কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে স্বৈরাচার হাসিনা পতনের আন্দোলনে রুপ নিলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়া, আন্দোলন নস্যাৎ করাসহ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে গণভবনে দেখা করে অশুভ ষড়যন্ত্রসহ শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক সহ কর্মকর্তারা। এসময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাদেকা হালিমসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের ১৩জন শিক্ষক গণভবনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর দুইদিন আগে ৩ আগস্ট গণভবনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য এলিট ষড়যন্ত্রে কুশীলবদের সঙ্গ দেন তারা। এ বৈঠকে অশুভ শক্তির কবল থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে উপস্থিত শিক্ষকরা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অঙ্গীকার অনুযায়ী পরদিন ৪ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থীরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে চাইলে তা দেয়া হয় নি এবং আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের নানা হুমকিসহ অনুৎসাহিত করেছেন।

বিজয় অর্জনের পর সাধারণ শিক্ষার্থী সেকল শিক্ষকদের আওয়ামী দালাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে, স্ব স্ব পদ থেকে পদত্যাগের দাবী তুলেছে, অনেককে পদত্যাগের জন্য বাধ্য করেছে । এছাড়াও তাদের অর্জিত নৈতিকতা,জ্ঞান,গবেষণা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ৩ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম সহ ১৩ শিক্ষকের গণভবনে গিয়ে পরোক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে বেইমানী ও নানা ষড়যন্ত্রে কুশীলবদের সহযোগিতা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। তবে গণভবনের যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও যাননি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী। আমন্ত্রিত শিক্ষকদের মধ্য ছিলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.আইনুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রকল্যাণ পরিচালক উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জি এম আল আমিন, আইটি পরিচালক কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শওকত জাহাঙ্গীর, সাবেক হল প্রভোস্ট পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা , ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক কামাল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. নুরে আলম আবদুল্লাহ,পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইউজিসি সদস্য মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাবেক সহকারী প্রক্টর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কে এম সুজাউদ্দীন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন বলেন, যে সকল শিক্ষকরা আমাদের ছাত্র সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার পক্ষ নিয়েছে তাদের শিক্ষক বলতে আমাদের লজ্জা হয়। ৩ আগস্ট যারা গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে অভয় দিয়ে আসছেন তাদের নৈতিক অবস্থার উপর আমরা ছেড়ে দিলাম তারা ছাত্রসমাজের সাথে কি ব্যবহার করেছে। শুধু তাই নয় গণভবনে যাওয়ার একদিন পরে ৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পাসে একটি মানব-বন্ধন করে শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল।

মানববন্ধনে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকেরা ছাত্র জনতার এক দফা আন্দোলনকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে সকলকে ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, এই বাংলাদেশে অরাজকতা সৃষ্টি করবেন না। দেশকে যারা আফগানিস্তান বানাতে চান, তাদের ফাঁদে পা দেবেন না। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।

শিক্ষকদের অভয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীর মধ্যে ছাত্রলীগে ট্যাগ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি নেওয়া শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারিরাও ছাত্র জনতার ১ দফা দাবির বিরুদ্ধে কম্পাসে লাঠি পাইপ নিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির, সালাউদ্দিন মোল্লা, কামরুল হাসান, সাগর হোসেন, হিমাদ্রি শেখর মন্ডল, আব্দুল মালেক, আলতাফ হোসেন, জামাল হোসেন, স্ট্রেট কামাল হোসেন, সাইদুর রহমান রনি, আবদুল্লাহ আল মামুন, মিলন সহ অনেকে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে জঙ্গিদের আন্দোলন বলে আখ্যা দেন। এবং যারা আন্দোলন করেছেন তাদের সকলকে পাকিস্তানের পেতাত্মা হিসেবে অবিহিত করেন তারা।