সেই জল্লাদের করুণ পরিণতি
২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১২:০৫ এএম
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যু-দণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিসহ ৬০ জনের ফাঁসি কার্যকর করা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া মারা গেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের মানবতা-বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে আলোচনায় আসেন জল্লাদ শাহজাহান। ৩২ বছর কারাভোগের পর গত বছরের ১৮ জুন দুপুরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এরপর ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিয়ে করেন ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি সে সংসার। এরপর থেকে ভুগছিলেন একাকীত্বে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভাড়া ছিলেন ব্যাচেলর হিসেবে। সংসার ভেঙে যাওয়ার পর শাহজাহান বলেছিলেন, বড় আশা করে সংসার পেতেছিলাম। কিন্তু স্ত্রী ও তার স্বজনরা আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। বিয়ের দেড় মাস পর আমার কাছ থেকে ধার নেয়া ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারসহ পালিয়ে যায়।
জল্লাদ শাহজাহানের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সাথী আক্তার নামের ওই তরুণীকে বিয়ে করেন শাহজাহান। কিন্তু ৫৩ দিনের মাথায় তার ঘর ছেড়ে যান সাথী। আদালতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলাও দেন। এরপর ওই তরুণী এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতারণার একটি মামলা করেন শাহজাহান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কারামুক্তির পর শাহজাহান ভূঁইয়া ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলাম-বাজারে বসবাস শুরু করেন। এরপর সেখানে একটি চায়ের দোকান দেন। একদিন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় কেরানীগঞ্জের কদম-তলী থেকে কোনা-খালায় যাচ্ছিলেন। গাড়ির ভেতর তিনি একটি ভ্যানিটি ব্যাগ পান।
পরে ব্যাগের ভেতর থাকা কাগজে লেখা ছিল একটি মোবাইল নম্বর। সেই নম্বরে ফোন করে শাহজাহান ভ্যানিটি ব্যাগের মালিককে ব্যাগ নিয়ে যেতে বলেন। পরে ব্যাগের মালিক ২৩ বছরের সাথী নামে এক তরুণী তার বান্ধবীকে নিয়ে কেরানীগঞ্জের গোলাম-বাজারে হাজির হন। পরে তরুণীর মা শাহিনূর বেগমের সঙ্গে শাহজাহানের পরিচয় হয়।
সূত্রে আরও জানা যায়, মোবাইলের পরিচয়ের পর তরুণীর সঙ্গে তিনি বেশ কয়েকবার কথা বলেন। একপর্যায়ে তরুণী ও তার মা জুরাইন থেকে কেরানীগঞ্জের গোলাম-বাজারে চলে আসেন। শাহজাহান ভূঁইয়ার বাসায় রান্নার কাজ নেন তিনি। পরিচয়ের দেড় মাস পর ২১ ডিসেম্বর সাথীর সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে শাহজাহানের বিয়ে হয়।
কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মাথায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সাথী শাহজাহানের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে নালিশি মামলা করেন।
সেই মামলায় দাবি করেন, বিয়ের উপঢৌকন হিসেবে শাহজাহানকে এক লাখ টাকার মালামাল দেয় তার পরিবার। পাশাপাশি নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকেন শাহজাহান ভূঁইয়া। একই সঙ্গে শাহজাহান তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
সাথীর সঙ্গে শাহজাহানের করা অঙ্গীকার-নামায় উল্লেখ রয়েছে, সাথী ১০ লাখ টাকা শাহজাহানের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছেন। বিয়ে বলবৎ রাখতে অপারগ হলে তিনি ১০ লাখ টাকা শাহজাহানকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। বিয়ের চার মাসের মাথায় শাহজাহান স্ত্রী সাথীর নামে ২ শতাংশ জমি হেবা (দান) করবেন। স্ত্রী হিসেবে স্বামী শাহজাহানের আদেশ মেনে চলবেন। স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সম্পর্ক উন্নয়নসহ সব ধরনের কাজ করতে বাধ্য থাকবেন। অঙ্গীকার-নামায় সাথী ও শাহজাহানের স্বাক্ষর রয়েছে।
জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর বিষয়ে বোন ফিরোজা বেগম জানান, গত বছরের শেষের দিকে একজন অল্পবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকে শাহজাহানের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর থেকে শাহজাহান অনেক চিন্তা করতো। মেয়েটি ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আরও ভেঙে পড়ে শাহজাহান।
এর আগে ৩২ বছর কারাভোগের পর গত বছরের ১৮ জুন দুপুরে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
জানা যায়, শাহজাহানের মোট ৪২ বছর সাজা হয়েছিল। এর মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিনের সাজা রেয়াত পান। প্রায় ৩২ বছরের সাজা শেষে মুক্তি পান তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যু-দণ্ডপ্রাপ্ত বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জের একটি মামলায় শাহজাহানকে গ্রেফতার করে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলে রাখা হয় তাকে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত