অবশেষে ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের আত্মসাত করা ৪৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে এই অর্থ ফেরত দেন তিনি। আজ বুধবার শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, গত ২৩ জুন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংগঠনের সভাপতি বরাবর আবেদন করেন শ্রমিক নেতারা। এ অভিযোগে ওসমান আলীকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। পরে ওসমান আলীর অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের নির্দেশ দেন সভাপতি। তার নির্দেশনা অনুযায়ী গত সোমবার মতিঝিলে শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন সংগঠনটির নেতারা।
শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে এই বৈঠকে ওসমান আলীও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওসমান আলী ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলে প্রমাণ হয়। ওসমান আলী সংগঠনের টাকা নিজ ব্যাংক হিসেবে রেখেছেন বলে স্বীকারোক্তি দেন। পরে নিজ ব্যাংক হিসেব নম্বর থেকে ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার ১৫৪ টাকার একটি চেক সাদিকুর রহমান হিরুর মাধ্যমে ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা নূরুল আমিন নূরু ও শহিদুল্লাহ চৌধুরী শাহিনের কাছে হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকার হিসেব বাকি আছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হিসাব-নিকাশ চলছে।
এর আগে গত ২৩ জুন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সংগঠনের সভাপতি বরাবর আবেদন করেন শ্রমিক নেতারা। এ অভিযোগে ওসমান আলীকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। আবেদনটিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকা জেলা বাস-মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস ও কোচ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন এবং মিরপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এ ছাড়া ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিও আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন। আবেদনে বলা হয়, শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা ও ট্রেড ইউনিয়নের বিধিমালা শ্রমিক সংগঠনকে অবহিত করা। কিন্তু ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। সেই বিভেদকে পুঁজি করে ঢাকা মহানগরীর শ্রমিক ইউনিয়নের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ জুন ‘শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ওসমান আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ’ শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সূত্র জানায়, সংবাদ প্রকাশের পর ওসমান আলীর অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকের নির্দেশ দেন সংগঠনটির সভাপতি। এরপর গত সোমবার মতিঝিলে শ্রমিক ফেডারেশনের প্রধান কার্যালয়ে বৈঠক করেন সংগঠনটির নেতারা। শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাদিকুর রহমান হিরুর সভাপতিত্বে বৈঠকে ওসমান আলীও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি মো. সাদিকুর রহমান হিরু বলেন, গত সোমবার ওসমান আলীর আত্মসাৎ করা টাকা ফেরত দেওয়া নিয়েই বৈঠক করা হয়েছিল। তিনি নিজের ব্যাংক হিসাবে টাকা রেখেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সংগঠনের টাকা ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে রাখার নিয়ম নেই। বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ওসমান আলী ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে ওসমান আলী ৪৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকার হিসাব দিয়েছেন। তখন তার কাছ থেকে এই টাকার চেক নেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা আরও হিসাব করে দেখা হবে।###