পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত অসম্ভব
০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৯ পিএম
শিশুর প্রাথমিক সুরক্ষা ও শিক্ষা নিশ্চিত করে পরিবার; নিরাপদ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে সমাজ; আর আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মাধ্যমে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন করে রাষ্ট্র। তাই পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
রাজধানীতে শিশু অধিকার সপ্তাহের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব বলেছেন বক্তারা। শিশুদের ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদিদের অংশগ্রহণে ‘সকল শিশুর জন্য শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। বুধবার সকাল ১১টায় একাডেমির সভাকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন।
সাদিয়া জামানের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিশু একাডেমির প্রোগ্রাম অফিসার এ এস এম নাজমুল হক। সভাপতিত্ব করেন পাবনা এনসিটিএফ সভাপতি শিশু সালমান রশিদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা ও শিশু অধিকার বিষয়ক পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন।
আবদুল্লা আল মামুন বলেন, শিশুরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা সমাজ ও রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে, যা শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আবদুল্লা আল মামুন বলেন, বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার। এছাড়া শিশুশ্রম আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, দরিদ্র পরিবারের সহায়তা নিশ্চিত করে শিশুদের স্কুলে পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন এই বিশেষজ্ঞ।
শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের এই কর্মকর্তা বলেন, শিশুদের জন্য সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা হটলাইন এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা যেকোনো ধরনের হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হলে সহায়তা নিতে পারে। এছাড়াও আইনের কঠোর প্রয়োগ, সচেতনতা বৃদ্ধি, কাউন্সেলিং ব্যবস্থা করা এবং বাল্যবিয়ে ও যৌন নির্যাতন বন্ধ করতে শিক্ষার প্রসার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, টিকা দেওয়া, বিনোদনমূলক কার্যক্রম, সৃজনশীলতার বিকাশ বিষয়েও গুরুত্ব দেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাজমুল হক বলেন, শিশুদের জন্য একটা সেইফগার্ডিং পলিসি তৈরির ব্যাপারে আমরা কাজ করতে চাই। আমরা সব উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে চাই। শিশু অধিকার সনদ নিয়েও আমরা আরো বেশি কাজ করতে চাই।
শিশু বিকাশ কেন্দ্র আজিমপুরের শিশু নিলুফা আক্তার মিম বলে, আমার ক্লাসের সহপাঠীর বিয়ে হয়ে গেছে। পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছে। হয়তো খেলাধুলাও করতে পারছে না।
এনসিটিএফ শিশু প্রতিনিধি ফাহিম মুনতাসির বলে, গ্রামের মাতব্বরদের দেখা যায় তারা বাল্য বিয়ের বিচার করে। কিন্তু সেটা বেশিরভাগ সময় শিশুদের বিপক্ষে যায়।
শিশু রাজিয়া খাতুন তাদের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে কালচারাল শিক্ষক নিয়োগ দিলে ভালো হয় যায়। তাদের শুধু গানের শিক্ষক আছে।
