বিতর্কিত পুলিশ সদস্যদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার হয়নি, ধরাছোঁয়ার বাইরে তারা
০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৬ পিএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১৬ পিএম
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিতর্কিত ও হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত ছিলেন পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে গিয়ে নতুন করে বিতর্কিত হয়েছেন আরও অনেকেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের হয়রানি, সমন্বয়কদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ নির্বিচারে গুলি করে শতশত ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশদাতা বিতর্কিত এসব কর্মকর্তা এখনো লাপাত্তা।
তবে কর্মে না ফেরা পুলিশের পলাতক কর্মকর্তাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ৩৮ মামলার আসামি ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ। তাকে এখনো চাকরিচ্যুত করা হয়নি। পলাতক হিসেবে হারুনকে পুলিশ সদর দপ্তরের তালিকায় এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
এর পরই আরেক বিতর্কিত পুলিশের কর্মকর্তা বিল্পব কুমার সরকার। গত ১২ সেপ্টেম্বরে গণমাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে- লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে চলে গেছেন ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
দাবি করা হয়, গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে কোনো এক সময় তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। পাচারকারীদের এসংক্রান্ত কয়েকটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত পার হওয়ার জন্য বিপ্লব কুমারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা নেয়া হয় বলেও জানা যায়।
এদিকে পুলিশের উদ্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে এখনো অনেকেই দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি। এদের মধ্যে সাবেক ডিএমপি কমিশনার গোলাম ফারুক।
গত ২০ আগস্ট ব্যাঙ্ককের উদ্দেশে রওনা হওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান গোলাম ফারুক। ডিবিকে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি জানানো হলে তার দেশ ত্যাগের বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। পরে অবশ্য তিনি বিমানবন্দর থেকে বাসায় ফিরে যান। খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে ডিএমপির কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ১ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এর মধ্যে ডিআইজি একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি সাতজন, পুলিশ সুপার দুইজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার পাঁচজন, পুলিশ পরিদর্শক পাঁচজন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক সাতজন এবং কনস্টেবল ১৩৬ জন।
কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামান (স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসরের আবেদন করেছেন), ডিএমপির সাবেক যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ডিবির সাবেক যুগ্ম কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার এস এম মেহেদী হাসান, রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার উত্তম কুমার পাল এবং পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
পুলিশ সুপার থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আত্মগোপনে থাকা ৮ কর্মকর্তা হলেন আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, আরপিএমপি ডিবির উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ নূর আলম, ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মফিজুর রহমান ও ইফতেখার মাহমুদ(গ্রেপ্তার), আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান ও আল ইমরান হোসেন এবং সিরাজগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার রানা।
পরিদর্শক পদে কর্মকর্তারা হলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা থানার সাবেক ওসি মাহফুজার রহমান, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার পরিদর্শক খাদেমুল বাহার বিন আবেদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর সার্কেলের পরিদর্শক ইউসুফ হাসান, ডিএমপির সাবেক পরিদর্শক জাকির হোসাইন ও ঢাকা জেলা পুলিশের পরিদর্শক আরাফাত হোসেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি করে হত্যার অভিযোগে সারা দেশে এখন পর্যন্ত পুলিশের সাবেক তিন আইজিসহ ১৮৪ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ডিএমপির ৯৯ জন আছেন। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি। এর বাইরেও অনেক পুলিশ সদস্য নানা কৌশল ও কারণ দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের আলটিমেটাম সত্ত্বেও এখনো কাজে যোগ দেননি অনেক প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা। পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা এসব কর্মকর্তাকে অপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে খোঁজা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার (২ অক্টোবর) আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর জানিয়েছেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনো যোগদান করেননি তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের আমরা পুলিশ বলব না, তাদের ক্রিমিনাল বলব।
যোগদান না করা প্রসঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পলাতক বা আত্মগোপনে থাকা কর্মকর্তাদের অপরাধী হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তাদের বিরুদ্ধে হবে বিভাগীয় মামলা।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যারা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলবে। যাদের বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা মিলবে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সৎ ভাইকে ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যায় অভিযুক্ত বাবার আত্মসমর্পণ
৭ ডিগ্রীতে পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা,বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ
শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর বাড়িয়ে অধ্যাদেশ জারি
সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত : পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে বিজিবির কড়া প্রতিবাদ
নিকোলাস মাদুরোর তৃতীয় শপথ, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের আশঙ্কা
সুপার কাপ ফাইনালে বার্সা-রিয়াল মহারণ
কার সাথে সংসার করছেন জয়া?
২৪ বিপ্লবের শহীদদের মতো বিডিআরের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
টানা চার ম্যাচে রোনালদোর গোল,নতুন বছর জয় দিয়ে শুরু নাসেরের
শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র দেওয়া সম্ভব নয় : উপদেষ্টা মাহফুজ
টঙ্গীবাড়ীতে মসজিদের ইমামকে কুপিয়ে জখম
জার্মানিতে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন
চীনে ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনআইডি : আইন পর্যালোচনায় রোববার বৈঠকে বসছে ইসি
কুমিল্লায় জনসম্মুখে শিশুকে দুগ্ধপান
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই
টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর কথা ভাবছেন কিয়ার স্টারমার
আগুনে পুড়ল ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ, চলছে লুটপাট
লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল, প্রবল বাতাসে পরিস্থিতি ভয়াবহ
কাতারের আমিরের উদ্দেশে ফেসবুকে যা লিখলেন তারেক রহমান