কর বৃদ্ধিতে মোবাইল খাতে নেতিবাচক প্রভাব
১২ জুন ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম
আগামী অর্থবছরে যে মোবাইল সেবা ব্যবহারের ওপর অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং সিম সংযোগের উপর ১০০ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মুসক) আরোপ করা হলো তার ফলে মোবাইল গ্রাহক এবং এই শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর আগে এ ধরনের ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, সেবার মূল্য বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকরা মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দেন। ফলে একদিকে যেমন রাজস্ব আহরণ কমে যায় অপরদিকে সরকারের কোষাগারেও প্রদেয় অর্থের পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার সিম সংযোগের উপর ভ্যাট ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করার কারণে মোবাইল গ্রাহকের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে যাবে। এজন্য সারচার্জ ও সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে এসোসিয়েশ্ব অফ মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অফ বাংলাদেশ (এমটব)।
বুধবার (১২ জুন) সংগঠনটির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরের প্রতিনিধিরা সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বাংলালিংক ডিজিটালের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান, রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম, গ্রামীণফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন এবং এমটব মহাসচিব লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার।
সাহেদ আলম বলেন, সরকারের রাজস্ব প্রয়োজন, এজন্য তারা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেটি সংগ্রহ করা নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু কর বৃদ্ধি করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেয়ে ব্যবহার বাড়িয়েও সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। আর একটি শিল্পে কর হওয়া উচিত যৌক্তিক পর্যায়ে। না হলে সেই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। তবে করের পরিবর্তে ডাটা ব্যবহার বাড়িয়ে এই রাজস্ব আদায় সম্ভব। এমনিতেই এই খাতে সর্বোচ্চ করারোপ করা আছে। এখন নতুন করে কর বৃদ্ধির ফলে মানুষ ব্যবহার কমিয়ে দিবে। সিম ট্যাক্স বৃদ্ধিতে প্রত্যাশিত গ্রোথ হবে না। এতে যেমন টেলিকম খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সরকার রাজস্ব হারাবে, পাশাপাশি সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেটিতেও প্রভাব ফেলবে। তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে সারচার্জ ও সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সাহেদ আলম আরো বলেন, মোবাইল খাতের নতুন করে করারোপ না করে তাকে যৌক্তিক অবস্থায় আনতে এনবিআরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকাররের কাছে বার বার অনুরোধ করা হলেও এবার সরকার কর বৃদ্ধি করল অর্থনীতিতে যার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি। এর আগে আমরা সরকারের কাছে সুপারিশমালা তুলে ধরেছিলাম কিন্তু তার কোনকিছুই মানা হয়নি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য আনুযায়ী, দেশে ১৯ কোটি ২২ লাখ সিমকার্ডধারীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন ১২ কোটির বেশি গ্রাহক। বর্তমানে দৈনিন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাড়িয়েছে ইন্টারনেট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম থেকে শুরু করে পড়াশোনা, কেনাকাটা, দাফতরিক কার্জকম- সব ক্ষেত্রেই বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহার। অথচ স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এখনো টেলিকম সেবার বাইরে রয়েছে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী। আমাদের প্রতিবেশি দেশের তুলানায় কয়েকগুন পিছিয়ে রয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে ডাটা ব্যবহারেও। তবে এ খাতে গ্রাহক বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজস্ব বৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল মিলিয়ে একজন মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডাটা ব্যবহার করেন। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মাসে গ্রাহক ব্যবহার করে ২৭-২৯ জিবি। বাংলাদেশের গ্রাহকরা ভারতের তুলনায় ডাটা ব্যবহারে কয়েকগুন পিছিয়ে আছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্রাহক পর্যায়ের মোবাইল ইন্টারনেট সেবার কর পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মালেশিয়ায় ৬ শতাংশ, থাইল্যান্ড ৭ শতাংশ, নাইজেরিয়া ৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১১ শতাংশ, ফিলিপাইন ১২ শতাংশ, ক্যাম্বোডিয়া ১৩ শতাংশ, ভারত ১৮ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপাল ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশ ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং পাকিস্তান ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ কর আরোপিত রয়েছে।
তাইমুর রহমান বলেন, নতুন করে গ্রাহকদের উপর আরও করের বোঝা বৃদ্ধির ফলে এখন ১০০ টাকার মোবাইল সেবা ব্যবহারে গ্রাহকদের সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা। যেমন- কেউ ১০০ টাকা ব্যবহার করতে চাইলে খরচ হবে ১৩৯ টাকা। আবার ১০০ টাকা খরচ করলে ব্যবহার করতে পারবে ৭২ টাকা। যা হবে সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবোর্চ্চ।
তিনি বলেন, করনীতি স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের বিপরীত দিকেই হাঁটছে। কাজেই মোবাইল সেবার চলমান উন্নয়ন এবং গ্রাহক পর্যায়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রসার বেগবান করতে যৌক্তিক কর কাঠামোর কোন বিকল্প নেই।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত