কৃষিতে দারুণ উপকারি বৃষ্টি
১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:২০ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৫৪ পিএম
অবশেষে এলো স্বস্তির মেঘ-বৃষ্টি। চৈত্রের পয়লা সপ্তাহেই শুষ্ক খটখটে খরতপ্ত আবহাওয়া হঠাৎ বদলে গেল। গত তিন দিনের মধ্যে দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতও হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় নেত্রকোনায় ৮২ মিলিমিটার। এ সময়ে ঢাকায় ১৩, টাঙ্গাইলে ৭, গোপালগঞ্জে ২৯, কিশোরগঞ্জে ৫৫, বগুড়ায় ১৫, বগলগাছিতে ২২, রংপুরে ৭, রাজশাহীতে ২, ময়মনসিংহে ৩৫, সিলেটে ৩২, শ্রীমঙ্গলে ১৫, কুমিল্লায় ১১, হাতিয়ায় ৯, খুলনায় ১৮, সাতক্ষীরায় ৩৬, যশোরে ১৫, কুষ্টিয়ায় ৮, বরিশালে ৯, পটুয়াখালীতে ১০, খেপুপাড়ায় ১৬, চট্টগ্রামে এক মি.মি.সহ দেশের প্রতিটি বিভাগের বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় কমবেশি বৃষ্টি ঝরেছে। গতকাল রাতে এই প্রতিবেদন তৈরি হওয়া অবধি চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জায়গায় হিমেল হাওয়ার সাথে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। মেঘ-বৃষ্টির শীতলতার পরশে চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৩৭ ডিগ্রি সে. থেকে নেমে এসেছে স্থানভেদে কোথাও ২১, কোথাও ২৬ ডিগ্রিতে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খেপুপাড়ায় ৩০ ডিগ্রি। ঢাকায় সর্বোচ্চ ২৪.৭ এবং সর্বনিম্ন ২৩.২ ডিগ্রি।
আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। মেঘ-বৃষ্টিপাতের ফলে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্থানভেদে আরো এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এরপরের ৫ দিনে দেশে বৃষ্টি কিংবা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে এবং তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে পশ্চিমা ও পূবালী বায়ুর সংযোগের ফলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
বিগত নভেম্বর’২২ ইং থেকে চলে আসা টানা পাঁচ মাসের খরা-অনাবৃষ্টির পর বহুল প্রত্যাশিত এই বৃষ্টিপাতে মাটি হয়েছে আর্দ্র বা ভেজা এবং সতেজ। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার হার ছিল ৯০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগ অর্থাৎ বরেন্দ্র জনপদে ও উত্তরাঞ্চলে আগাম খরা-অনাবৃষ্টির কারণে তপ্ত ও বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছিল সেই সেপ্টেম্বর’২২ ইং মাস থেকেই। এবার বৃষ্টির পানির ছোঁয়ায় ফল-ফসল ফিরে পেয়েছে প্রাণময় সজীবতা। মাটির নিচের স্তরে হালকা বর্ষণে পানি তেমন রিচার্জ হবে না। এরজন্য আরও বৃষ্টি দরকার। তবে মাটির উপরিভাগের ফল-ফসল, জীবন ও প্রকৃতি হয়েছে সিক্ত-সজীব।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঘের শেষের দিক থেকে ফাল্গুন মাসে ‘স্বাভাবিক’ যে হালকা বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবার তাও হয়নি। এখন চৈত্রের শুরুতে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত দেশের সমগ্র কৃষি-খামার সেক্টরের জন্য দারুণ উপকার বয়ে এনেছে। বিশেষ করে ইরি-বোরো ফসলের গোড়া সিক্ত হয়েছে প্রায় সবখানে। কৃত্রিম বা সম্পূরক সেচ যতই দেয়া হোক না কেন, রহমতের বৃষ্টিপাতের কোন বিকল্প নেই। বর্ষণের সুবাদে ধূলোবালি-ধোঁয়ার দূষণ মাত্রা আগের তুলনায় কমেছে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের শহর-নগর-শিল্পাঞ্চল, সড়ক-মহাসড়কসমূহে। এর ফলে মৌসুমী রোগ-ব্যাধির প্রকোপ প্রাকৃতিকভাবে হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বায়ুমান ও দূষণমাত্রার সূচকে বিশে^র উল্লেখযোগ্য নগরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল নবম। বৃষ্টিতে জনস্বাস্থ্যের উপরও পড়ছে তার ইতিবাচক প্রভাব। পরিবেশ-প্রতিবেশ, প্রকৃতিতে নবপ্রাণ সঞ্চার হয়েছে।
চৈত্রের প্রথম সপ্তাহে আবহাওয়ার ইতিবাচক মোড় ও প্রশান্তির বৃষ্টিপাত প্রসঙ্গে বিশিষ্ট কৃষিবিদ মো. আবুল হোসাইন তালুকদার গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, টানা কয়েক মাসের খরা-অনাবৃষ্টির কারণে বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছিল। এখন তার পরিবর্তন হয়েছে বৃষ্টির সুবাদে। দেশের গোটা কৃষি খাতের জন্য এই বৃষ্টিপাত বেশ উপকারি হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষ করে ইরি-বোরো ফসল, শাক-সবজি আবাদে বাড়তি সেচ খরচ কমবেশি সাশ্রয় হচ্ছে। এ বছর রাজশাহী বিভাগে আমের ব্যাপক মুকুল এসেছে। খরার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝরে যাওয়ার যে আশঙ্কা ছিল তা কেটে যাবে। আমসহ লিচু, পেয়ারা, কাঁঠাল ইত্যাদি ফল-মূলের মুকুল ও ফুল থেকে ফলে পরিণত হয়ে ভালো ফলনের জন্য খুবই সহায়ক হয়েছে এই বৃষ্টি। কৃষি-খামারের উৎপাদনে গতিসঞ্চার করবে এই বৃষ্টিপাত।
এদিকে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটির দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে দেশে দেশে ২ থেকে ৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২ থেকে ৩টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে। গড় বৃষ্টিপাত হতে পারে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। এর আগের টানা চার মাসে দেশে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বৃষ্টিপাতে প্রায় ৯২ শতাংশই ঘাটতি ছিল। অবশেষে খরা-অনাবৃষ্টি পরিস্থিতির উন্নতির সুবাতাস দিচ্ছে প্রকৃতি। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা