ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় আধিপত্য হারাচ্ছে ডলার?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৯ মার্চ ২০২৩, ১১:৩১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫০ পিএম

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে মার্কিন ডলার প্রায় আট দশক ধরে অর্থ জগত শাসন করছে। কিন্তু এখন আরো একটি যুদ্ধ অনেক দেশকে লেনদেনের জন্য ডলারকে পরিহার করে বিকল্প মুদ্রা অন্বেষণ করার দিকে ধাবিত করছে। ফলে, মুদ্রার রাজা ডলারের ভবিষ্যতের আধিপত্য প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা আর্থিক নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির প্রায় অর্ধেক (৩০হাজার কোটি ডলার) হিমায়িত করেছে এবং আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে বড় রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে অপসারণ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ডলারের অস্ত্রায়ণ বলে অভিহিত করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বৃহত্তম ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া এবং চীনকে তাদের বিকল্প আর্থিক অবকাঠামো প্রচলনে উৎসাহিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ডলারের অস্ত্রায়ণের ভয়ে এর উপর নির্ভরতা হ্রাস করার চেষ্টার হিড়িক পড়েছে বিভিন্ন দেশে। কেবল বেইজিং ও মস্কোই নয়, ভারত থেকে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত দেশ এবং অঞ্চলগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলারের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার লক্ষ্যে বিকল্প অর্থ ব্যবস্থাগুলো প্রচলনের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে। রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ও নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞদের মতে, অ-ডলারকরণ উদ্যোগের কেন্দ্রবিন্দুতে এই ভয় কাজ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র একদিন তাদের বিরুদ্ধে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যেভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। বর্তমানে, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্বারা পরিচালিত প্রায় ৬০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি ডলারে লেনদেন করা হয়। তবুও, এটি ২০০০ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ থেকে অবনতি চিহ্নিত করেছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্বব্যাপী আর্থিক শাসনের ধীর পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে।

যদিও, ইউরো প্রবর্তনের পর থেকে ১৮ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে এখনও ২০ শতাংশের নিচে রয়েছে, চীনের ইউয়ানের মূল্য ২০১৬ সালের পর থেকে দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যদিও এটি বৈশ্বিক স্থিতির তিন শতাংশেরও কমে রয়েছে। ব্রাসেলস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থার ফেলো ব্রুগেল অ্যালিসিয়া গার্সিয়া হেরেরো আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘ফরেক্স রিজার্ভে মার্কিন ডলারের পতনশীল অংশীদারিত্বের হিসাবে আমরা আরো একটি বহুপাক্ষিক বিশ্বের দিকে স্পষ্টভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।’ মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্ধেক স্থিতি হিমায়িত করার পাশাপাশি সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর লেনদেন পরিচালনার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করায় অনেক দেশকে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি অ-ডলারকরণ প্রচেষ্টাকে নতুনভাবে প্রেরণা দিয়েছে।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির ফেলো জংগুয়ান জো লিউ বলেন, ‘এবারে সত্যিই রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো অর্থ জগতে পারমাণবিক বোমার মতো।’ জেনেভা সেন্টার ফর সিকিউরিটি পলিসির নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞ এবং নির্বাহী আহমদী আলী বলেছেন, ‘এ কারণেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি মার্কিন ডলার থেকে সক্রিয়ভাবে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। চীন তার মার্কিন ট্রেজারি বন্ডগুলো থেকে মুক্ত হচ্ছে, যা ডলারের মজুদ রাখার জন্য দেশগুলো ব্যবহার করে থাকে। এটি ইউয়ানে বাণিজ্য করার জন্য অন্যান্য দেশের সাথে চুক্তির বিষয়েও আলোচনা করে চলেছে।

ফেব্রুয়ারিতে ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষণা করেছে যে, এটি প্রথমবারের মতো ইউয়ানে চীনের সাথে বাণিজ্য করার অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সেপ্টেম্বরে একই রকম ঘোষণা করেছে। একই মাসে চীন-অধ্যুষিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্যরা তাদের স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য বাড়াতে সম্মত হয়েছে। চীন ছাড়াও জোটটিতি রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান এবং কিরগিজস্তান রয়েছে। গত ডিসেম্বরে চীন ও সউদী আরব ইউয়ানে তাদের প্রথম লেনদেন চালিয়েছে। রাশিয়া এরই মধ্যে ২০২৩ সালে তার সমস্ত তেল ও গ্যাস উদ্বৃত্ত রাজস্ব ইউয়ানে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন ডলারের মূল্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর চেয়ে ১০ শতাংশেরও বেশি এবং এক দশকের আগের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। যে দেশগুলো রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে জ্বালানী, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনে, তাদের জন্য নাটকীয়ভাবে এটি আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে তোলে। গত সপ্তাহে ভারতে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে, দু›দেশ তাদের মুদ্রা দিরহাম ও রুপিতে ব্যবসায়ের জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদারদের অন্যতম।

জানুয়ারিতে ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন যে, রাশিয়া, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং মরিশাস সকলেই রুপিতে ভারতের সাথে বাণিজ্য করতে আগ্রহী। এবং বিশ্বব্যাপী শিরোনাম তৈরি করা একটি ঘোষণায় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টগণ জানুয়ারিতে বলেছিলেন যে, তারা বাণিজ্য লেনদেন নিষ্পত্তি করার জন্য একটি অভিন্ন মুদ্রার প্রচলন করবেন। জো লিউ বলেন, ‘আমি বলব এটি আরো ভাল যে, আমাদের ব্যবসা করার জন্য একটি গ্রহনযোগ্য মুদ্রা রয়েছে, কারণ এটি এপর্যন্ত ভাল কাজ করেছে। তবে, এর জন্য শর্তটি হ›ল যুক্তরাষ্ট্র ডলারকে অস্ত্র বানাবে না।’ সূত্র: আল-জাজিরা।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
আরও

আরও পড়ুন

অবারও এমবাপের পেনাল্টি মিস, হেরে রিয়ালের সুযোগ হাতছাড়া

অবারও এমবাপের পেনাল্টি মিস, হেরে রিয়ালের সুযোগ হাতছাড়া

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর সহযোগীর গলায় ফাঁস লাগনো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রীর সহযোগীর গলায় ফাঁস লাগনো ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

যুদ্ধ কি সত্যিই কখনও থামে? মুক্তি কি আদতেই ঘটে জীবনের?

যুদ্ধ কি সত্যিই কখনও থামে? মুক্তি কি আদতেই ঘটে জীবনের?

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে  চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি

ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি