খুলনায় চলমান উন্নয়ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি ধুলোবালি-কাদাপানিতে নাজেহাল নগরবাসী
১৯ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৭ পিএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১২ পিএম
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা মহানগরীর সড়ক ও ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। এর মধ্যে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা সড়ক মেরামত ও উন্নয়নে এবং ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে পানিবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীরগতি জন সাধারণরে জন্য চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাসের পর মাস একেকটি সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। কখনো সংস্কারের জন্য সড়ক কাটা হচ্ছে। কখনো ড্রেন নির্মাণের জন্য রাস্তা কাটা হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের কয়েক বছর ধরে এই কাটাকাটির কারণে নগরবাসী চরম নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টি মৌসুম চলে আসায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে। কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক একাধিকবার প্রকল্পগুলো দ্রুত কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বিআইডিসি রোডে ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হলেও সড়কের বড় কয়েকটি অংশের কাজ বাকী রয়েছে। খালিশপুর কবরস্থান থেকে খালিশপুর ক্লিনিক সংযোগ সড়কে কার্পেটিং কাজ পুরো বাকী রয়েছে। পুরাতন জঙশন রোডে ড্রেন নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। খানজাহান আলী সড়কের পাশে ড্রেনের কাজ কয়েকদির আগে শেষ হলেও সড়ক সংস্কার বাকী রয়েছে। শামসুর রহমান রোডে ঢালাই ও কার্পেটিংএর কাজ বাকী। খান এ সবুর রোডের পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। আহসান আহমেদ রোড সংস্কার বাকী রয়েছে। সোনাডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড-নতুন রাস্তার মোড় সংযোগকারী রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিদিন এ সকল সড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। কয়েকটি সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় বন্ধ রয়েছে। শীতকাল ধুলাবালির কারণে নগরবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। এবার বৃষ্টি এসে যাওয়ায় কাদাপানিতে দুর্ভোগ আরো বেড়েছে।
সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীতে পানিবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া শহরের সাথে থাকা রূপসা ও ভৈরব নদীতে পানি বাড়লেও নগরীর বেশ কিছু স্থান তলিয়ে যায়। অন্যদিকে রাস্তাঘাটগুলোরও বেহাল দশা। এ অবস্থায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩১টি ওয়ার্ডের পানিবদ্ধতা নিরসন ও রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প দুটি পাশ হয় ২০১৯ সালে এবং এর কাজ ২০২৩ সালের অর্থাৎ চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যে গতিতে কাজ হচ্ছে তা নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, রাস্তা নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হতে যাচ্ছে কিন্তু আধুনিক ড্রেনেজ প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনে শেষ হবে কি না তা বলা যাচ্ছে না। খুলনাবাসী এবার যে ড্রেনগুলি দেখছেন তা হলো, ড্রেনগুলি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানি প্রবেশ ও বের হওয়ার আউটলেট আছে। খুলনা সিটিতে এই প্রথম আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম চালু হচ্ছে। অতীতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শুধু ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, পানি বের হওয়ার কোন রাস্তা ছিলনা। ছিলনা কোন কনসালটেন্ট। ফলে অতীতে এত টাকা দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করে পানিবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়নি। এবার কুয়েট প্রকৌশলীদেরকে নিয়ে ডিজাইন করে এই আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই উন্নয়ন কাজে বাধা প্রদানকারী নগরবাসীর সংখ্যা ছিল বেশ কিছু। ফলে ড্রেন নির্মাণ কাজ মাঝ পথে থমকে যায়। শহরে বাড়ি নির্মাণের সময় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনেকেই বাড়ি বানিয়েছেন। যখন বাড়ির সীমানা ঘেষে ড্রেনের জন্য গর্ত খোড়া হয় তখন থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে অনেকের। ভবনের ভিতে গার্ডওয়াল না থাকায় ড্রেনের গর্ত খোঁড়ার সাথে ভবন হেলে পড়ার উপক্রম হয়। এই কাছে বাধা প্রদানে কাজ অনেকদিন থমকে থাকে। এরপর করোনার দুবার ধাক্কায় বেশ কয়েকমাস কাজ বন্ধ থাকে। ২০২২ সালে কাজ করতে গিয়ে রড, সিমেন্ট, খোয়াসহ সব নির্মাণ সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ হলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। অপরদিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সড়ক প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের জুন মাসে। এই প্রকল্পে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত অর্থ ছাড় করা হয়েছে ৪২১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
ড্রেনেজ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত প্রকল্পে অর্থ ছাড় হয় ৩৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। কিন্তু ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ১৯২ কিঃ মিঃ ড্রেনের মধ্যে মাত্র ৮১ কিঃ মিঃ ড্রেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে স্বাভাবিকভাবেই এবং মেয়াদ আর দুই বছর বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, রাস্তা ও ড্রেন এই দুই প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২২ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে ১ বছর প্রকল্পের মেয়াদ আবেদন করে বাড়ানো হয়েছিল। যা জুন ২০২৩ এ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু রাস্তা প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের অর্থাৎ চলতি বছরের জুনে শেষ হলেও ড্রেনের কাজ শেষ করার জন্য আরও ২ বছর সময় চেয়ে পুনঃরায় আবেদন করা হয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ২৭৫.৮৭ কিঃ মিঃ রাস্তা তার মধ্যে ১৯০ কিঃ মিঃ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। আর ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ১৯২ কিঃ মিঃ ড্রেনের মধ্যে ৮১ কিঃ মিঃ ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। বাধা ও আইনগত জটিলতায় নগরবাসীর আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুফল পেতে আর একটু দেরি হবে। ড্রেনের কাজ শেষ হলে নগরীর জলাবদ্ধতা লাঘব হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরামর্শক নিয়োগ, কুয়েট প্রকোশলীর ডিজাইন দিয়ে যে ধরণের শক্ত মজবুত আধুনিক ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে তা ৫০ বছরেও কিছু হবে না কিন্তু যদি আমরা নগরবাসী সচেতন না হই।
কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, খুলনা মহানগরীকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত করতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমার নির্বাচনী ইশতেহারের ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আগামীতে আরো অনেক কাজ দৃশ্যমান হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা