খুলনায় মাদক ব্যবসায় সুন্দরীরা প্রতিনিয়ত বোকা বানাচ্ছে প্রশাসনকে

Daily Inqilab ডিএম রেজা, খুলনা থেকে

১৮ মার্চ ২০২৩, ১০:৪৭ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:১৯ পিএম

গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা। খুলনা মহানগরীর ডাকবাংলো এলাকার একটি অভিজাত হোটেলের ওয়েটিং রুমে বসা দুই তরুণ। কিছুক্ষণ পর সেখানে একজন সুন্দরী তরুণীর আগমন। চালচলন বেশভুষায় তাকে অভিজাত পরিবারের সদস্য বলেই মনে হয়। তিন তরুণের হাতে ছোট একটি শপিং ব্যাগ দিয়ে তরুণীটি দ্রুত বাইরে চলে গেলেন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে কিছুক্ষণ পর সন্দেহভাজন হিসেবে ওই তিন তরুণ আটক হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিদেশী একটি মদের বোতল। অনুসন্ধানে জানা যায়, হোটেলের ওয়েটিং রুমে আসা তরুণীটিই তাদের মদ সরবরাহ করেছিলেন এবং তিনি একজন মাদক বিক্রেতা।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যমতে সমগ্র খুলনায় মাদক বিক্রির সাথে জড়িত রয়েছেন সাড়ে ৩ শতাধিক নারী। যাদের মধ্যে একশ’র উপরে রয়েছে অভিজাত পরিবারের মেয়েরা। যাদের দেখে কখনই বোঝার উপায় থাকে না তারা মাদক বিকিকিনির সাথে জড়িত থাকতে পারে।

একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িত, মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী পরিচয়ে বেশ কিছু নারী খুলনায় মাদক ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন। যারা সমাজের উঁচু মহলে চলাফেরা করেন। মাদকের ব্যবসা করে তাদের অনেকেই এখন লাখ লাখ টাকার মালিক। দামি গাড়িতে চলাফেরা করেন। অভিজাত হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেন। এসবের আড়ালে তারা মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। তিনি আরও জানান, দু একজন আছেন তারা নিজেদের মিডিয়াকর্মী পরিচয় দেন। অখ্যাত অপরিচিত কিছু পত্রিকার নাম ব্যবহার করে তারা প্রশাসনের কাছ থেকে ফায়দা লুটার চেষ্টা করেন। প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের সাথে তাদের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক । এসব কারণে তাদের প্রশাসন ধরতে পারে না। আবার প্রশাসনকেও নানাভাবে তারা বোকা বানান। তাদের চালচলনে প্রশাসন বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কিছু অভিজাত পরিবারের সুন্দরী নারী সদস্যকে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাদের গ্রেফতার করা হলে এমন সব পর্যায় থেকে তদবির করা হয় যে আমরা বিব্রত বোধ করি। একপর্যায়ে তাদের ছেড়েও দেয়া হয়। রাজনৈতিক মহল ও প্রভাবশালী মহলের তদবির না থাকলে তাদেরকে আমরা সহজেই গ্রেফতার করতে পারতাম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের বড় একটি অংশ নারীরা। তাদের মধ্যে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীও রয়েছে। কেউ কেউ সঙ্গ দোষে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। আবার কেউ কেউ অল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের প্রলোভনে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়েছে। তারা যখন মাদক বহন করে, সন্দেহভাজন হিসেবে তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে প্রশাসনকে বেকায়দায় পড়তে হয়। এর আগে খুলনার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রীর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে বিষয়গুলো ধামাচাপা পড়ে যায়।

খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে পুরুষেরা যেমন জড়িত, নারীরাও জড়িত। অপরাধী যেই হোক, তাকে আমরা আইনের আওতায় আনতে কুণ্ঠাবোধ করি না। তিনি আরও বলেন, অভিজাত পরিবারের তরুণ তরুণী অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়ে মাদক সেবন ও বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের বিষয়ে পরিবারকে সচেতন থাকতে হবে।

খুলনা মেট্রোপলিটন উপ পুলিশ কমিশনার এফএন্ডবি শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, এ মুহূর্তে মাদক একটি ভয়াবহ সমস্যা। পুলিশ আন্তরিকভাবে মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। উঠতি প্রজন্মের মধ্যে ব্যপকভাবে মাদকের বিস্তার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নারীরাও এ কাজে লিপ্ত হচ্ছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন উপ পুলিশ কমিশনার দক্ষিণ বিভাগের মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, খুলনাকে মাদকমুক্ত রাখতে প্রতিদিনই মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। তবে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অভিনব পদ্ধতিতে মাদক বিক্রি করছে। আমাদের কাছে যখনই এ ধরনের অভিযোগ আসছে, আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং তাদের আইনের আওতায় আনছি। খুলনা মহানগরীতে এ বছর প্রায় এক হাজার মাদক সংক্রান্ত মামলা হয়েছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

প্রোটিন উদ্ভাবনে নতুন উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিচ্ছে ইউএসএসইসি-এর পিচ-টু-ফর্ক

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিতে হারপিক ও সাজেদা ফাউন্ডেশন সমঝোতা

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপি ভোট বর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে : শামসুজ্জামান দুদু

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

ভালুকার সেই শিশু দত্তক নিতে ৪ আবেদন, সিদ্ধান্ত রোববার

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

যক্ষা রোগ প্রতিরোধে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

সুনামগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের দাফন সম্পন্ন

পানির সংকট

পানির সংকট

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

নীতি ও দুর্নীতির লড়াই

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

মামলাজট কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

ইসলামী আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক বেলায়েত হোসেনের দাফন সম্পন্ন

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দালালীকে পেশা হিসাবে নেওয়া প্রসঙ্গে।

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হামাস ভয়াবহ আঘাতের মুখে ইসরাইল

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

পথ হারিয়েছে বিশ্ব : জাতিসংঘ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন জাহাজের অনুপ্রবেশ

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি না করা

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

গাজা ইস্যুতে বন্ধু হারাচ্ছে ইসরাইল নানামুখী চাপে নেতানিয়াহু

তাইওয়ান পার্লামেন্টে তুমুল মারামারি

তাইওয়ান পার্লামেন্টে তুমুল মারামারি