ঢাকা   বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আলী ইমাম মজুমদার-খোদা বকশ চৌধুরীরা গণতন্ত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন: রিজভী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১২ পিএম

 

 

 

অন্তর্বর্তীকালী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী পুলিশের সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ খোদা বকশ চৌধুরী এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদাররা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন নতুন কেউ কেউ উপদেষ্টা পরিষদে কিংবা প্রধান উপদেষ্টার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করে তাদের টার্গেটই যেন পরিণত হয় আন্দোলনের স্বপক্ষে যারা ছিলেন বা সহানুভূতিশীল যারা ছিলেন তাদেরকে টার্গেট করা। খোদা বকশ সাহেব একজন পুলিশের সাবেক আইজি ছিলেন। কিন্তু এই ১৫ বছর, সাড়ে ১৫ বছর তার কি ভূমিকা ছিল? তিনি কয়জন লোককে চিনেন? আমরা চিনি, আমরা প্রতিমুহূর্তে নিপীড়িত হয়েছি, এই অফিস ভেঙে চার-পাঁচ বার নিয়ে গেছে আমাদেরকে। এখানে আমরা যারা বসে আছি যেদিন শেখ হাসিনার পতন হয়েছে তারপরের দিন আমরা জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়েছি, তার আগের দিন পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলাম।

তিনি বলেন, এই যে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্পিরিট, যে চেতনা এটাকে কি তারা (খোদা বকশ-আলী ইমাম মজুমদাররা) ধারণ করেন? ওটা তো তারা ধারণ করেন না। তারা বড় বড় কথা বলেন, দেখাতে চান যে তারা অত্যন্ত নিরপেক্ষ। আপনি (খোদা বকশ চৌধুরী) তো আইজি ছিলেন বিএনপির সময়, আপনি কি করতে পেরেছিলেন? আপনাদের কারণেই তো ১/১১ এসেছিল, অগণতান্ত্রিক শক্তি এসেছিল।

রিজভী বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ হওয়ার পরে আলী ইমাম মজুমদার সাহেব প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস করার জন্য ডিসি নিয়োগ দিলেন ঠিক বেছে বেছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পক্ষে যারা প্রশাসনিক লোক ছিল তাদেরকে ডিসি নিয়োগ দিলেন। পরে হয়তো এটা পরিবর্তন করেছে নানা দিক থেকে বিতর্কিত হয়ে। কিন্তু উনি এই সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনার আমলে নিঃসন্দেহে বুদ্ধিজীবী মানুষ বুদ্ধির চর্চা করেন, পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কিন্তু কখনোই কি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে একটি আর্টিকেল লিখেছেন? আমাদের সমর্থনে কি কখনো একটি কথা লিখেছিলেন অথবা জুলাই-আগস্টে তারা কি কোন মতামত দিয়েছেন? কিন্তু তারা অন্তরের মধ্যে একটি মত ধারণ করেন সেটার প্রতিফলন আমরা দেখেছি উনি উপদেষ্টা হওয়ার পরে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, খোদা বকশ সাহেব- আমরা শুনেছি উনি আসার পরে যারা বঞ্চিত ছিলেন, যারা আন্দোলনের পক্ষে সহানুভূতিশীল ছিলেন তাদের বিপক্ষেই উনি নাকি অবস্থান নিচ্ছেন। এটা কিন্তু খুবই রহস্যজনক ব্যাপার। টার্গেট করে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, তাদেরকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কেন জানি একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নিজের পছন্দকে বাস্তবায়ন করার জন্য তারা এই কাজগুলো করছেন। অথচ সালমান এফ রহমান জেলখানার ভিতরে বসে যে কারসাজি করছেন, নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন দেশের মধ্যে, কই এটার ব্যাপারে তো আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। কারাগারের ভেতরে সালমান এফ রহমান রাজার হালে আছে এবং ওইখান থেকে সমস্ত পরিকল্পনা করছেন তার তো প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। গার্মেন্টস সেক্টরের অধিকাংশ মালিক হচ্ছে আওয়ামী মনা, ফ্যাসিবাদের পক্ষে। এই যে গার্মেন্ট সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তোলা, এটার পেছনে নিশ্চয়ই তার ভূমিকা আছে। কই এগুলোর ব্যাপারে তো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখিনি? তারা কি করে ভেতর থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে?

রিজভী বলেন, মূল স্পিরিটের বাহিরে কিছু কিছু উপদেষ্টার যে পদক্ষেপ এইটা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এইটা গোটা জাতিকে একটা শঙ্কার মধ্যে নিয়ে গেছে। এই কারণেই আজকে সালমান এফ রহমানদের মত লোকেরা কারাগারের ভেতর থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং যারা এখনো গ্রেফতার হননি তারা বিপুল অংকের টাকা ছিটাচ্ছেন অস্থিতিশীল করার জন্য।

তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণআন্দোলনের সরকার। এই সরকার ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সরকার। এই সরকারের অনেকেই নির্যাতিত হয়েছেন, তারা কোন রাজনৈতিক দল করেন না, কিন্তু স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য অনেকেই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা যিনি আওয়ামী শাসনকালে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার স্যোসাল বিজনেস মাইক্রোক্রেডিট যেটা গোটা বিশ্বব্যাপী অভিনন্দিত এই কারণেই ডক্টর ইউনুস সাহেব সকলের কাছেই শ্রদ্ধাভাজন একজন ব্যক্তি। কিন্তু সবাই তো তার মত এরকম নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হননি। কেউ কেউ হয়েছেন, কারো কারো চেম্বার ভেঙে দেয়া হয়েছে যেমন- ড. আসিফ নজরুল অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় ফ্যাসিবাদী সরকারের সমালোচনা করেছেন। নানাভাবে এই কারণে তাকেও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আরো হয়রানি শিকার হয়েছে ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা উপদেষ্টা হয়েছে, শারীরিকভাবেও তাদেরকে নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ এমনও আছেন যারা সব সময় সুবিধার অনুসন্ধান করেছেন, দেখেছেন যে বাতাস কোন দিকে, বাতাস কি দক্ষিণে প্রবাহিত হচ্ছে, না উত্তরে প্রবাহিত হচ্ছে, তখন সে দিকে তারা নিজেদেরকে সেই বাতাসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এরকমও কিছু আছে। এই ১৫-১৬ বছর যে সংগ্রাম, এর মধ্যেও তো কিছু মানুষ প্রশাসনেরও কিছু লোকজন একেবারেই হাতেগোনা একজন-দুইজন যারা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন। যাদের মনের মধ্যে আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি ছিল কিন্তু কিছু করতে পারেননি অধিকাংশকেই শেখ হাসিনার রক্ত চক্ষুর নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, খোদা বক্স সাহেব বিএনপির আমলেই পুলিশের আইজি ছিলেন। বিএনপি'র বিরুদ্ধে যে এত অত্যাচার-অবিচার স্বয়ং এদেশের জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি জরাজীর্ণ-পরিতক্ত কারাগারে রেখে যেভাবে শেখ হাসিনা তার উপর নির্যাতন করেছে, মিথ্যা মামলায় আটকে রেখে। কই সেই সময়ে তো আলী ইমাম মজুমদার অথবা খোদা বকশ সাহেবের কোন আর্টিকেল দেখিনি যে, বিএনপির বিরুদ্ধে এত নিপীড়ন-নির্যাতন চলছে। এখন এসে একটি স্থিতিশীল সরকারের মধ্যে কে ভালো, কে মন্দ উনারা উনাদের বিবেচনা দিয়ে, তাদের পছন্দ-অপছন্দ দিয়ে গণতন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক যে শক্তি সমমাননা দল তাদের সাথেই তো সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিল এই সরকারের। আজকে কোনভাবে যদি শেখ হাসিনার পুনরুত্থান ঘটে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যদি দুই-একজন ভিতরে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখেন, সেটা বাদ দিয়ে এই সরকারের তো কেউ রেহাই পাবেন না। আমরা কেউ রেহাই পাব না। আজকে যদি গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য না থাকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না যদি শেখ হাসিনার পুনরুত্থান ঘটে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঘটে।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আবু আশফাক, মামুন হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীকে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ফুলের শুভেচ্ছা
ফের সিন্ডিকেটের আনাগোনা
ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন
১৪তম গ্রেডসহ পাঁচ দাবি ল্যাব সহকারী ঐক্য পরিষদের
মাদরাসা উদ্ধারের দাবি সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ
আরও

আরও পড়ুন

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের

সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নিবন্ধনসহ যা করতে হবে পর্যটকদের

রাখাইন রাজ্যে মধ্যরাত থেকেই বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত।

রাখাইন রাজ্যে মধ্যরাত থেকেই বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপল টেকনাফ সীমান্ত।

আমিনপুরে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত।

আমিনপুরে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত।

একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৫ মৃত্যু, শনাক্ত ১০৩৪

একদিনে ডেঙ্গুতে আরো ৫ মৃত্যু, শনাক্ত ১০৩৪

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীকে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ফুলের শুভেচ্ছা

অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীকে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের ফুলের শুভেচ্ছা

ফের সিন্ডিকেটের আনাগোনা

ফের সিন্ডিকেটের আনাগোনা

রাজধানীতে ফের বসছে জমকালো  বক্সিং আসর

রাজধানীতে ফের বসছে জমকালো বক্সিং আসর

প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের কমিটি

প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের কমিটি

চাচাত ভাইয়ের মেয়ে কে বিবাহ করা প্রসঙ্গে।

চাচাত ভাইয়ের মেয়ে কে বিবাহ করা প্রসঙ্গে।

কাপাসিয়ার ছাত্র জনতার উপর হামলার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন গ্রেফতার

কাপাসিয়ার ছাত্র জনতার উপর হামলার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান খোকন গ্রেফতার

ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন

ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায় ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন

মৎস্য উৎপাদন গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

মৎস্য উৎপাদন গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পৌঁছানোর কাজ

১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে প্রবাসীদের পাসপোর্ট পৌঁছানোর কাজ

১৪তম গ্রেডসহ পাঁচ দাবি ল্যাব সহকারী ঐক্য পরিষদের

১৪তম গ্রেডসহ পাঁচ দাবি ল্যাব সহকারী ঐক্য পরিষদের

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ১২২ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ১২২ কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে

৭ এপিবিএন অধিনায়ক পরিদর্শন করলেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্যাম্প

৭ এপিবিএন অধিনায়ক পরিদর্শন করলেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্যাম্প

মাদরাসা উদ্ধারের দাবি সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ

মাদরাসা উদ্ধারের দাবি সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ

বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী হকি দল এশিয়া কাপে

বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী হকি দল এশিয়া কাপে

ফেডারেশন কাপে একই গ্রুপে মোহামেডান-আবাহনী

ফেডারেশন কাপে একই গ্রুপে মোহামেডান-আবাহনী