দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না: এ এম এম বাহাউদ্দীন
২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০০ পিএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম
শুধু ইনক্রিমেন্ট কিংবা নামের আগে ডক্টরেট বসানো যেন লক্ষ্য না হয়, দ্বীনের কাজে লাগাতে হবে : আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি
দেশের মাদরাসা অঙ্গনের ২০৬ জন পিএইচডি এবং এমফিল ডিগ্রিধারী শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মাননা জানিয়েছে মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীস্থ গাউসূল আজম কমপ্লেক্সে তাদেরকে বিশেষ সংবর্ধনা দেয়া হয়। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসন সাজিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদ, সরকারি পদ নিয়ে কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতায় কেউ আসতে পারবে না। আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা যদি ভিন্ন না থাকে তাহলে মানুষের জানামতে আগামী দিনে কে ক্ষমতায় আসবে আমরা সকলে বুঝি। তাই একজন সরকারি কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যদি এই সময়ে রাজনৈতিকভাবে চিহ্নিত হয়ে যান তাহলে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
তিনি বলেন, আমরা যে সমাজ চাই, যে সমাজের স্বপ্ন দেখি আগামী দিনে বাংলাদেশে সেরকম সমাজ হবে। ছায়ানট, উদীচী বা ৫৪ বছরের ভারতের হিন্দু সাংস্কৃতি আদলে যে সমাজ গড়ার চেষ্টা হয়েছিল সেরকম কিছুই থাকবে না। তবে এর জন্য আমাদের আরো লড়াই করতে হবে, লড়াই করেই আমরা বিজয়ী হবো।
ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে নারীদের ভূমিকার কথা তুলে ধরে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, নারীরা এই সমাজের ৫০ শতাংশ। তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, সম্মান দিতে হবে। তবে তাদের যোগ্যতার বলে আসতে হবে, কোটার বলে না। তিনি বলেন, সমাজ গঠনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মায়েদের। মা যদি শক্তিশালী, ঈমানদার না হয় তাহলে রাষ্ট্রের সম্পদ বাড়িয়েও কোন কাজ হবে না। কারণ প্রতিটি সন্তানকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন একেকজন মা।
জমিয়াত সভাপতি বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছেন, কাজ করছেন। তবে উনি এসেছেন সীমিত সময়ের জন্য। ২০২৫ বা এর পরে যখনই নির্বাচন দিবে তখন পর্যন্ত উনি থাকবেন। সেই পর্যন্ত দেশ যাতে ভালো থাকে। আগামীতে যাতে আমরা নারী-পূরুষ সকলে মিলে ভোট দিতে পারি। আমাদের এখন সেটিই চাওয়া।
মাদরাসার ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশ্যে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, যারা মাদরাসা থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তাদেরকে অবশ্যই বর্তমান জেনারেশনকে বুঝতে হবে, তাদের (নতুন জেনারেশন) চিন্তা-চেনতা কি এগুলো জানতে হবে। এগুলো নিয়ে পড়াশুনা, গবেষণা করতে হবে। মাদরাসার নিজস্ব ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে গবেষণা করতে হবে। আগামী দিনের সমাজের রূপরেখা কিরকম হবে সেটা আপনারা তৈরি করেন। ছায়ানট, উদীচী তারা যে সমাজ তৈরি করেছে, ভাবনা তৈরি করেছে সেটি ভাঙার জন্য তো নতুন ভাবধারা দিতে হবে।
দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করলে আগামী দিনে আলেম-ওলামাদের জন্য বড় সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে মন্তব্য করে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচনের পর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট হবে। সেখানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সুযোগ থাকবে। সেখানে আলেম-ওলামাদের যাতে সম্মাজনক সংখ্যা ও উপস্থিতি থাকে, সেভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে, দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। জ্ঞানী লোকদের যেন তুলে ধরা যায়, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যেন আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা জায়গা করে নিতে পারে সেরকম অবস্থান তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রী কিভাবে বাড়ানো যায় সেভাবে কাজ করতেও আহ্বান জানান তিনি।
মাদরাসা শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন জমিয়াতের সভাপতি বলেন, আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা এখনই সমাজ বোঝার চেষ্টা করছেন। এটি আমাদের কাছ থেকেই বোঝার চেষ্টা করবেন। দ্বারে দ্বারে কোন রাজনৈতিক দলের কাছে যাবে না। কোন রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে অতীতে কোন কাজে আসেনি, আগামীতেও আসবে না। ইসলামের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ শক্তিশালী হতে পারবে একটি শক্তিশালী ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র এই পরিচয়ে। অন্য কোন পরিচয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে বড় কোন অবস্থান নিতে পারবে না। বাংলাদেশ ইনশাআল্লাহ সম্পদশালী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম বলেন, আলেমদের মধ্যে এতো ডক্টরেট ডিগ্রিধারী একসাথে একত্রিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। এর আগে কখনো এমনটি হয়নি।
ডিগ্রিধারীদের উদ্দেশ্যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, অনেক শ্রমের ফল হলো একটি ডিগ্রি। তবে এসব ডিগ্রি এবং গবেষণা যাতে দ্বীনের জন্য কাজে আসে এটা মাথায় রাখতে হবে। এমন বিষয়ে মাঝে মাঝে গবেষণা করা হয় যেটি নিয়ে হাসাহাসি হয়। বরং যুগের চাহিদা, উম্মার চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে সেসব বিষয়ের ওপর গবেষণা করেন, ডিগ্রি অর্জন করেন। আপনাদের গবেষণা, প্রবন্ধ, লেখা যাতে প্রত্যেক মানুষকে আকৃষ্ট করে।
প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম বলেন, ইসলামের অনেকগুলো বিষয় নিয়ে গবষেণার সুযোগ আছে। ইসলাম বিশাল এক জগৎ। শুধু গবেষণা নিজেরা করবেন না, শিক্ষার্থীদের গবেষণা করতে শেখাবেন। গবেষণা ছাড়া পৃথিবীর কোন জাতি উন্নত হতে পারেনি। ইউরোপ-আমেরিকা বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে এর অন্যতম কারণ গবেষণা। প্রতিবছর যে নোবেল দেয়া হয় তা উন্নত বিশ্বের লোকেরা পায়। কারণ তারা প্রতিনিয়ত গবেষণা করছেন। এজন্য গবেষণা ও চিন্তা দরকার। শুধু ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার জন্য কিংবা মাহফিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে নামের আগে ডক্টরেট বসানোর জন্য যাতে ডিগ্রি অর্জন না হয়। গবেষণা এমন বিষয়ে করেন, এমন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন যা উম্মার জন্য, দ্বীনের জন্য কাজে লাগবে।
আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, মাদরাসার জন্য কাজ করা আমাদের শুধু চাকরি না, এটা দ্বীনি দায়িত্ব। এটা ঈমানের অপরিহার্য দায়িত্ব। তাই সকলকে সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এই দায়িত্ব পালনে সব সময় সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে এবং পাশে থাকবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. শাহনওয়াজ দিলরুবা খান, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী, অধ্যক্ষ মাওলানা আ ন ম আবুবকর সিদ্দিক, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সৈয়দ শরাফত আলী, মাওলানা আব্দুল লতিফ শেখ, অধ্যক্ষ মাওলানা মনোয়ার আলী, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মোর্শেদ আলম ছালেহী, অধ্যক্ষ মাওলানা এজহারুল হক, ড. মাওলানা ইদ্রিস খান, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা আব্দুল বাতেন, ড. মাওলানা ইবরাহীম আনোয়ারী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ মাওলানা কাযী আবুল বয়ান হাশেমী, জৈনপুর পীর সাহেব আ ন ম মাহবুবুর রহমান, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা আহমদ উল্লাহ, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা নজরুল ইসলাম আল-মারুফ, অধ্যক্ষ মাওলানা রূহুল আমীন আফসারী, অধ্যক্ষ মাওলানা এ কে এম মনোওর আলী, উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মো. ছাদেক হাসান, অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মুঈনুল ইসলাম পারভেজ, অধ্যক্ষ মাওলানা আক্তারুজ্জামানসহ দেশের আলিয়া মাদরাসা অঙ্গনের পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিধারীগণ এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশার কারণে ৭ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরও ৫০
আওয়ামী পন্থী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুক্তরাজ্য শাখা বিএনপি নেতার মতবিনিময়
পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ
আ.লীগের দোসর সালাম আলী এখন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী!
ঘুস নেওয়ার অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিককে যুক্তরাজ্যে জিজ্ঞাসাবাদ
তালাক নিয়ে যুক্তরাজ্যে যেতে চান বাশার আল-আসাদের স্ত্রী
গভীর রাতে মেসে ছাত্রীদের বিক্ষোভ, মালিকের দুই ছেলেকে পুলিশে সোপর্দ
প্রোটিয়াদের হোয়াইট ওয়াশ করে পাকিস্তানের ইতিহাস
৯ গোলের উৎসবে লিভারপুলের বড় জয়
বড়দিনের ছুটির আগে রিয়ালের বড় জয়
ঘরের মাঠেই বিধ্বস্ত ইউনাইটেড
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে