিয় বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য। এই লড়াই ১৮ কোটি মানুষের সত্যিকার স্বাধীনতার জন্য।
হামলা-মামলা-গ্রেফতারের বিবরণ: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণ অবরোধ চলাকালে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি মো. বিল্লাল মিয়াকে পুলিশ নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও অনেক নেতাকর্মী পুলিশের ছোড়া গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালবাজারে অবরোধ চলাকালে পুলিশ গাড়ী চাপা দিয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য দিলু আহমদ জিলুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
গ্রেফতার : দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিরাজগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুকে না পেয়ে তার আপন বড় ভাই ডা. শামসুল হুদাকে তার বাসা থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় জোরপূর্বক গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব আমান উল্লাহ আমানকে বাড়িতে না পেয়ে তার আপন বড় ভাই মো. শহীদুল্লাহ মুছুল্লীকে মারধর করে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ঢাকা মহানগর উত্তরে শাহআলী থানা বিএনপি আহ্বায়ক এসএম কায়সার পাপ্পু, ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি হাফেজ সাইফুর রহমান লিটন, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, বিএনপি নেতা সাইফুল মালিক, মো. সোলায়মান, মো. নওশাদ হোসেন, মো. সেন্টু, বিমানবন্দর থানার মো. আব্দুর রউফ, তুরাগের মো. আতাউর রহমান, মিরপুরের মো. তুহিন মিয়া, রূপনগরের মো. মানিক মিয়া, মো. শফিক ও মো. ফারুককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী থানার ৬৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দীন খান রিপন, সবুজবাগের মো. জাহাঙ্গীর আলম, কোতয়ালীর আব্দুল হান্নান, মো. সালাউদ্দীন, খিলগাঁওয়ের মোজহারুল ইসলাম বেলাল, ওলিউল্লাহ, নিউমার্কেটের আব্দুস সাত্তার, কদমতলীর ফয়েজ আহমেদসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও মহানগর দক্ষিণ ওলামা দলের সদস্য সচিব মাওলানা রফিকুল ইসলামকে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালামের ব্যক্তিগত সহকারী ফারুক উল ইসলাম সেলিমকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। যুবদলের মানিক গাজী, মেহেদী হাসান জনি, মোঃ ঝন্টু, এম এ হাশেম, মেহেরপুরের জাহিদুল হক জাহিদ, মোশারফ হোসেন তপু, রায়হান মুজিব, ফেনীর শামসুল আলম, দাগনভূইয়ার মো. আফসারসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ও বনানী থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুর আলমকে বাসায় না পেয়ে তার বাবাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
এছাড়া ময়মনসিংহ জেলায় ১০ জন, নেত্রকোণায় ১০ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, সিরাজগঞ্জে ৮৯ জন, শেরপুরে ৩০ জন, গাজীপুরে ১জন, মেহেরপুরে ১০ জন, নোয়াখালীতে ১জন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ১ জন, পিরোজপুরে ৬৫ জন, কক্সবাজারে ১১জন, খাগড়াছড়িতে ৯ জন, শরিয়তপুরে ২৩ জন, ঝিনাইদহে ১৮ জন, চাঁদপুরে ২জন, নওগাঁয়ে প্রায় ২ শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
রুহুল কবির রিজভী জানান, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ, ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর অবরোধকে কেন্দ্র করে বিএনপির বিরুদ্ধে ৪৬টি মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ২৮০ জনকে। এসময় হামলায় আহত হয়েছে ৩ হাজার ৩৫০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ জন নেতাকর্মী।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রভিটা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ স্ত্রী-ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ভারতীয় উৎসবে অংশ নেবে ছয় ইরানি চলচ্চিত্র
বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রপের সংঘর্ষ, ৮ বাড়ীতে আগ্নিসংযোগ, আহত ২০
হাসিনার পরিবারকে প্লট বরাদ্দে ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে
অভিনেত্রীর নেকলেস চুরি, চোর কি তবে রং মিস্ত্রী?
ভিভো এক্স২০০ এর নজর কাড়া পাঁচ দিক
ভৈরব থানার লুট হওয়া অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের মামলায় আসামী অন্তর, ষড়যন্ত্র অব্যাহত
সিলেট কোম্পানীগঞ্জে কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ
সুনামগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
মালয়াম অভিনেত্রীকে যৌন হয়রানি, আটক স্বর্ণ ব্যবসায়ী
‘উন্নয়ন চাইলেও গণতন্ত্র দরকার সংস্কার চাইলেও গণতন্ত্র দরকার’বিএনপি শীর্ষ নেতা নজরুল ইসলাম খান
কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে চলবে বিডিআর বিদ্রোহ মামলা
বিশ্বাসের ঘরে ষড়যন্ত্র চলছে: ফারুক
ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা
সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
বিয়ের পূর্বে স্ত্রীর অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকা প্রসঙ্গে।
লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া
টিম কম্বিনেশনের জন্য দলের বাইরে ছিলাম: রিশাদ
ফুলপুরে তারুণ্যের উৎসব উদযাপনে ফুটবল প্রতিযোগিতায় রুপসী বিজয়ী