সিন্ডিকেটের কবলে ব্রয়লার মুরগি
০৯ মার্চ ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫০ পিএম
হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ব্রয়লার মুরগির বাজার। দু’সাপ্তাহ আগেও বয়লার মুরগির বিক্রি হতো ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায়। বয়লার মুরগিও সি-িকেটের কবলে পড়ে গেছে। বয়লার মুরগির সিন্ডিকেট রাতে দাম বেঁধে দিয়ে রাজনীতি ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে এসএমএস করে দেয়। অতপর বিক্রেতারা সেই দামে বিক্রি করেন। আর মুরগি ও ডিমের মূল্য বেঁধে দেয়া সিন্ডিকেট কোম্পানী হচ্ছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্মের প্রতি কেজি মুরগির পেছনে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তারা বিক্রি পাইকারি পর্যায়ে করছে ১৯০ থেকে ২০৭ টাকা।
জানতে চাইলে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, খুচরা খামারি পর্যায়ে এই খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে আমরা যারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুরগির উৎপাদন করি, তাদের ২০ টাকার মতো কমে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে সিন্ডিকেট, করপোরেট গ্রুপ ও অদৃশ্য যে এসএমএসর কথা বলা হচ্ছে, আমরা তা খতিয়ে দেখব। আমাদের কাছে আগেও এই বিষয়গুলো এসেছে।
ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রতি কেজি মুরগি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদনে খরচ হয় করপোরেট পর্যায়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে খুচরা খামারি পর্যায়ে এই খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। গতকাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য উঠে এসেছে।
সভায় পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। পরে সভায় উপস্থিত থাকা কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকেও একই দাবি করা হয়।
সভা শেষে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, রাতের বাজারগুলোতে করপোরেট কোম্পানির লোক থাকেন। তারা করপোরেট কোম্পানিকে রাতেই দাম জানিয়ে একটি এসএমএস করেন। পরে সকালে করপোরেট কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএস মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। তা ছাড়া কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ আছে। সেখান থেকেও এসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই এসএমএসর মাধ্যমে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সেই দামটিই বাজারে বাস্তবায়ন হয়। করপোরেট কোম্পানি কম দামে দিতে বললে সবাইকে কম দামে বিক্রি করতে বলা হয়। আবার বেশি দাম দিলে সবাইকে বেশি দামে বিক্রি করতে বলা হয়। তিনি আরো বলেন, যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেয়। আর যখন আমাদের হাতে পণ্য থাকে না, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমাদের হাতে পণ্য নেই, এখন মুরগির কেজিপ্রতি দাম ২৫০ টাকা। সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানির হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় মুরগির বাজার এখন অস্থিতিশীল।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়ায় অধিকাংশ ছোট খামারি ক্ষতিতে পড়েছে। অনেকে খামার বন্ধ করে রেখেছে এবং বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরের মে, জুন জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার কোনো চাহিদা ছিল না। এর জন্য বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাচ্চার দাম যখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল, তখন কিন্তু আমরা বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি করেছি। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্রয়লারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে ব্রয়লারে মূল্য বেড়েছে। তাই খামারিরা এখন লাভে ব্রয়লার বিক্রি করছে। এখন ব্রয়লারের বাচ্চার চাহিদাও বেড়ে গেছে। বাচ্চা উৎপাদনে খরচ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়। আবার বাচ্চার উৎপাদন বাড়লে দাম কমবে। তখন মুরগির দামও কমে আসবে। এটা একদিনে হবে না। আস্তে আস্তে হবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ক্ষুদ্র খামারিরা করপোরেটদের সঙ্গে পারছেন না। তাদেরকেও টিকিয়ে রাখতে হবে। ১৪০ টাকার মুরগি কেন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে কেউ জড়িত থাকলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে দোকানে ব্রয়লার মুরগি কত করে কেনা হয়েছে এবং কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কৃত্রিমভাবে বাজার অস্থিতিশীল করায় এর চাপ সাধারণ ভোক্তার ওপর পড়ছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন
ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক
সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে
লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর
এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের
মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা
সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান
কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!
হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস