ধর্মঘট ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়লো কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা
০৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৪ পিএম
সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল সংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের রায় প্রত্যাহার ও ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহবাগ অবরোধ করেন তারা। অবরোধের ১ ঘন্টা পর বিকাল সাড়ে ৫টায় আগামীকাল থেকে সারাদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।
এর আগে আজ শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিলে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে। বিকাল ৩টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে নিজস্ব ব্যানার পোস্টারসহ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো জয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি হয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে আজিমপুর, নীলক্ষেত হয়ে ফের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শাহবাগ এসে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুর আরেকবার”, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, “কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’'- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন৷ আন্দোলনের অগ্রভাগে কাফনের কাপড় পরে স্লোগান দিতে দেখা যায় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। আন্দোলনকারীদের হাতে জাতীয় পতাকা ও কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত পেস্টুনও দেখা যায়।
কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে আমরা সারাদেশে 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি পালন করব। আমরা শুধু শাহবাগে বসে থাকবো না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ থেকে সমস্ত মহাসড়কগুলো অবরোধ করবো। ইতোমধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরে যাব না।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই ২০১৮ সালের পরিপত্র কেন বাতিল করা হলো? শিক্ষকদের আন্দোলন কিন্তু বন্ধ হয়ে যাবে, আমাদের আন্দোলন বন্ধ হবে না। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ও সাইন্স লাইব্রেরী খুলে দেওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যদি না খুলেন তাহলে আমরা নিজ দায়িত্বে এটু খুলে নিতে বাধ্য হব।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার ভেবেছে আমরা একদিন দুইদিন আন্দোলন করব এবং একদিন ক্লান্ত হয়ে যাব। আমরা এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদেরকে যদি বাধ্য করা হয় আমরা প্রয়োজনে সারাদেশে হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আজকে ছাত্র সমাজকে আদালতের মুখোমুখি করা হচ্ছে, এ দায় নির্বাহী বিভাগ এড়াতে পারে না। এসময় হলে হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধাদানের কারণে ছাত্রলীগের প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে নাহিদ বলেন, আমরা কিন্তু হলের তালা ভাঙতে জানি। শিক্ষার্থীদের যদি বাধা দেওয়া হয় এর জবাব আপনাদের দিতে হবে। যদি আমরা চাকরি না পাই তাহলে আপনাদেরও চাকরি থাকবে না।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ঢাবি শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, মাত্র ২ লাখ মানুষের জন্য আমাদের মতো কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের উপর এই কোটা নামক বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। কোটার পক্ষে যুক্তি দেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উদ্দেশ্যে এই শিক্ষার্থী বলেন, ধরে নিলাম স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রাপ্য সম্মান পান নাই। স্বাধীনতার অনেক পরে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো এই ব্যর্থতা তো রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র কেন তাদের প্রাপ্য সুবিধা দিতে পারেননি? কেন স্বাধীনতার এত বছর পর এসে আমাদের এই জেনারেশনের উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হবে?
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে উচ্চ আদালতের রায় আপাতত বহাল রাখে আপিল বিভাগ। ফলে কোটাবিরোধী আন্দোলন দিনদিন আরো তীব্র হচ্ছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন শিক্ষার্থীরা। রোধ- বৃষ্টি, ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে নিয়মিত রাজপথে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবেশে ৪ দফা দাবি তুলে ধরে আসছেন। দাবিগুলো হলো- ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ১৮' এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে একদিকে কাফনের কাপড় পরিধান করে কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের ন্যায় বিভিন্ন হলের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দিচ্ছে ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সময়েই মধুর ক্যান্টিনে প্রোগ্রাম করছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মির্জাপুরে ৭ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের লিফলেট বিতরণ
শেরপুরে ফুটপাত কাম ড্রেন, ইউনিক সোল্ডার ও সড়কবাতি কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
মানববন্ধন থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি খেলাফত আন্দোলনের
মাদারীপুরে আইনজীবীদের শীতকালীন ক্রিকেট খেলা
কমলনগরে হার্ভেস্টার মেশিনের ধাক্কায় শিশু নিহত
পদ ফিরে পেলেন মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দল আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধা
রেস্তোরাঁর নামেও এস আলম ঋণ নেয় ২৩৪ কোটি টাকা
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত
টিউলিপের পদত্যাগ: এবার তোপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
দৌলতপুরে ইউসুফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২
চবি প্রশাসনের শুভবুদ্ধি কামনায় 'হেদায়েত' সভা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনে আমাদের সম্পর্ক হোঁচট খাবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাগমারায় বাঁইগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলা
ভুয়া ‘ব্র্যাড পিট’-এর প্রেমে পড়ে ৯ কোটি টাকা খোয়ালেন ফরাসি মহিলা
কসবায় পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে কিশোর খুন
সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক খুন
ইবি শিক্ষার্থীকে মারধর, গড়াই ও রূপসা পরিবহনের পাঁচ বাস আটক
বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সমন্বয় সভা
পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর গ্রহণ চলছে, ব্যাপক সাড়া
বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি, সেচ ও সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত