গাজা রক্ষায় মুসলিম রাষ্ট্রগুলো কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম | আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

 

 
গাজায় যা হচ্ছে তা অমানবিক, বর্বর ও চরম নিষ্ঠুরতা। স্বজ্ঞানে একটি জাতিকে নিধনের চেষ্টা। মার্কিনীরা চাইছে গাজাবাসীকে তাদের ভূখ- থেকে বিতাড়িত করে বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন করতে। বর্তমানে তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সক্ষমতা মুসলিম বিশ্বের নাই। তেলের প্রধান উৎপাদক এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও অন্যান্য দেশ। মুসলিম বিশ্ব এখন একক ভাবে তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখেনা। শুধু মুসলিম বিশ্বের ঐক্য দিয়ে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, এর সাথে দরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে ওয়াকফ সংশোধনী বিল অহেতুক সমস্যা তৈরির করবে, যা না হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি একটি রাজনৈতিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই আইনটি মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণœ করবে। বাংলাদেশের পাসপোর্টে “ইসরাইল ব্যতিত বিশ্বের সব দেশের জন্য প্রযোজ্য”, বাক্যটি পুনরায় সংযোজন করা অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত। এতে দেশের মানুষের জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। আজ শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে গাজা রক্ষায় মুসলিম বিশে^র ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

 

ছায়া সংসদের শুরুতেই ফিলিস্তিনীদের উপর বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গভীর সঙ্কটে আজ ফিলিস্তিন। রক্তে ভাসছে গাজা। ইসরাইলি গণহত্যার হাত থেকে নারী-শিশু, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক কেউই রেহাই পাচ্ছে না। গাজাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা হয়েছে। জঘন্যতম বর্বরোচিত হামলার শিকার হয়ে গাজা এখন ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৃত্যুপুরি গাজায় খাদ্য নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, ওষুধ নেই, চিকিৎসা নেই। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষের বেঁচে থাকার আকুতি। হাসপাতালে, পথেঘাটে লাশের সারি। চতুর্দিকে মরা মানুষের গন্ধ। গণকবরে পরিণত করা হয়েছে গাজাকে।

 

আন্তর্জাতিক চাপে যতটুকু ত্রাণ দেওয়া হয়েছে গাজায় তার চেয়েও বেশি অশ্রু ও রক্ত ঝরেছে। কিন্তু যে যৎসামান্য মানবিক ত্রাণসহায়তা দেওয়া হতো তাও এখন বন্ধ রেখেছে ইসরাইল। বাংলাদেশের মানুষ ফিলিস্তিনের পক্ষে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন করা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন বিভক্তি নেই। বাংলাদেশের মানুষ মনে করে ফিলিস্তিনবাসীর এই লড়াই একার কোনো লড়াই নয়। গাজার মানুষের সমর্থনে বাংলাদেশে “মার্চ ফর গাজা” প্রমাণ করেছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ লড়াই আমাদেরও লড়াই। সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। চিৎকার করে গাজা বাসীর সমর্থনে চোখের পানি ফেলেছে। সমাবেশে আমাদের অনেক তরুণ গাজার সমর্থনে যুদ্ধে যাবারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিশ্ব বিবেকের কাছে বাংলাদেশের মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছে। বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিন প্রতি সমর্থন বাড়লেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলো ঐক্যবদ্ধ ভাবে গাজা রক্ষায় তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

 

ফিলিস্তিনের সঙ্কট নিরসনে ওআইসি গঠিত হলেও তাদের এই চরম দুর্দিনে সংস্থাটি চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। আরব লীগও কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের উপর তারা নির্ভরশীল। তবে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন এই দুইটি রাষ্ট্র পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করতে পারে তার জন্য জাতিসংঘের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোকে পাশে নিয়ে জাতিসংঘ ইসরাইল ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতা উদ্যোগ নিতে পারে। তাই মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

 


তিনি আরো বলেন, গাজায় যখন মুসলিমরা বর্বরোচিতভাবে হত্যার শিকার হচ্ছে, তখনই ভারতের পার্লামেন্টে মুসলিম স্বার্থ বিরোধী ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ পাশ করা হয়েছে। মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মালিকানা ও অধিকার হরণের অপচেষ্টা হিসেবে বিজেপি সরকার মুসলমানদের উপর ধারাবাহিক নির্যাতনের আর একটি অপচেষ্টা বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল। ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও অমুসলিমদের সদস্য করে মুসলিমদের দানকৃত মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান ও এতিমখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দখল করার অভিপ্রায় রয়েছে নতুন এই আইনে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “মুসলিম বিশে^র ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে গাজাকে রক্ষা করতে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, রোকেয়া পারভীন জুই, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাংবাদিক ড. শাকিলা জেসমিন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

 


বিভাগ : মহানগর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

৫ সচিবকে ২০ মে প্রত্যাহারে আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত
আওয়ামী যড়যন্ত্রকারীদের কোনো সুযোগ দেয়া যাবে না - আমিনুল হক
প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে: আইইবি
বাংলাবাজারে দোকানে আগুন
ঢাকার মূল সড়কে কোনো রিকশা চলতে পারবে না: ডিএনসিসি প্রশাসক
আরও
X
  

আরও পড়ুন

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

পুঁজিবাজারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

ক্রিলিক একটি পরিপূর্ণ জ্ঞান ভান্ডারে পরিণত হবে -এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

হাইকোর্টের আদেশ চেম্বারে স্থগিত নগদে প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

পুলিশ কোনো কিলার ফোর্স হতে পারে না : আইজিপি

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে লুকিয়ে ছিল তারা এখন সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

সিএজি কার্যালয়ে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

পদ্মা সেতু দিয়ে কি নদীর ক্ষতি করছেন না, প্রশ্ন মৎস্য উপদেষ্টার

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান

অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের সাঁড়াশি অভিযান