কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের রাজনীতি

Daily Inqilab মো. নিজাম উদ্দিন

১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

 

এক.

আমাদের আসলে ইজম বেইজড পলিটিক্সের চেয়ে একটা ওয়েল ফেয়ার স্টেইট বানানোর খুব বেশি প্রয়োজন। সেটা কেমন, কিভাবে, কেন প্রয়োজন- সেই আলাপ অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। যা হচ্ছে না।

একটা ওয়েলফেয়ার স্টেইট বা কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য সার্ভস ওরিয়েন্টেড সেক্টরে রাষ্ট্রের অনেক বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। এই আকাংখার প্রতি ফলন আগামীর দিনের রাজনীতিতে সকল দলেই প্রেক্টিস হবে সেই স্বপ্ন দেখি,রাষ্ট্র চূড়ান্ত পর্যায়ে সেটি বাস্তবায়ন করবে সেই সেই স্বপ্ন দেখি।

বিশেষ করে পরিবহন সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে ওয়েলফেয়ার স্টেইট গড়তে হলে। ট্রেন সার্ভিস আরও অনেক বেশি এভেইলএবেল করতে হবে। সিটিতে গভমেন্ট বাস সার্ভিস বাড়াতে হবে, স্পেশাল সিটি ট্রেন লাগবে। সাধারণ মানুষের কম খরচে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা অবশ্যই কম খরচে এমনকি ভূর্তকি দিয়ে হলেও।রাষ্ট্রকে দানব বানানো যাবে না, শুধু মাত্র মানুষের কল্যাণই হবে রাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য। সেটা ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস সব কিছুর উর্ধ্বে ওঠে। ওয়েল ফেয়ার স্টেইট মানুষকে শুধু মাত্র মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করবে।

দুই.

ওয়েলফেয়ার স্টেইটে সকল শিশুর মানসম্মত শিক্ষার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকবে। সরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষার মান হবে সবচেয়ে উন্নত। দিল্লিতে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল যার কিছুটা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। দিল্লির সরকারি স্কুল গুলোতে আগে অভিভাবকরা বাচ্চাদের ভর্তি করাতে চাইতো না আর এখন সেখানে রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়।
এর একমাত্র কারণ ব্যবস্থার পরিবর্তন। বাংলাদেশের গ্রামে,উপজেলায়,পৌর সভায়, জেলায় মহানগরের সরকারি স্কুল কলেজের বর্তমান শিক্ষার মান নিয়ে কী খুব সন্তুষ্ট হতে পারবেন? নিশ্চয়ই নয়।এখানে অনেক কাজ এবং সংস্কারের মাধ্যমে একটি ওয়েল ফেয়ার স্টেইট বেইজড এডুকেশন সিস্টেম প্রমোট করা খুব জরুরী। অথচ এসব নিয়ে কথা অনেক কম হচ্ছে, যা অনেক বেশি হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে অনেক সহজলভ্য এবং উন্নত মানের করতে হবে। এটা একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের একেবারে বেসিক নিড। একটিও শিশুও যেন শিক্ষার শুধু অধিকার নয়, উপযুক্ত, মানসম্মত অধিকার থেকে যেন বঞ্চিত না হয়, একটি কল্যাণ রাষ্ট্র সেই অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়।

তিন.

চিকিৎসা বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীব মানুষের কাছে আজ বিলাসিতা মাত্র। অনেকেই এখনো এদেশে চিকিৎসাহীন অবস্থায় পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
কারণ চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার সেই শক্তি, সামর্থ অনেকের নেই! রাষ্ট্রের নিরবতা এক্ষেত্রে লজ্জার। জন সংখ্যার তুলনায় রাষ্ট্রীয় চিকিৎসার উদ্যোগ সীমিত। প্রয়োজনের তুলনায় হসপিটাল, ডাক্তার, নার্স,টেকনিশিয়ান এবং স্টাফ সংকট দৃশ্যমান। দরিদ্র্য মানুষের অসুস্থ হওয়া মানে চিকিৎসাহীন মৃত্যুর অপেক্ষা মাত্র। এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেইট বেইজড পলিটিক্স। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বিনে পয়সায় কিংবা নামমাত্র পয়সায় একজন নাগরিককে রাষ্ট্র চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে। এমন একটি রাষ্ট্র গড়তে পারলেই আমরা সব মানুষের চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে পারবো।

বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু কজন সেই অধিকার পায়? কেন পায় না? তার উত্তর রাষ্ট্রের উদ্যোগ ও পলিসির ঘাটতি। সেটা আমরা কীভাবে নিশ্চিত করতে পারি? আগামী দিনে আমাদের সেই রাজনীতি লাগবে।

চার.

কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে দুটি পক্ষের দায় এবং দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। তারা হচ্ছেন -

এক. রাজনৈতিক দল।
দুই. সরকার।

প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলই একেকটা মিনি গভমেন্ট। আজকের রাজনৈতিক দল গুলোই আগামী দিনে সরকার গঠন করবে। দলে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার পলিসি ইনক্লুড থাকলে সরকারে প্রভাব পড়বেই। দলের কর্মসূচী,পরিকল্পনা এবং দর্শনে ওয়েলফেয়ার স্টেইটের এটাচমেন্ট থাকলে সরকারে গিয়ে সেটা খুব সহজে বাস্তবায়ন সম্ভব। বিশেষ করে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে শিক্ষা, চিকিৎসা এবং পরিবহনের মতো সার্ভিস ওরিয়েন্টেড সেক্টর গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলোর ইনভলমেন্ট লাগবে অনেক বেশি।

পাঁচ.

মানুষকে আর্থিক ভাবে সক্ষম করে তোলার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ,
দারিদ্র্য দূরীকরণের বিশ্বাস যোগ্য রাষ্ট্রীয় পলিসি লাগবে। অসহায়, দারিদ্র্য, বিধবা, সন্তানহীন, সন্তানের ভরণপোষণ থেকে বঞ্চিত পিতা -মাতা, বৃদ্ধাশ্রম,এতিমখানা- এসব সেক্টরে সোশ্যাল সেফটিনেট কর্মসূচী বৃহৎ পরিসরে নিতে হবে এবং সেটা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে। এই কাজ গুলো একটি কল্যাণ রাষ্ট্র খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে করে থাকে। এগুলোর সাথে থাকবে সুস্থ বিনোদন এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা। এসব সমস্যা সমাধানের রাজনীতিই একটি রাষ্ট্রকে চূড়ান্ত পর্যায়ে কল্যাণ রাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেইটের দিকে ধাবিত করে।

শিক্ষা, চিকিৎসা, পরিবহন এই তিনটি সেক্টরকে সহজলভ্য করে তুলতে হবে। রাষ্ট্র মানুষের স্বপ্ন পূরণের বাধা নয় বরং সহায়তা করবে। আমাদের আসলে আগামী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তটি হতে হবে একটি নতুন ধারার কল্যাণ রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে। এই রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আমাদের মানসিকতা। ইজম বা মতবাদ এই পলিটিক্স বিনির্মাণে খুব বেশি ম্যাটার করে না।

পাঁচই আগস্টের সকাল বেলার মতো ঐক্য আর কোনো দিন আমরা গড়তে পারব কিনা জানি না। কিন্তু সেই ঐক্য কেন আমরা গড়ে ছিলাম? এই প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই এক এবং অভিন্ন। একটি বৈষম্যহীন সমাজ এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণই ছিল আমাদের একমাত্র স্বপ্ন, আকাংখা এবং প্রতিজ্ঞা। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র বা ওয়েলফেয়ার স্টেইট বেইজড পলিটিক্স বিনির্মাণ করেই আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সকল শহিদের রক্ত এবং জীবনের ঋণ কিছুটা শোধ করতে পারি।

লেখক: সহ-সভাপতি, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

চাকরি হারানো তিন সাংবাদিককে ধুয়ে দিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ
ডিমলায় প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানে পরীক্ষার্থীর উপর হামলা, সহপাটিসহ আহত ১০
হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে ছারছীনা পীর সাহেবের পূর্ণ সমর্থন
স্বামী অসুস্থ তাই প্যারোল চাই! স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাওয়ার পরামর্শ গণহত্যায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট দীপু মনিকে
ঢাকাসহ ৮ জেলায় বজ্রপাতের সতর্কতা জারি
আরও
X

আরও পড়ুন

‘দেশের প্রচলিত আইনে শ্রমিকেরা পুঁজিপতিদের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে’

‘দেশের প্রচলিত আইনে শ্রমিকেরা পুঁজিপতিদের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে’

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মজুরি কমিশন গঠনের দাবি জাগ্রত পার্টির

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মজুরি কমিশন গঠনের দাবি জাগ্রত পার্টির

শেরপুরে ভারতীয় চিনি, মদ ও গাজাসহ গ্রেপ্তার ৫

শেরপুরে ভারতীয় চিনি, মদ ও গাজাসহ গ্রেপ্তার ৫

জিয়াউর রহমান ছিলেন শ্রমিকদের প্রকৃত বন্ধু: নুরুজ্জামান লিটন

জিয়াউর রহমান ছিলেন শ্রমিকদের প্রকৃত বন্ধু: নুরুজ্জামান লিটন

মুরাদনগর নোমান কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হলেন শরীফুল ইসলাম

মুরাদনগর নোমান কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হলেন শরীফুল ইসলাম

বর্ণিল আয়োজনে পটুয়াখালীতে মহান মে দিবস পালিত

বর্ণিল আয়োজনে পটুয়াখালীতে মহান মে দিবস পালিত

পটুয়াখালীতে জেলা শ্রমিক দলের আয়োজনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত

পটুয়াখালীতে জেলা শ্রমিক দলের আয়োজনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত

চাকরি হারানো তিন সাংবাদিককে ধুয়ে দিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

চাকরি হারানো তিন সাংবাদিককে ধুয়ে দিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পাশে থাকবে বিএনপি : ওয়াহাব আকন্দ

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পাশে থাকবে বিএনপি : ওয়াহাব আকন্দ

গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্মরণ ও আ‘লীগ নিষিদ্ধের দাবি করলো সিলেটে এনসিপি

গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্মরণ ও আ‘লীগ নিষিদ্ধের দাবি করলো সিলেটে এনসিপি

টঙ্গীতে বজ্রপাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

টঙ্গীতে বজ্রপাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে- ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান

কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে- ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের নতুন কমিটি সভাপতি নাজমুল সম্পাদক আনিসুজ্জামান

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের নতুন কমিটি সভাপতি নাজমুল সম্পাদক আনিসুজ্জামান

মুজিবনগরে কৃষকের ৩০০ ড্রাগন গাছ কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

মুজিবনগরে কৃষকের ৩০০ ড্রাগন গাছ কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

“বিক্ষোভে নতি, রুয়া নির্বাচনে ফেরার আভাস: কালই গঠিত হচ্ছে নতুন অ্যাডহক কমিটি”

“বিক্ষোভে নতি, রুয়া নির্বাচনে ফেরার আভাস: কালই গঠিত হচ্ছে নতুন অ্যাডহক কমিটি”

সিলেটে লাল পতাকা মিছিল করলো সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট

সিলেটে লাল পতাকা মিছিল করলো সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট

সীমান্তে আরাকান আর্মির কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট মানুষ

সীমান্তে আরাকান আর্মির কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট মানুষ

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু

এবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

এবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না: আমীর খসরু

জনগণ নির্বাচন ঠেকাতে চাওয়া শক্তিকে ক্ষমা করবে না: আমীর খসরু