জুলুমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে আসছে, "লাল মজলুম"
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম
বাংলাদেশ আজ যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে রয়েছে হাজার বছরের লড়াই সংগ্রামের যুগান্তকারী ইতিহাস। যুগে যুগে অসংখ্যবার এই উর্বর ভূমিতে অত্যাচারী জালিমদের উত্থান হয়েছে যা ইতিহাসের পরতে পরতে দগ্ধ করেছে বাংলার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে যত শাসকই এদেশে এসেছে তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, সমৃদ্ধ এই ভূখন্ডকে সম্পূর্ণরূপে গলাধঃকরণের প্রচেষ্টা।
অত্যাচারিত হয়েছে বাংলার আপামর জনগন, শোষিত হয়েছে কৃষক,কামার,কুমোর থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ের সকল মানুষ। কেবল অর্থনৈতিক আগ্রাসনই নয় বরং বিভিন্ন সময়ে আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও যা সমসাময়িক সময়েও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। শত বাঁধা-বিপত্তি থাকা স্বত্তেও আমাদের পূর্বপুরুষেরা ছিলনা নির্বিকার, নিরস্ত্র বাঙ্গালীরা সেই আগ্রাসনকে বারংবার ভূপতিত করেছে,ছিনিয়ে এনেছে আমাদের বহুল কাঙ্খিত বিজয়গাঁথা।
এই লড়াই একদিনের অর্জন নয় বরং ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিয়মান হয়েছে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা অর্জন, তৎপরবর্তীকালে ৯০ এর স্বৈরশাসক উৎখাত, এক এগারো, সর্বশেষ গণহত্যাকারী স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক হাসিনা সরকারের সমূলে উৎপাটন।
বাংলার আবহমান সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মাধ্যমে নিপীড়ন মজলুমদের ইতিহাসকে পুননির্মাণ করতে যাচ্ছেন বিশিষ্ট নাট্য নির্মাতা, লেখক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান। পরিবেশনাটির খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আজ একটি সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলেন আয়োজকরা।
সেখানে জানা যায়, গণ অর্থায়নে নির্মিত "লাল মজলুম" শিরোনামের এপিকধর্মী পরিবেশনাটি আগামী ১৬ নভেম্বর ২০২৪ (শনিবার) বিকাল ৪টায় সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হবে। যেখানে রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শিত হবে নৃত্য,পথনাটক, পোস্টারনাটক, ইনস্টলেশন,চিত্রকর্ম,বিভিন্ন ঘরানার সংগীত। এছাড়াও থাকবে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা পরিবেশনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে খণ্ড খণ্ড চলমান এই পরিবেশনাটি শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটি গণ-অধিবেশনমূলক সংলাপের দৃশ্যায়নের মাধ্যমে শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে শাহমান মৈশান বলেন, "লাল মজলুম” পরিবেশনাটি একদিকে শিক্ষার্থী-শ্রমিক জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি যেমন পুনঃসৃজন করে, তেমনি এই জনপদে ইতিহাসের বিভিন্ন চিরায়ত অভ্যুত্থানকেও একসূত্রে গ্রথিত করে।
এছাড়াও, বর্তমান সময়ে দেশে ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক-সামাজিক সংকটগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। আঙ্গুল তোলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। পরিবেশনাটি প্রশ্ন উত্থাপন করে সমাজে টিকে থাকা কতৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।
ঔপনিবেশিক আধুনিকতাবাদী প্রতাপশালী চিন্তা “সেকুলারিজম” ধারণার বিপরীতে, এই গণপরিবেশনা “ইনক্লুসিভিটি” ধারণাকে আত্মস্থ করতে প্রয়াসী। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিবাদ, এমনকি ব্যক্তির ক্ষুদ্রতম পরিসরে থাকা মাইক্রোফ্যাসিবাদকেও এই পরিবেশনা প্রশ্ন করে এবং অন্তর্ভুক্তিমুলকতার ধারণা প্রয়োগ করে “লাল মজলুম” মনে করিয়ে দেয় যে, সহিষ্ণুতা, সহাবস্থান, সংখ্যালঘুত্ব এবং অপরের সাথে সংযোগ ও সংশ্লেষ ঘটলেই কেবল আমাদের জীবন অর্থবহ হয়ে
উঠতে পারে।
পরিবেশনাটি প্রসঙ্গে নির্মাতা শাহমান মৈশান বলেন, "এই গণপরিবেশনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর “হ্যাপেনিং” স্বভাব। অর্থাৎ যখন এটি ১৬ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল ৪টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে শাহবাগ পর্যন্ত স্থানে স্থানে সংঘটিত হবে সেদিনই কেবল এই পরিবেশনার পূর্ণাঙ্গ রূপ গঠিত হবে। তাই অনেকাংশেই “লাল মজলুম” কোনো পূর্বনির্ধারিত নাট্যিক পরিবেশনা নয়। বরং স্থান-স্থাপত্য-চলমানতা ও দর্শকের সংযোগে পূর্ণ হবে “লাল মজলুম”।
উক্ত বিষয়ে পরিবেশনাটির অন্যতম আয়োজক রাগীব নাঈম বলেন, " জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিজয়গাঁথার একদিনের ফসল নয় বরং এর পেছনে রয়েছে বিরাট এক ইতিহাস। সেই ইতিহাসেরই বিস্ফোরণ এই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এবং বিজয় অর্জন। কিন্তু আমরা একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি বিজয় অর্জিত হওয়ার পর পরই আমরা আবার আগের মতো আলাদা হয়ে যাচ্ছি। দেশজুড়ে ঘটছে অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা। অঞ্চল কেন্দ্রীক কে ক্ষমতা পেল কে পেল না এই নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। আমরা এই পরিবেশনাটির মাধ্যমে এই মেসেজটি পৌঁছে দিতে চাই যে, আলাদা হওয়ার মাধ্যমে কখনও ভালো কিছু করা সম্ভব নয়। এতে বরং আমাদের বিভেদ সৃষ্টি হয়, এখন বিভেদের সময় নয়। আমরা যেমন করে স্বৈরাচারী হাসিনার মূলোৎপাটন করেছে এক সাথে হাতে হাত রেখে সেভাবেই সামনের দিকে দেশটিকে এগিয়ে নিতে চাই।"
এ প্রসঙ্গে আরেক আয়োজক আশরাফুল ইসলাম সায়ান বলেন, " এই পরিবেশনাটির মাধ্যমে আমরা ঐকের শক্তি আরও একবার দেশের মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই৷ আমাদের এই আয়োজনে স্থান পেয়েছে সেই সকল দুর্বিষহ সময়ের ঘটনাগুলো যা আমাদেরকে তারিত করেছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য। আমাদের এই আয়োজনের মাধ্যমে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষদের এই বার্তা দিতে চাই যে, আওয়াজ তুলুন সকল বৈষম্য, বিভেদ,জুলুম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা বিনির্মান করতে চাই এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু নয় বরং গুরুত্ব পাবে মনুষ্যত্ত্ব। আমরা সকল আগ্রাসী মনোভাবকে উপরে ফেলে হাতে হাত ধরে এগিয়ে যেতে চাই সামনের দিকে। সাংস্কৃতিক বিপ্লব হোক মজলুমের কন্ঠ, প্রতিবাদের ভাষা এবং অন্যায়ের আপোষহীন জয়ধ্বনি।"
উল্লেখ্য, পরিবেশনাটিতে অংশগ্রহণ করবেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর শিল্পী ও কর্মীবৃন্দ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
২০২৫ সালে নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিকে ৭৬ দিনের ছুটির তালিকা প্রকাশ
খুলনা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে ঢাকার পথে যুক্ত হচ্ছে ট্রেন জাহানাবাদ
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিন
আশুলিয়ায় কিশোর গ্যাং এর হামলায় আহত ৩
মাদারীপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হলেন সরওয়ার আলম