এসওএস এর প্রতিনিধি নুসরাত জাহান বলেন আমরা পিতৃমাতৃহীন শিশুদের নিয়ে কাজ করি। অনেককে আমরা বড় করছি যাদের কোন ধরনের আইডেন্টিটি নাই। কিন্তু এ ছাড়াও অনেক শিশু নিয়ে কাজ করার আছে। ইদানীং বাবা মায়ের আলাদা হওয়ার পর তাদের শিশুদের আমরা দেখি কেমন মানসিক অবস্থার মধ্যে পড়ে। এই শিশুদের কথা হয়তো কেউ ভাবেওনা। পজেটিভ প্যারেন্টিং নিয়েও অনেক কাজ করা উচিৎ। পরিবারে বাবা মায়ের দায়িত্ব সম্পর্কে তাদের জানানো দরকার।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি রাশেদা আক্তার বলেন, আমি চাই আমাদের শিশুরা উন্নয়নমূলক মানসিকতা নিয়ে যেন বড় হতে পারে। দেখা যায় যারা ভালো স্কুলে পড়াশুনা করছে তাদের নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আমাদের থাকে না, আমরা মনে করি তারা সুবিধাপ্রাপ্ত। কিন্তু এসব শিশুকে নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা থাকতে হবে।
সিআইপিআরবির প্রতিনিধি জোবায়ের আলম মনে করে একটা শিশু ভালোভাবে বেঁচে থাকলেই অধিকারের কথা আসবে। জোবায়ের বলে, আমরা পনিতে ডুবা থেকে শিশুদের বাঁচাতে কাজ করি। আমি মনে করি এব্যাপারে সবাইকে আরো বেশি সচেতন করা উচিত।
মেহেরপুর এনসিটিএফ সভাপতি ফাহিম মুনতাসির বলে, শিশুদের নিয়ে যে কাজগুলো হয় তা ঠিকমত হচ্ছে কি না তার তদারকি হওয়া প্রয়োজন।
মিরপুর থেকে আসা শিশু খাদিজা বলে, আমাদের যাদের মা-বাবা লেখাপড়া করতে পারেননি, সেই মা-বাবাদের নিয়ে কিছু করা যায় কি না ভাবতে পারি।
ইউনিসেফের প্রতিনিধি ইফফাত ফারহানা বলেন, আমাদের নেগেটিভ কিছু কালচারাল প্র্যাকটিস আছে। যেমন আমরা বাবা-মায়েরা শিশুদের জন্ম দিয়ে আমাদের সম্পত্তি মনে করি। আমরা চাই তারা একদম আমাদের মন মতো চলুক, যা তাদের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। আমরা উন্নয়নকর্মীরা অনেক দিন ধরে শিশুদের জন্য আলাদা অধিদপ্তর চেয়ে আসছি, আমি মনে করি নতুন সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
সভাপতির বক্তব্যে শিশু সালমান রশিদ বলে, আমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণ করতে চাই। প্রতিটি শিশুর নিরাপদ শৈশব বিনির্মাণে আমি সবার সহযোগিতা চাই। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিটি পর্যায়ে শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে গেলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এমন একটি ছবি শুধু ভাবায় না, কাঁদায়ও: মুশফিকুল ফজল আনসারী
কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০বছরপূর্তি বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত
কিশোরগঞ্জে ধুমধামে করে এক অসহায় মেয়ের বিয়ে দিলেন ছাত্রদল নেতা
দিল্লিতে দূষণ-কুয়াশার কারণে ভ্রমণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ,যাত্রীদের ভোগান্তি
বাগেরহাটে লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
নিকলীতে দশ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, আরও যাবেন ২৮ জন’
১০ কোটিতে মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা টিউলিপের চাচীর
জামিন বাতিল করে সাদপন্থিদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
পাকিস্তানকে ছেড়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে তালেবান?
টাঙ্গাইলে জিয়া মঞ্চে ৩১ দফা নিয়ে লিফলেট বিতরণ
পলাতক ওসিকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি, অভিযানে সেনাবাহিনী-পুলিশ-র্যাব
কানাডার লিবারেল পার্টি ৯ মার্চ নতুন নেতা নির্বাচন করবে
স্বৈরাচারের সহযোগীদের রাজনৈতিক দলে ঢোকালে প্রতিরোধ করা হবে : ড. রিপন
দশ বছর পর ফের পুরষ্কৃত মালালা, ফিরছেন পাকিস্তান
ভারতে এক মাসে এক গ্রাহক পেলেন ২১০ কোটির বিদ্যুৎ বিলের কপি
সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কিশোরী নিহত
সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী জনগণ, রাজনৈতিক দলের কোনো ভূমিকা নেই
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মৃদু শৈত্য প্রবাহের কবলে গোট জেলা
খলনায়ক এআই, একধাক্কায় বেকার হতে চলেছেন ২ লাখ কর্মী