৪ দফা দাবিতে সচেতন নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দের সমাবেশ

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা:

০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০২ পিএম | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০২ পিএম

 

ভারতে প্রিয় নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে মানহানীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ, কুরআন-সুন্নাহ’র ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কার, দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও ভারত-হিন্দুত্ববাদ তোষণ বন্ধের ৪ দফা দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দরা।

বুধবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর মালিবাগ মোড় ফালইয়াফরাহু চত্বরে সমাবেশ করেন সচেতন নাগরিক সমাজ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তারা তাদের ৪ দফা বাস্তবায়নের দাবী উপস্থাপন করেন।

সচেতন নাগরিক সমাজের বক্তাগণ বলেন, ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা আমাদের প্রিয় নবীকে নিয়ে মানহানী অব্যাহত রেখেছে। সারা বাংলাদেশের জনগণ এর কঠিন প্রতিবাদ করার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিবাদ করেনি। সরকার ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে দ্রুত তার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে ঐ দেশকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজের বক্তারাগণ বলেন, সম্প্রতি সরকার সংবিধান সংস্কারে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেছে। সংবিধান যারাই সংস্কার করুক, সংবিধানে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দ্বীনি অনুভূতির প্রতিফলন থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ মেনেই সংবিধানের ধারা-উপধারা প্রণয়ন করতে হবে, কিছুতেই কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন কিছু প্রবেশ করানো যাবে না।

বক্তাগণ বলেন, বর্তমান সরকার বিভিন্ন শব্দ কৌশল ব্যবহার করে দেশে অনৈসলামিক বিষয় চালু করছে। যেমন- চলচ্চিত্রে সেন্সর বোর্ড বাতিল করে সার্টিফিকেশন বোর্ড চালুর মাধ্যমে পর্নোগ্রাফীকে বৈধ করা, অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ গঠনের নাম দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে সমকামীতা চালু করা, যার অংশ বিশেষ। বক্তাগণ বলেন, জনগণ এখন বোকা নয়। তারা এসব ধোকাবাজি ধরতে পারে। গত আওয়ামী সরকার “কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না” এই ওয়াদা দিয়ে ক্ষমতায় এসে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন পাশ করেছিলো। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে উৎখাত করে। বর্তমান সরকারও যদি ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের পথে হাটে তবে তাদেরকেও আওয়ামীলীগের পরিণতি বরণ করতে হবে।

সচেতন নাগরিক সমাজের বক্তাগণ বলেন, দ্রব্যমূ্ল্য বৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। মাছ-গোশতের দাম বাড়ায় এতদিন গরীব-মধ্যবিত্তের আমিষের চাহিদা পূরণ করতো ডিম। সেই একটি ডিমের দাম এখন ১৫ টাকা। আগে চালের দাম বাড়লে বলা হতো আলু খান। এখন চাল-আলুর দাম সমানে সমান। মানুষ তাহলে খাবে কী? বর্তমান জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতিতে অনেক পরিবার খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন করা ছাড়া উপায় নেই।

বক্তাগণ বলেন, বাজারে যখন সব দ্রব্যের দাম রেকর্ড ছড়িয়েছে, তখন সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রচার করছে, মূল্যস্ফীতি নাকি কমেছে! বক্তাগণ বলেন, জনগণের কষ্টের সাথে তামাশা করে এ ধরনের প্রতারণাপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা সরকারের মোটেও ঠিক হয়নি।

সচেতন নাগরিক সমাজের বক্তারাগণ বলেন, বর্তমান সরকার ভারত ও হিন্দুত্ববাদ বিরোধী বড় বড় কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের ভারত ও হিন্দুত্ববাদ তোষণ আগের মতই আছে। বাংলাদেশের জনগণ যেখানে দামের কারণে ইলিশ পায় না, সেখানে ভারতে কম মূল্যে ৩ হাজার টন ইলিশ রফতানি করা হয়। সীমান্তে এখনও ভারত বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা অব্যাহত রেখেছে। কয়েকদিন আগেও কুমিল্লা সীমান্তে এক বাংলাদেশীকে হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে ভারত। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ সরকার এর কোন প্রতিবাদ করেছে বলে আমরা খবর পাইনি।

বক্তাগণ বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কদমতলা এলাকায় এখন মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হচ্ছে। খবরে প্রকাশ পেয়েছে, দূর্গা পূজার জন্য মুসলমানদের থেকে চাঁদাবাজি করতে যায় হিন্দুত্ববাদীরা। মুসলমানরা পূজায় চাঁদা না দেয়ায় মুসলমানদের দোকানপাট লুটপাট করে হিন্দুত্ববাদীরা। এতে মুলসলমানরা প্রতিবাদ করলে উল্টো মুসলমানদের গুলি করে শহীদ করে ভারতীয় পুলিশ। এসময় উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের বাড়িঘর লুটপাট করে, মসজিদে হামলা করে পবিত্র কুরআন শরীফে আগুন ধরিয়ে দেয়। নাউযুবিল্লাহ। এই খবর সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মুসলমানরা কিছু বললেই বর্তমান সরকারের অনেকে বলছে, “মুসলমানদের এসব বিষয়ে কথা বলার দরকার নেই। মুসলমানদের এখন চুপ থাকতে হবে। নয়ত ভারত ইস্যু পাবে।”- এটা কেমন কথা? মুসলমানরা হচ্ছে একটি দেহের মত। সারা বিশ্বের যে প্রান্তেই মুসলমানরা আঘাতপ্রাপ্ত হোক, সকল মুসলমান এর জন্য আঘাতপ্রাপ্ত হবে। কিন্তু মুসলমানরা কথা বলতে গেলেই তাদের চুপ থাকতে বলা হচ্ছে। যারা বাক স্বাধীনতার কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে, তারাই এখন মুসলমানদের বাক স্বাধীনতা হরণ করতে চায়। তাহলে বিষয়টি কেমন হলো?

বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)এ মুসলমানদের দ্বীনি মাহফিলে বাধা হচ্ছে, অপরদিকে হিন্দুদের পুলিশ-আর্মি পাহারা দিয়ে পূজা করতে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ-সেনা পাহারা দিয়ে যেভাবে পূজা মণ্ডপগুলো রক্ষা করা হচ্ছে, সেভাবে কেন মাজার শরীফগুলোকে নিরাপত্তা দেয়া হলো না? প্রশ্ন করেন বক্তারা।

বক্তাগণ বলেন, দূর্গা ছুটি বাড়িয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। আওয়ামী সরকার যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাদ দিয়ে ভারত ও হিন্দুত্ববাদীদের খুশি করায় মনোযোগী ছিলো, বর্তমান সরকারের কার্যক্রমও একই। বক্তাগণ বর্তমান সরকারকে আওয়ামীলীগের পথে হেটে আওয়ামীলীগের পরিণতি যেন বরণ না করতে হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করেন। সমাবেশে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে শতাধিক জনগণ উপস্থিত ছিলো।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন
কেরানীগঞ্জে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য  অপহৃত  উদ্ধার : অপহরণকারী  গ্রেফতার
ভেঙ্গে পড়লো উত্তরা আব্দুল্লাহপুরের অরক্ষিত বেইলি সেতু
খুনিদের বিচার ও সাদ পন্থীদের কার্যক্রম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে
পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসন রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে : আমিনুল হক
আরও

আরও পড়ুন

মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির

মাদারীপুরে গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল বাতাসে জনজীবন স্থবির

দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা

দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে বাঁধা

দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ

দুবাই মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীর অ্যাওয়ার্ড লাভ

'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?

'বরবাদ' সিনেমা শতকোটির গন্ডি পেরিয়ে যাবে! কি বললেন শাকিব?

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বাস চাপায় মা ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত

দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স

দোয়ারাবাজারে ভারতেীয় সীমান্তে ৩০০ বস্তা রশুন আটক করেছে টাস্কফোর্স

রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রাজশাহীতে নেসকোর ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানারকম হয়রানীর প্রতিবাদে বিক্ষোভ

শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার

শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার

যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা

যুবদলের উদ্যোগে ৩১ দফা অবহিতকরণে আলোচনা সভা

এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন

এমাজউদ্দীন আহমদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বজনীন

বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা

বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা

ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ

ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ

দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত

দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত

গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু

১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু

৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর

৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর

আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী

দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান

দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান

পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা

পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা