অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ও পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ
৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ সংক্রান্তে করা দুদকের আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। দুদকের আবেদনে বলা হয়, শেখ রফিকুল ইসলাম বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে এপিবিএন বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টার, খাগড়াছড়িতে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা, ভাই, বোনসহ নিকট আত্মীয়দের নামে বিপুল পরিমান অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, শেখ রফিকুল ইসলাম তার কর্মকালে ফারহানা রহমান, শ্বশুর মুজিবুর রহমান, নিজের ৩ ভাই যথাক্রমে মাহফুজুর রহমান, এস এম আমিনুল ইসলাম, এস.এম দিদারুল ইসলাম এবং অপর ভাই শেখ মো. মনিরুল ইসলামের স্ত্রী পলি ইসলাম, ভাগ্নি তানজিলা হক উর্মি, ভাগ্নে উজ্জল মামুন চৌধুরী, ভাগ্নি জামাই সেলিম মীর এবং ভগ্নীপতি শাফায়েত হোসেন মোল্যার নামে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জন করেন। এসব তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ মর্মে প্রতিয়মান হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিং আইনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অভিযোগটি অনুসন্ধান চলমান। তফসিলে বর্ণিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসমূহ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট শেখ রফিকুল ইসলাম তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দ্বারা বর্ণিত ব্যক্তিগণের নামে অর্জন করেছেন। উক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসমূহ অভিযোগ সংশ্লিষ্টগণ হস্তান্তর বা বন্ধক বা বেহাত করার প্রচেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়। অভিযোগ নিষ্পত্তির পূর্বে সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে কমিশনের কার্যক্রম ব্যাহত হবে। তাই অবিলম্বে তাদের অর্জিত নি¤œ বর্ণিত স্থাবর সম্পদসমূহ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ সমূহ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত ২ জুন দুদকের অনুসন্ধান টিম সংশ্লিষ্ট শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অতিরিক্ত ডিআইজি রফিকুল ইসলাম তার মৃত বাবা রাজ্জাক শেখের নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে ২০০১ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০তম বিসিএস-এ এএসপি পদে যোগদান করেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের সময় গোপালগঞ্জের পাইককান্দি ইউনিয়নে তার ছোট একটি টিনের ঘর ছিল। যার অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান। নিজ এলাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ২৭ নং বিজয়পাশা মৌজায় খাস খতিয়ানে ১.০৭ একর জমি ভাই ও ভাগ্নি জামাই সেলিম মীরের নামে তিন বছরের জন্য লিজ নেন। যেখানে অবৈধভাবে বালু দিয়ে ভরাট করে স্থায়ীভাবে দখল করে নিয়েছেন। খাস জমির সঙ্গে আসমা বেগম নামে এক নারীর প্রায় ৩ কাঠা জমিও দখল করেছেন। সবমিলিয়ে তার পরিবার ১.৫৬ একর জমি দখল করেছে, যেখানে তিনি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করছেন। যার বর্তমান বাজার মূল্য তিন কোটি টাকা বলে জানা গেছে। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ৮২/২, ইন্দিরা রোড, ফার্মগেটের বাড়িতে বসবাস করছেন। বহুতল ফাউন্ডেশন করে চারতলা ভবন এবং বিলাসবহুল আসবাবপত্র গড়েছেন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। ওই বাড়ির সব ফ্ল্যাটে বাসা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। স্ত্রী ফারজানা রহমানের নামে গোপালগঞ্জের পাইককান্দি ইউনিয়নে আমুড়িয়া মৌজায় ৪৯ শতাংশ জমি ২০১৫-১৬ সালে ক্রয় করেন রফিকুল। জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৯৮ লাখ টাকা। এছাড়া স্ত্রীর নামে ২০২২ সালে গুলশানে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালের পাশে ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ৬ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর এবং রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি প্লট ক্রয় করেছেন। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২৭ নং বিজয়পাশা মৌজায় তার পাঁচ নম্বর ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে জমি ক্রয় করে সেখানে বহুতল ফাউন্ডেশন দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। মার্কেটের নাম ‘কানাডা সুপার মার্কেট’। ওই ভাইয়ের নামে গোপালগঞ্জ সদরে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমিও কিনেছেন। মিরপুর চিড়িয়াখানার পাশে এক ব্যক্তির নামে আনুমানিক ২ বিঘা জমি ১২ কোটি ১৯ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন। সেখানে টিনশেড ভবন করে ৬৩টি রুম ভাড়া দেওয়া আছে। মেজো বোনের স্বামী শাফায়েত হোসেন মোল্লার নামে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সড়কের পাশে দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমি ক্রয় করেছেন। একই এলাকার পাইককান্দি এলাকায় ভাগ্নে জামাই সেলিম মীরের নামে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করে তিনতলা ফাউন্ডেশনের ভবন ও দোকান করে দিয়েছেন। পাঁচ ভাইয়ের নামে গোপালগঞ্জ রেল স্টেশনের আশপাশে বিভিন্ন সময়ে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি কিনেছেন। এছাড়া তাদের নামে পূর্বাচল প্রকল্পে ৫টি প্লট বুকিং রয়েছে, যার কিস্তির টাকা তিনি দিচ্ছেন। রফিকুলের অবৈধ অর্থের বাহক দলিল লেখক উজ্জ্বল মামুন চৌধুরী। মামুন ও তার পাঁচ নম্বর ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ সদরের সুকতাইল গ্রামে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ বিঘা জমিতে মৎস্য খামার করেছেন রফিকুল। ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ সদরের ৬ নং পাইককান্দি ইউনিয়নে আরও ২০ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়েছে। উজ্জ্বল মামুন চৌধুরী সবার কাছে পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের ভাগ্নে হিসেবে পরিচিত। তিনি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের পাশে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা মূল্যের তিনতলা ভবন নির্মাণ করেছেন।
রফিকুলের তিন নম্বর বোন ফেরদৌস আরার নামে একটি ব্যাংকে ১০ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। তিন নম্বর ভাই আমিনুল ইসলামের (বেকার) নামে রাজধানীর কাকরাইলে কর্ণফুলী গার্ডেনে ১৮ ডি ফ্ল্যাটে এক কোটি ১০ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। দ্বিতীয় নম্বর ভাই এস. এম দিদারুল ইসলাম বা তার স্ত্রী সাঈদা আমেলী জামানের নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাদেরবাদ হাউজিংয়ে ৮০ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন রফিকুল। বড় ভাই এস. এম নুরুল ইসলাম সরকারি দপ্তরের ক্লার্ক। তার নামে ঢাকায় তিনটি ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ভাইয়ের মেয়েকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ার যাবতীয় খরচ রফিকুল বহন করছেন। জাহাঙ্গীর আলম নামে এক রাজমিস্ত্রী রফিকুল ইসলামের ব্যবসা দেখভাল করেন। ওই জাহাঙ্গীর আলম এখন একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। বর্তমানে কুড়িল বিশ্বরোডের পাশে সাততলা ভবন নির্মাণের কাজ করছেন, যার প্রকৃত মালিক রফিকুল। স্ত্রী ফারজানা খানম ও তার ভাই মাহফুজুর রহমানের নামে গোপালগঞ্জ সদরে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের সম্পত্তি ক্রয় করেছেন রফিকুল। মাহফুজুর রহমান কানাডা-বাংলাদেশ হুন্ডির ব্যবসায় সম্পৃক্ত। যা রফিকুল ইসলামের টাকায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। চাকরি ক্ষেত্রে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ আয় করেছেন। তার স্ত্রীর ভাই আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকায় শিপিং ব্যবসা করছেন। এছাড়া গোপালগঞ্জ সদরে তিনি পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করেছেন। কাগজে কলমে যার মালিক শাহারিয়ার মুন্সি নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু দেখাশোনা করেন তার স্ত্রী। তার তিন ভাইয়ের নামে যৌথ কারবারের ব্যবসায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। স্ত্রী ফারজানা ও ভাগ্নি তানজিলা হক উর্মির নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার স্বর্ণও রয়েছে। যা ব্যাংকের লকারে রাখা আছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। এমনকি সরকারি জমিও গ্রহণ করেন। চাকরির প্রভাব বিস্তার করে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে
হাসিনাকে ভারত কি ফেরত পাঠাবে, আলজাজিরার প্রতিবেদন কি বলছে
সচিবালয়ে সেনাবাহিনী-বিজিবি মোতায়েন
কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি
বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?
সময় টিভির সাংবাদিক বরখাস্ত: এএফপির প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন হাসনাত
আগুনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আট ও নয়তলা
লক্ষ্মীপুরে পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিলো স্থানীয়রা
গাজীপুরে ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ গ্রেফতার
সচিবালয়ের আগুন এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি, কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস
ফ্যাসিবাদের সময় উত্তরবঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে: নীলফামারীতে উপদেষ্টা আসিফ
সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর
সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২০ ইউনিট
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু