জুমার বয়ানে বায়তুল মোকাররমে খতিব মুফতি আব্দুল মালেক

'হায়াত আর মাওতের মালিক আল্লাহ তায়ালা'

Daily Inqilab এম এম আবু দাউদ আখন্দ

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ পিএম

আজ শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র জুমা পড়ান সম্মানিত খতিব দেশবরেণ্য আলেম মুফতি মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক (হাফিজাহুল্লাহু)।

 


বয়ানের শুরুতে তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে খুতবা পাঠ করেন। খুতবায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হামদ ও রাসূল (সা.) এর ওপর দরুদ ও সালাম পাঠ করেন।

 

এরপর তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মেহেরবানি করে আমাদেরকে হায়াত দান করেছেন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা আমাদের হায়াত আর মাওতের একমাত্র মালিক। কারো মৃত্যু আসতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত। (মৃত্যুর জন্য) নির্ধারিত সময় লেখা হয়ে গেছে। যখন কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন না এক মুহূর্ত পেছনে থাকতে পারবে, না এগিয়ে যেতে পারবে।

 

এরপর তিনি বলেন, কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে ‘অকাল মৃত্যু’ শব্দটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই কথাটা এড়িয়ে চলা কর্তব্য। কারণ প্রত্যেক প্রাণীর জন্য ‘মৃত্যু’ যেমন অনিবার্য তেমনি তার দিন-ক্ষণও নির্ধারিত। সেই নির্ধারিত সময়েই তার মৃত্যু হবে। এতে সামান্য এদিক-সেদিক হবে না।

 


আর যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের জুলুমের কারণে শাস্তি দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী কোনো প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের নির্ধারিত সময় উপস্থিত হয় তখন তারা মুহূর্তকাল বিলম্ব অথবা ত্বরা করতে পারে না।

 


অতএব কেউ যদি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর মারা যায়, তবে এইটুকুই তার হায়াত। তদ্রূপ কেউ যদি পঁচিশ-ত্রিশ বছরের যৌবনকালে মৃত্যুবরণ করে তবে এই পঁচিশ-ত্রিশ বছরই তার হায়াত। তার মৃত্যু সেই সময় মতোই হয়েছে, আল্লাহ তাআলা যা তার জন্য নির্ধারিত করেছেন। এমনিভাবে একশ বছর বয়সে কারো মৃত্যু হওয়ার মানে এই নয় যে, সে তার জন্য নির্ধারিত সময়কালের অধিক হায়াত পেয়েছে। এটি অতি সহজ একটি কথা। সুতরাং কম বয়সে কারো মৃত্যু হলে আবেগের বশে ‘অকাল মৃত্যু’ শব্দ ব্যক্ত করব না।

 


এরপর তিনি তাকওয়া অর্জনের বিষয়ে বলেন, কোরআনুল কারীমে মুমিনের যেসব বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তার মধ্যে তাকওয়া অন্যতম। কারণ তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য অর্জন ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতে মুমিন কখনো সফলতা লাভ করতে পারে না। আল্লাহর কাছে একমাত্র দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। অন্য মতাদর্শ অনুসরণ করে কখনো মুক্তি পাওয়া যাবে না।

 


এরপর তিনি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এহেন উক্তি বা বক্তব্য দেয়া সম্পূর্ণ ইসলাম ও যুক্তিবিরোধী। তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মানুসারীরাও এ ধরনের বক্তব্য স্বীকার করে না।

 


তিনি বলেন, এটা সকলেরই স্মরণ রাখা দরকারÑ ঈদ অথবা পূজা জাতীয় কিংবা সামাজিক কোনো রীতি-অনুষ্ঠান নয়, এটা একেবারেই ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় যে কোনো আয়োজন-উৎসবে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীরই স্বাতন্ত্র্যবোধ থাকতে হবে।

 


তিনি বলেন, একটি বিষয় মুসলমানদের জেনে রাখা জরুরি, অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফভিত্তিক নাগরিক আচরণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ মনোভাব রাখা ইসলামের শিক্ষা। অমুসলিমদেরকে সব ধরনের সামাজিক ও মানবিক সহযোগিতা করা যাবে। এতে ইসলাম কোনোরূপ বাধা দেয় না। কিন্তু তাদের ধর্মীয় উপাসনা, পূজা বা আরাধনায় যে কোনোরূপে অংশ নেয়া মুসলমানের জন্য অবশ্যই হারাম।

 


প্রবীণ এই আলেমে দ্বীন বলেন, মুসলমানগণ পরস্পরের প্রতি ভাইয়ের মতো আচরণ করবে। ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে, মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় আচার-আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আচরণের প্রশ্নে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ না করে বরং সহনশীল ও সহিষ্ণু আচরণ করবে। মুসলিম দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগণ অবশ্যই নাগরিক ও সামাজিক সকল সুবিধা ভোগ করবেন।

 


এরপর তিনি বলেন, লা ইকরাহা ফিদ্দীন- ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই। আল্লাহর দেয়া দীন বা জীবন ব্যবস্থা হচ্ছে ইসলাম। আর এই জীবন ব্যবস্থা আল্লাহ ওহী নাযিল করে নবী-রসূলের মাধ্যমে মানব জাতিকে প্রদান করেছেন, যাতে মানুষ শয়তান দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বিপথগামী হতে না পারে, অশান্তি ও অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, পৃথিবীতে ফিৎ্না-ফাসাদ সৃষ্টি করতে না পারে।


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রুপির দাম তলানিতে, নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

রুপির দাম তলানিতে, নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

অবিবেচকভাবে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে: ড. দেবপ্রিয়

‘উন্নয়নের অংশীদার, প্রবাসীরাও দাবিদার’ শ্লোগানে রিয়াদে প্রবাস মেলা’র ১১ বর্ষে পদার্পণ ‍উদযাপন

‘উন্নয়নের অংশীদার, প্রবাসীরাও দাবিদার’ শ্লোগানে রিয়াদে প্রবাস মেলা’র ১১ বর্ষে পদার্পণ ‍উদযাপন

এবার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

এবার বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

হিলিতে ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

হিলিতে ব্যাডমিন্টন ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএফডির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএফডির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি: দোয়া চাইলেন তারেক রহমান

মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাঘের শুরুতে আবার আসছে শৈত্যপ্রবাহ

আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজহারীর মাহফিলের আগের রাতেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ

আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে

আজ ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’, শীর্ষে করাচিতে

পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক

পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাইকালে বিদেশি অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ নেতা আটক

ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব

ফ্যাসিস্টের দোসর সোহানা সাবা পেল ভারতে বড় দায়িত্ব

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে অসন্তোষ বিএনপির

মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ

মাগুরার শ্রীপুরে কৃষক দলের বিশাল কৃষক সমাবেশ

ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী?

টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল

টানা তৃতীয় বছরের মতো চীনের জনসংখ্যা কমল

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার

নদীতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় ড্রেজারসহ ৬ জন গ্রেফতার

টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান

টিউলিপের পতন, এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান

অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন

অভিষেকের আগে শি জিনপিংকে ট্রাম্পের ফোন

সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স

সিরিয়ায় আটক নাগরিকদের দেশে বিচার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফ্রান্স