ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতার ৩ দফা দাবিতে সমাবেশ

Daily Inqilab মোঃ শামসুল আলম খান

২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

 

পবিত্র দ্বীন-ইসলামের আলোকে শিক্ষা সংস্কার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হ্রাস এবং নবনির্মিত বাসা-বাড়িতে আবাসিক গ্যাস সংযোগের দাবিতে সমাবেশ করেছে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র-জনতা।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর মালিবাগ মোড় ফালইয়াফরাহু চত্বরে তারা এ সমাবেশে পালন করেন।

বক্তারা বলেন, আমাদের প্রথম দাবী হলো শিক্ষা সংস্কার। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের এই মেরুদন্ড মজবুত করতে পরাধীনতার শৃঙ্খল-মুক্ত শিক্ষা অতীব প্রয়োজনীয়। ফ্যাসিবাদের দাসত্বের বিপরীতে শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমানের এই বাংলাদেশের শিক্ষানীতি, শিক্ষাক্রম বা কারিকুলাম, শিক্ষাসূচী বা সিলেবাস এবং পাঠ্য পুস্তক সব কিছুই পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার আলোকেই হতে হবে। শিক্ষাক্রমে আরবী ভাষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।

 

এ দেশের শিক্ষানীতিতে এমন কোন নীতি রাখা যাবে না, যা পবিত্র দ্বীন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক । পাঠ্যক্রমে নূরে মুসজাসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মহাসম্মানিত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারক অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ভারতীয় মুশরিকদের বানানো বিকৃত ইতিহাস বাদ দিতে হবে, মুসলমানদের গৌরবময় সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। পাঠ্যক্রম থেকে সুদ-ঘুষের অংক বাদ দিতে হবে, হারাম গান-বাজনা-খেলাধূলা-নাটক-অভিনয়-ছবি ইত্যাদির পাঠ বাদ দিতে হবে। পাঠ্যক্রমে কোন মতেই পশ্চিমাদের আমদানীকরা বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন সমকামী-ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষা রাখা যাবে না। শিক্ষার নামে কুশিক্ষা দিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে এলজিবিটিকিউ-তে রুপান্তরিত করার হীন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। উদারতা এবং স্বাধীনতার নামে সহশিক্ষা এবং ছেলেমেয়েদের অবাধ মেলামেশার শিক্ষা বাদ দিতে হবে। আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির অজুহাতে মুসলমানদের সাথে অমুসলিমদের বন্ধুত্ব করার নিকৃষ্ট প্ররোচণামূলক প্রবন্ধ বা গল্প এবং ছবি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান শিশুদেরকে কাফির-মুশরিক কবি-সাহিত্যিকদের লেখা গদ্য-পদ্য পড়ানো যাবে না। শিশুদেরকে প্রথমেই ইসলামের মৌলিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে তারপর অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা প্রদান করতে হবে। শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমানের এই দেশে পাঠ্যক্রমে অবশ্যই আরবী ভাষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

আমাদের দ্বিতীয় দাবী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খাদ্য-পানীয়সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্যসামগ্রীর দ্রব্যমূল্য এবং চিকিৎসা সেবা ও ওষুধপত্রের মূল্য কমাতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ও সেবামূল্যের উর্ধগতি রোধ করে তা জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমানে বাজারে আগুন লেগেছে। চাল, ডাল, আটা, তেল, শাক-সবজি, ফল-মূল, মাছ-গোশত, ডিম সব কিছুই এখন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। যার ফলে নিম্ন আয়ের এবং মধ্যবিত্ত জনগণসহ দেশের অনেক মানুষ এখন পেটে ক্ষুধা নিয়ে জীবনযাপন করছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্বে চাই মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করা। ছাত্র-জনতার প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে সকলের আশা ছিলো জুলুম নির্যাতন মুক্ত একটি সমাজ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের আমলে রাজনৈতিক নেতারা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেশের সাধারণ জনগণকে জুলুম করতো আর নিজেদের পকেটভরে বিদেশে টাকা পাচার করতো। জনসাধারণের আশা ছিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জিনিস পত্রের দাম কমাবে। অথচ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে আগের সরকারের চেয়ে বেশি জুলুম হচ্ছে এবং বেশি আত্নসাতের ঘটনা ঘটছে। এখন জিনিস পত্রের দাম ফ্যাসিস্টদের আমলের থেকে আরো বেড়েছে। একটি ডিমের দাম এখন ১৫ টাকা। এক কেজি সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকা। এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই অতিরিক্ত দামের কারণে এখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ পত্রের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিসত্ত্বর এই জুলুম বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেটের অজুহাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়িয়ে, নতুন নতুন করের বোঝা জনগণের উপর না চাপিয়ে দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। এটা সরকারের প্রথম দায়িত্ব। খাদ্য না পেলে ক্ষুধার্ত নির্যাতিত মানুষ পূর্বের সরকারের মতই আবারো এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে। তাতে দেশে নতুন করে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। এই বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

আমাদের তৃতীয় দাবী বাসা-বাড়িতে নতুন গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। আবাসনের প্রয়োজনে নতুন নতুন বাড়ি তৈরী হচ্ছে। কিন্তু এই বাড়িগুলোতে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছেনা। এটা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের আমলের জুলুমবাজী সিদ্ধান্ত। দেশের খনি সমূহে পর্যাপ্ত গ্যাস রয়েছে এবং নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। আমাদের দেশের গ্যাস প্বার্শবর্তী দেশে পাচার করে দেশের মানুষকে এলপিজি কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নতুন বাসা বাড়িতে আবাসিক গ্যাস সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। এত করে দেশের রাজস্ব বাড়বে এবং জনজীবনে শান্তি আসবে। বাংলাদেশে গ্যাসের যে মজুদ আছে তা দিয়ে আগামী ১০০ বছর নিশ্চিন্তে চলবে। এই দেশের গ্যাস এই দেশের মানুষের হক্ব। তাই জনগণকে ঠকিয়ে পাশের দেশে গ্যাস পচার করা যাবেনা। অতএব জনগণকে রান্নার কাজে গ্যাস সংযোগ দিতে হবে।
বৈধভাবে গ্যাস সংযোগ না দিয়ে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীমহল অবৈধভাবে সংযোগ দিয়ে কালো টাকা কামাই করেছে। আমরা জেনেছি যে, বর্তমানে আবাসিক খাতে যে পরিমাণ অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করা হয় তা যদি বৈধভাবে দেয়া হয় তাহলে প্রতিমাসে ১০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে। তাই আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ খুলে দিলে অবৈধ ব্যবহার থেকে জনগণ বৈধতা পাবে আবার রাজস্বও আদায় হবে। এতে অতিরিক্ত গ্যাস খুব সামান্যই লাগবে।
সংবাদ সম্মেলনে ইনসাফ কায়েমকারী ছাত্র জনতার শতাধিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা স্লোগান দিয়ে তাদের দাবীগুলো জোরালোভাবে পেশ করেন।

 

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দখলমুক্ত হচ্ছে ঢাকার ৫৮ পুকুর
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
একইসময়ে রহস্যময় স্ট্যাটাস দিয়ে কী বুঝাতে চাইলেন আসিফ-হাসনাত!
এইচ এম কামরুজ্জামান খান সারা জীবন আধিপত্যবিরোধী রাজনীতি করে গেছেন
উত্তরার তুরাগে নোহা গাড়ির ধাক্কায় নারীর মৃত্যু
আরও

আরও পড়ুন

কোন সাহসে হাসিনার গ্রাফিতি মোছে?, ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি করলেন মুখপাত্র উমামা ফাতেমা

কোন সাহসে হাসিনার গ্রাফিতি মোছে?, ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি করলেন মুখপাত্র উমামা ফাতেমা

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস শুরু

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস শুরু

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

হিন্দু সেজে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নারীসহ গ্রেপ্তার ১০

হিন্দু সেজে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নারীসহ গ্রেপ্তার ১০

তুরস্কে ৮ বছরের মেয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

তুরস্কে ৮ বছরের মেয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

আটঘরিয়ায় বাঁশঝাড়ে কিশোরী খুন, টাঙ্গাইল আশেকপুর থেকে প্রধান আসামী গ্রেফতার

আটঘরিয়ায় বাঁশঝাড়ে কিশোরী খুন, টাঙ্গাইল আশেকপুর থেকে প্রধান আসামী গ্রেফতার

এখনও পুলিশের অনেক সদস্য দেদারসে ঘুষ খাচ্ছে : সারজিস আলম

এখনও পুলিশের অনেক সদস্য দেদারসে ঘুষ খাচ্ছে : সারজিস আলম

সাভারে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার-২

সাভারে ছাত্র হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার-২

সিরিয়ার রক্তাক্ত ইতিহাস , গণহত্যা ক্ষেত্রে শিশুরা খুঁড়ে পেল মানুষের খুলি

সিরিয়ার রক্তাক্ত ইতিহাস , গণহত্যা ক্ষেত্রে শিশুরা খুঁড়ে পেল মানুষের খুলি

পাঁচ লাখ টন ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যে বরিশালের কৃষিযোদ্ধাগন মাঠে

পাঁচ লাখ টন ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যে বরিশালের কৃষিযোদ্ধাগন মাঠে

উলিপুরে আগু‌নে পু‌ড়ে বৃদ্ধার মৃত‌্যু

উলিপুরে আগু‌নে পু‌ড়ে বৃদ্ধার মৃত‌্যু

টিজারেই বাজিমাত 'সিকান্দার', ঈদে শুভ মুক্তি

টিজারেই বাজিমাত 'সিকান্দার', ঈদে শুভ মুক্তি

চাদে ভোটগ্রহণ শুরু, বিরোধী দলগুলোর বয়কটের আহ্বান

চাদে ভোটগ্রহণ শুরু, বিরোধী দলগুলোর বয়কটের আহ্বান

নালিতাবাড়ীতে জেল পলাতক হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

নালিতাবাড়ীতে জেল পলাতক হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ১৮১ আরোহীর ১৭৯ জনই নিহত

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত, ১৮১ আরোহীর ১৭৯ জনই নিহত

সরকারের বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার পরিকল্পনা জানুয়ারিতে  : উপদেষ্টা মাহফুজ

সরকারের বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার পরিকল্পনা জানুয়ারিতে : উপদেষ্টা মাহফুজ

রাশিয়া ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের জন্য প্রবেশ নিষেধের তালিকা বাড়িয়েছে

রাশিয়া ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের জন্য প্রবেশ নিষেধের তালিকা বাড়িয়েছে

সৈয়দপুরে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামী জাহাঙ্গীর টঙ্গী থেকে গ্রেফতার

সৈয়দপুরে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় ঘাতক স্বামী জাহাঙ্গীর টঙ্গী থেকে গ্রেফতার

যশোরে আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

যশোরে আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

বাস্তব জীবনে ভালো রেসপন্স পাচ্ছে অলংকারের 'চেয়ারম্যান'

বাস্তব জীবনে ভালো রেসপন্স পাচ্ছে অলংকারের 'চেয়ারম্যান'