শুধু বহিরাগত নয়, হামলাকারীদের বড় অংশ সৈকতের অনুসারী
১৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৪ এএম | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:১৪ এএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের রমজানের তাৎপর্য নিয়ে 'প্রোডাক্টিভ রমাদান' শীর্ষক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। সংবাদমাধ্যমগুলোতে ঘটনা পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত সংবাদে হামলার ঘটনায় "বহিরাগত ছাত্রলীগের" কথা উল্লেখ করা হলেও মূলত তাদের বেশিরভাগই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মূলত নিজেকে আড়াল করার অপচেষ্টা থেকে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম ওরফে সুজনকে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই এ হামলার অগ্রভাগে সুজনসহ তার কিছু বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম এসেছে। তবে বেশিরভাগ হামলাকারীই ছিল সৈকতের অনুসারী শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় প্রথমে সুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আবাসিক ভবন "বঙ্গবন্ধু টাওয়ার" এর নিচ তলায় থাকা মসজিদে গিয়ে ওই সেমিনারে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের বাইরে ডেকে আনেন। পরবর্তীতে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরার আওতার বাইরে আনলে ভবনের মূল ফটকে এনে শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন ঢাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য মতে হামলায় জড়িত যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন-বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের পাঠাগার উপ সম্পাদক খালিদ হাসান নিলয়, একই হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত ইসলাম প্লাবন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আক্তারুল করিম রুবেল, বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপ-সম্পাদক শাকিবুল ইসলাম সুজন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক মুশফিকুর রহমান, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম খান ও একই হলের আরেক সহ-সভাপতি রাশেদুজ্জামান রনি, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম একই হলের শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাহি, কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ সুলতান অপু, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাওহিদুল ইসলাম রিসাল, একই শাখার উপ-দপ্তর সম্পাদক নাঈমুর রহমান ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাহিদ ভূঁইয়া।
হামলা পরবর্তী সময়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমে বলেন, "প্রোডাক্টিভ রমাদান" শীর্ষক আলোচনা সভায় যারা ছিলেন তারা ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাথে যুক্ত। এবং তারা সেখানে রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা চালানোর উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছেন। ফলে ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের এ অপতৎপরতা রুখে দেয়। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে তানভীর হাসান সৈকতের বলা " ধর্মপ্রাণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা" সবাই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সবাই রাজনীতিতে তাঁর অনুসারী বলে জানা গেছে। ফলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন সৈকতের নির্দেশেই এ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
এদিকে হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। অভিযুক্ত শাকিবুল ইসলাম সুজনকে সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেলেও তিনি ইনকিলাবকে বলেন, তখন আমি আমার হলেই ছিলাম। এ হামলার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আরেক অভিযুক্ত নাঈমুর রহমান বলেন, শুধু ওই ঘটনা কেন, ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের ঘটনায় আপনি আমার সম্পৃক্ততা পাবেন না। শুধু ছাত্রলীগ করি বলে তারা আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলছেন।
আরেক অভিযুক্ত জহুরুল হক হল ছাত্রলীগ নেতা রাকিবুল হাসান রাহি বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি তখন আমি সেখানে ছিলাম না। রোজা রেখে দুপুরের পর আমি আমার নিজ হলে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।
হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও ঘটনাস্থলে থাকার কথা স্বীকার করেন তানভীর হাসান সৈকতের আরেক অনুসারী কবি জসীমউদ্দীন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ সুলতান অপু। তিনি বলেন, আমার অসুস্থতার জন্য ঢাবি মেডিক্যালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সেখান থেকে আসার পথে হট্টগোল দেখে আমি বাইক দাঁড় করিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়াই। এছাড়া আমি কিছুই করিনি। চিকিৎসা নেওয়ার কোন প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি শুধু নাম এন্ট্রি করে চলে আসছি। ডাক্তার মৌখিকভাবে কিছু ওষুধ খেতে বলে দিয়েছে। তবে জানা যায়, ঢাবি মেডিক্যালে মৌখিকভাবে প্রেসক্রিপশন দেওয়ার কোনো নজির নেই।
এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের উপর করা এ হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৬জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ নিয়ে দফায় দফায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডজনখানেক ছাত্র সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর ও শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগও দেয় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত