বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত ঢাকা
০২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম
বায়তুল মোকাররম, শাহবাগ, শহীদ মিনার, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়, উত্তরা, আফতাবনগর, রামপুরা, খিলগাঁও, বাড্ডা, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ইপিবি চত্বর, বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ রাজাধানীর বিভিন্নস্থানে হাজার হাজার আন্দোলনকারী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সহিংসতা ও সংঘর্ষে হত্যা এবং গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছেন মানুষ।
শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার (২ আগস্ট) বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ের পর সেখান থেকে শাহবাগের উদ্দেশে রওনা হন বিক্ষোভকারীরা।
মিছিলটি পল্টন, প্রেসক্লাবে, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগে এসে জড়ো হয়। সেখান থেকে মিছিলটি জাতীয় জাদুঘর হয়ে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের টিএসসি দিকে যেতে চাইলে শাহবাগ থানার পুলিশ আটকে দেয়। তখন পুলিশের সঙ্গে কয়েকজন আন্দোলনকারীর ধস্তাধস্তি হতে দেখা যায়।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে টাঙানো ছাত্রলীগের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলতে দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। এছাড়া মৎস্য ভবন এলাকায় সড়কে আওয়ামী লীগের কিছু ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের।
আন্দোলনকারীদের এ সময় রাস্তায় সরকারের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন।
শাহবাগ মোড়ে আটকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। পরে মিছিলটি আবার প্রেস ক্লাব হয়ে বাইতুল মোকাররমের দিকে ফিরে যায়।
এছাড়া 'ছাত্র জনতা হত্যার দায়ে' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। আজ বিকেল তিনটা থেকে এ জমায়েত শুরু হয়।
এ সময় পল্টন মোড় থেকে কদমচত্বর পর্যন্ত মানুষের সমাগম হয়। অন্যদিকে শতাধিক পুলিশ সদস্যকেও সতর্ক অবস্থায় দেখা যায়।
এ জমায়েতে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'ছাত্রহত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। এ সরকার বিগত ১৫ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে ক্ষতি করেছে। সরকারের পদত্যাগের পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই।'
স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
এর আগে বৃষ্টিতে ভিজে ঢাকার উত্তরা ও আফতাবনগরে আজ সকালে মিছিল করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান।
সকাল ১১টার দিকে বৃষ্টিতে ভিজে উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের অনেকেই পরনে স্কুলের ইউনিফর্ম ছিল।
উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে বিকেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে পুলিশকে রায়ট কার ও এপিসি (আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়া) নিয়ে টহল দিতে দেখা যায়।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে মিরপুরের ইসিবি চত্তরে বিক্ষোভ করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সেখানে তারা 'তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার — কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার; 'জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে'; তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে,; 'আমার ভাই মরলো কেন, বিচার চাই বিচার চাই' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এ সময় পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ইসিবি চত্ত্বরের ফুটওভার ব্রিজ ও আশপাশের দেওয়াল শিক্ষার্থীদের লিখতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা ইসিবি চত্ত্বরে বিক্ষোভ শেষ করে মাটিকাটার দিকে রওনা দেন। পুলিশ তাদেরকে রাস্তা খালি করে জায়গা করে দেয়।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১১টার পরে আফতাবনগরে মিছিল বের করেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল নিয়ে রামপুরা ব্রিজ পেরিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে আবার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসে সমাবেশ করেন তারা। মিছিলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গলায় পরিচয়পত্র ছিল। মিছিলের সামনে ও পেছনে ছিল পুলিশ।
ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমাবেশে শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংঘাতে হতাহতের ঘটনায় বিচার দাবি করেন। এ সময় তারা গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দেন।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফা দাবিতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে গায়েবানা জানাযা ও গণমিছিল করেছেন কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীরা নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে এ কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় নর্থ সাউথের ২ নং গেইট থেকে মিছিল নিয়ে বসুন্ধরা বি ব্লক হয়ে, এআইইউবি প্রদক্ষিণ করে আবার ২ নং গেইটে এসে শেষ হয়। এর আগে ২ নং গেইটে গায়েবানা জানাযা পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলন আমাদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু পুলিশ আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে। আমরা বিচারের দাবিতে রাজপথে দাঁড়িয়েছি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক একাত্মতা পোষণ করে গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা থেকে জড়ো হয়ে নর্থ সাউথের সামনে বিভিন্ন দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকতে থাকেন।
পুলিশের এপিসিতে লাল রং
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বাংলাদেশ পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানে (এপিসি) লাল রং লাগিয়ে দিয়েছেন।
শুক্রবার এপিসিটি মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে দাঁড় করানো ছিল বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর আলোকচিত্রী সৈয়দ জাকির হোসেন।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারটিতে উঠে এটির উইন্ডশিল্ডে লাল রংয়ের স্প্রে-পেইন্টিং শুরু করেন।
এ সময় এপিসির ভেতরে পুলিশের সদস্যরা ছিলেন। তবে তারা শিক্ষার্থীদের বাধা দেননি। শিক্ষার্থীরা এপিসির পাশে গ্রাফিতিও আঁকেন।
কবি-লেখকদের মানববন্ধন
অন্যদিকে রাজধানীর দেশব্যাপী নিপীড়ন ও হত্যার প্রতিবাদে বেলা ১১টায় বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের ব্যনারে কবি ও লেখকেরা মানববন্ধন করেন।
এ সময় লেখক বকুল আশরাফ বলেন, 'আমরা সেই লেখকদের ঘৃণা করি যারা এই সংকটেও চুপ ছিলেন। আমি কবি হিসেবে আমাকে ঘৃণা করিম কারণ আমি এই গণহত্যা, নিপীড়নের যথাযথ প্রতিবাদ করতে পারিনি। আমার কলম এই সংকটের চিত্র তুলে ধরতে পারেনি।'
বৃষ্টির মধ্যেই আন্দোলনে হত্যার প্রতিবাদ এবং 'নির্বিচারে' ছাত্রদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে, গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ-এর ব্যানারে মিডিয়া ও থিয়েটারের শিল্পীরা ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের সামনে সমাবেশ করেন।
এছাড়া ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের সামনে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি অঙ্কন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার দেশব্যাপী প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণহত্যা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামীকাল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহীদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্রজনতার গণমিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুর থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার কষ্টিপাথর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে হস্তান্তর
অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দলে শর্ট ও হার্ডি, কামিন্সকে নিয়ে শঙ্কা
'ব্লু অরিজিন' রকেট উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন,শুভকামনা জানালেন ইলন মাস্ক
কমলনগরে ট্রাক্টরট্রলির চাপায় চটপটি বিক্রেতার মৃত্যু
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে বাস চলাচল শুরু
ঝিনাইদহে ২৬ টি দোকান দুঃসাহসিক চুরি টাকা ও মালামাল নিয়ে চম্পট
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে প্যানেল
বগুড়ায় মটরসাইকেল - ভটভটি সংঘর্ষে ব্যাংক কর্মকর্তা নিহত
‘জমজমের’ নামে ট্যাপের পানি বিক্রি করছিলেন এক প্রতারক , আয় ৩০ কোটি !
মাদকব্যবসা নিয়ে দু-পক্ষের সংঘর্ষ-বোমা হামলা-ভাঙচুর, আহত ২০
জুলাই-আগস্ট গণহত্যা : হাসিনাসহ জড়িতদের গুরুত্বপূর্ণ কল রেকর্ড প্রসিকিউশনের হাতে
কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন
ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি
তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?
রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের
টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল
লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু
কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা
সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