নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে খুনের আসামি গ্রেফতারের সময় র‌্যাবের ওপর হামলার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১। এ ঘটনায় গতকাল রোববার র‌্যাব ১১-এর আদমজী ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনারগাঁ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় র‌্যাব তাদের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগ এনেছেন বলে জানান, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক তদন্ত আহসান উল্লাহ।

তবে গুলিতে নিহত বৃদ্ধ আবুল কাশেমের পরিবার থেকে এখনো কোনো মামলা করা হয়নি।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের বারগাঁও এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে হামলার ঘটনার পর র‌্যাব গলা কাটা নারী খুনের মামলার আসামি মো. সেলিমকে (২৫) ধরে নিয়ে যায়। দুই ঘণ্টা পর র‌্যাব ওই এলাকায় ফের অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করে। তাদের মধ্যে ১৫ জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ৫ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে গলা কেটে নারী হত্যাকা-ের আসামি মো. সেলিমকে (২৫)। বাকি ৫ জন হলেন গুলিতে নিহত বৃদ্ধ আবুল কাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), তার তিন ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), আমানুল্লাহ (৪২) হযরত আলী এবং নাতি মো. রুবেল (২৫)। গ্রেফতারকৃতদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, গত শুক্রবার সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের গজারিয়াপাড়া এলাকায় রোজিনা নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। সেই হত্যাকারীকে শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য সোনারগাঁয়ের বরগাঁ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব-১১ এর একটি দল। আসামিকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার সময় কিছু দুষ্কৃতকারী আসামিকে ছিনিয়ে নিতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে র‌্যাবের ওপর হামলা করে, গুলি করে। তখন আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়ে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে। পরে সকালে সংবাদ পাওয়া যায় আবুল কাশেম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন এবং হুমায়ন কবির (৫০) নামে একজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৪ জন র‌্যাব সদস্যও আহত হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে ওই এলাকার মানুষ এখন বাড়ি ছাড়া। গত শুক্রবার রাতে ওই এলাকা থেকে বেশ কয়েকজনকে র‌্যাবের সদস্যরা গ্রেফতারের পর এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। বর্তমানে ওই এলাকা এখন পুরুষশূণ্য পুরো এলাকায় বিরাজ করছে গ্রেফতার আতঙ্ক।

নিহতের পুত্রবধূ আমিনা বলেন, শ্বশুর গুলিতে মারা গেল। স্বামী গ্রেফতার হইয়া আছে। বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নাই। তারাও গ্রেফতারের ভয়ে পালাইয়া আছে। এখন মরার শোক করমু নাকি মামলা করমু কিছুই বুঝতে পারতেছি না। মামলা করলেই বা কার নামে করমু? পুলিশ কি আমাগো মামলা নিবো? ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে এসেছেন আবুল কাশেমের বোন মিনারা বেগম। তিনি বলেন, মরছি আমরা মরছি। আমরা তো তাগো লগে পারমু না। তারা আইনের লোক। তাগো বিরুদ্ধে কেমনে মামলা করমু?

নিহত আবুল কাশেমের বাড়ির পাশেই জামদানি কারিগর নূর হোসেনের বাড়ি। র‌্যাবের হেফাজত থেকে ফিরে এসে নূর হোসেন বলেন, ‘ডাকাত পড়ছে শুইনা ঘুম থেকে উঠি। পরে জানতে পারি পাশের বাড়ির কাশেম চাচা গুলিতে মারা গেছেন। পরে আবার বাসায় আইসা শুইয়া পড়ি। এর দেড়-দুই ঘণ্টা পর র‌্যাব আবারো আসে। পরে অনেকরে ধইরা নেয়। অনেকরে মারধরও করে তখন। এগুলা দেইখা আমি আর নড়াচড়া করি নাই। পরে আমারেও ধইরা নেয়।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম ইনকিলাবকে জানান, র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।