ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে সরকারের বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি দেশবিরোধী বলে মনে করে বিএনপি। চুক্তিটিকে দেশবিরোধী, জনগণ বিরোধী অভিহিত করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি দেশবিরোধী, জনগণ বিরোধী। এই চুক্তি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুখাতে যে ইনডেমনিটি আইন করা হয়েছে সেই আইন বাতিল করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘মহাবিপর্যয়ে বিদ্যুৎ খাত : গভীর খাদে অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন এ্যাবের মহাসচিব প্রকৌশলী হাছিন আহমেদ।

মির্জা ফখরুল বলেন, আদানির চুক্তি বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে। এটি একটা ভয়ংকর অসম চুক্তি, দুরভিসন্ধিমূলক চুক্তি। এই কথা শুধু আমরা বলছি না, এটা প্রথম এসেছে ওয়াশিংটন পোস্টে। চুক্তির সব কপি এখন প্রত্যেকটি মিডিয়া হাউজের কাছে আছে এবং যারা বিদ্যুৎ খাত নিয়ে কাজ করে তাদের কাছে আছে। এটা এখন ওপেন সিক্রেটে চলে এসেছে। আজকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রশ্ন উঠেছে যে, কিভাবে তারা (সরকার) এরকম চুক্তি করতে পারে?

কেনো এই ধরনের চুক্তি সরকার করছে প্রশ্ন রেখে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এই সরকারের বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কোনো দয়া-মায়া নেই, দায়বদ্ধতা-জবাবহিদিতা নেই। তারা চুরি করবে, বিদেশে টাকা পাঠাবে, বিদেশে প্রসাদ তৈরি করবে, ব্যবসা করবে, বিলাসী জীবনযাপন করবে আর আমাদের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে নিয়ে যাবে। সরকার এটা কেনো করছে? কারণ তারা টাকা দিয়ে ভবিষ্যতে আবার নির্বাচন কিনে নেবে। যারা নির্বাচন চালায়, পরিচালনা করে এমন বিভিন্ন সংগঠনগুলোকে তারা ক্যাশ টাকা দিয়ে দেবে। নির্বাচন কমিশন এটা মানতে চায় না। কিন্তু প্রিজাইডিং অফিসার থেকে শুরু করে ওই পর্যন্ত কিন্তু খাম চলে যায়, পুলিশের কাছে খাম যায়, বিজিবির কাছে খাম যায়। এটা সত্য, ২০১৮ সালে ঘটেছে।

তিনি বলেন, এখন আবার নতুন কৌশল হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন খবর-টবর শুনি। উনারা বলছেন যে, আগের মতো তো পারা যাচ্ছে না পুলিশ দিয়ে, ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে। নতুন কৌশল কি? আনসার-ভিডিপি দিয়ে করানো হবে। এখন যারা নির্বাচনের খবর রাখেন, তারা জানেন, এবার যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো হয়ে গেছে সেই নির্বাচনে হঠাৎ দেখা গেলো কাউন্টিং করতে করতে একজন চেয়ারম্যান এগিয়ে আছেন তারপর দেখা গেলো আরেক এগিয়ে চলে গেলো। ওখানে দেখা যাচ্ছে যে ফলাফল লিখছেন ওইটা বদলে দিচ্ছে। তার একজন ভিক্টিম কুমিল্লার সাক্কু। আমার এলাকায় একজন চেয়ারম্যান ২৫ বছর ধরে আছেন, তাকে এভাবে ১৯ ভোটে হারিয়ে দিলো। এই হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল।

সরকার বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে লুট করছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে লুট করছে, জনগণের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। তারা খুব বড় বড় কথা বলে যে, মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে, সিঙ্গাপুর বানিয়ে ফেলেছে, মালয়েশিয়া বানিয়ে ফেলেছে। আরে মালয়েশিয়ায় যদি পত্রিকায় এরকম কয়েকটা খবর বেরুতো তার পরের দিন মালয়েশিয়ার ওই মন্ত্রিসভার কল্লাটা যেতো। এটা বাস্তবতা।

তিনি বলেন, প্রতারণা ছাড়া ওদের (সরকার) কোনো কৌশল নেই। অথচ প্রায় বক্তৃতায় বলেন যে, জনগণই হচ্ছে দেশের মালিক। সেই জনগণকে আপনি গত ১৪ বছর ধরে প্রতারণা করে অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। ওই যে একটা দিন ভোট দেয়ার অধিকার ছিল, সেটা নিয়েও ২০০৮ সাল থেকে প্রতারণা শুরু করেছো। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছো। একটা সরকার কি করে এতো অনৈতিক কাজ করতে পারে, কি করে সংসদে মিথ্যা কথা বলে-ভাবা যায় না! আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই সরকার তারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নই শুধু না, জনগণের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

১০টি গ্রুপের ৫০ হাজার কোটি টাকা লুট:
মির্জা ফখরুল বলেন, ১০টি গ্রুপ সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী, তারা ৫০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। তারা হলেন, সামিট, ইউনাইটেড, এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল, বাংলা ক্যাট, ওরিয়ন, আরপিএসএল, এফবিসিএল, মোহাম্মদী গ্রপ, হোসাফ গ্রুপ, ডরিন। এরা সবাই এই শাসক গোষ্ঠির সঙ্গে জড়িত।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থায় চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনি যদি হাসপাতালগুলোতে যান সাধারণ মানুষের যে কি কষ্ট আপনি চিন্তা করতে পারবে না। আমি কিছু দিন আগে আমার এক আত্বীয়কে দেখতে পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দেট ইজ বেস্ট হসপিটাল ইন দ্যা কান্ট্রি। ওখানে দেখি যে কেবিন সেই কেবিনে চেয়ার একটা ছিলো দেয়ালের সঙ্গে লাগানো। আমি বসতে গেলে আমার আত্বীয় বললেন, ওই চেয়ারে বইসেন না, ওর একটা পায়া ভাঙা। এটা কষ্টের কথা, দুঃখের কথা। এমন দেশ বানিয়েছি যে, আমরা সাধারণ মানুষেরা ৫০ বছর পরে তারা একটা চিকিৎসার সুযোগ পাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে মানুষের চরম দুরাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিনা ওয়ারেন্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে দলটির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, নিরবকে (সাইফুল আলম নিরব) আগে, বুধবার মুন্না (মোনায়েম মুন্না ও এসএম জাহাঙ্গীর) গ্রেফাতার করা হয়েছে। কোনো ওয়ারেন্ট নেই, গোলমাল নেই। আজকে গোটাকে দেশ একটা ডীপ স্টেট তৈরি করে ফেলেছে। সার্ভেলেন্স। ঘর থেকে বেরুলে ধরা পড়ছে। বাসায় বসে কথা বললে ধরা পড়ছে। আবার একটা আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে ডাটা প্রটেকশন ‘ল’। এই আইন হলে ইউ আর ফিনিসড। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর কথা বলেছি। আজকে এরকম ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট মানুষকে নির্যাতনকারী এই সরকার ক্ষমতায় দখল করে আছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে পদত্যাগের জন্য। এছাড়া এই দেশ বাঁচবে না। এজন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এ্যাবের সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে যুগ্ম মহাসচিব কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী, সাবেক এমপি আবদুস সোবহান, শাম্মী আখতার, এ্যাবের আশরাফ উদ্দিন বকুল, শাহজাহান আলী, গোলাম মাওলা, মোস্তফা-ই-জামান সেলিম, একেএম জহিরুল ইসলাম জহির, নিয়াজ উদ্দিন ভুঁইয়া, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, সুমায়েল মুহাম্মদ, মাহবুবুল আলম, মো. হানিফ বক্তব্য রাখেন।