সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুধু আল্লাহকে ডাকছি
১৯ মার্চ ২০২৩, ১১:২৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:১৮ এএম
ঘটনার আকস্মিকতায় মাথায় আসমান ভেঙে পড়তাছে মনে হইতেছিলো। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে রেখে আল্লাহকে ডাকছিলাম। মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এভাবেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন দ্বিতীয় জীবন পাওয়া আনোয়ারা বেগম (২৫)।
পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনাকবলিত ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের যাত্রী ছিলেন তিনি। গতকাল রোববার ভোরে বাসটি খাদে পড়ে ১৯ জন প্রাণ হারান। আনোয়ারা বেগম এবং তার শিশু সাজ্জাদকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধারের পর অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন আনোয়ারা। কিছুক্ষণ পর ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আঁতকে উঠলেন এবং সন্তানকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। বারবার আল্লাহকে ডাকছেন এবং আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাচ্ছেন তিনি। ঘোর কাটলে নিজের পরিচয় দেন আনোয়ারা। জানান, বাগেরহাটের মোল্লারহাটের গারফা গ্রামের তাহিম মোল্লার স্ত্রী তিনি। মোল্লারহাট থেকে বাসে উঠেন।
আনোয়ারা বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়িটি বেশ দ্রুত গতিতে চলছিল। কিছুক্ষণ পরেই পদ্মা সেতু। এমন আলোচনা করছিল যাত্রীরা। হঠাৎ করেই গাড়িটি রাস্তা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। ওই সময়ে শুধু সন্তানকে জড়িয়ে রেখেছিলাম।
তিনি আরো বলেন, বাগেরহাটের মোল্লারহাট থেকে ভোর ৬টায় গাড়িতে উঠি। ঢাকার ধানমন্ডি বড় বোনের বাসায় যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার মুহূর্তে মনে হয় জ্ঞান ছিল না। গাড়ির মধ্যে থেকে কে বা কারা বের করে আনছে তা মনে নাই। স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে এখনও।
এদিকে খবর পেয়ে আনোয়ারার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছেন। এখন আর ঢাকায় বোনের বাসায় যাবেন না, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান তিনি।
আনোয়ারা বেগমের ছেলে সাজ্জাদকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। মায়ের কোলে ছিলাম।
সড়ক দুঘর্টনায় এত লাশ কখনো দেখিনি
আমি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভাঙার পর দেখি রক্ত আর লাশ! হাতে প্রচ- ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙে আমার। বাসের মধ্যে থেকে কে বের করে এনেছে জানি না। সড়ক দুঘর্টনায় এত লাশ কখোনো দেখিনি । গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি এলাকার যুবক উজ্জ্বল এভাবেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দেন।
তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাস দ্রুত গতিতে চলছিল। এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের অনেকেই নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলেন তখন। কেউ চোখ বন্ধ করে ঝিমুচ্ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় কিছুই টের পাইনি। যখন জ্ঞান ফেরে দেখি চারপাশে রক্ত আর লাশ। উঠে বসতে গেলে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরে কিছুটা সুস্থবোধ করলে চারপাশে বোঝার চেষ্টা করি। তখন টের পাই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে! সড়ক থেকে গাড়ি উল্টে নিচে পরে দুমড়েমুচড়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করেই বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। তারা দৌড়ে এসে দেখতে পান একটি বাস মহাসড়ক থেকে নিচে পরে উল্টে যাচ্ছে বার বার। এরপরই চিৎকার আর আহাজারি ভেসে আসে। কালক্ষেপন না করে স্থানীয়রা দ্রুত ছুটে যায় সেদিকে। বাসের মধ্যে থেকে গোঙানির শব্দ বের হচ্ছিল তখন। চারপাশ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল। স্থানীয়রা আহতদের বের করার কাজে নেমে পড়ে। ততক্ষণে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ আসে।
মো. আল আমিন নামের এক স্থানীয় যুবক বলেন, এতো বড় দুর্ঘটনা আমরা আগে দেখিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছিল সময় থেমে গেছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না! পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝে উঠতে কিছু সময় পার হয়ে যায়। ’
খুলনার রুপসা এলাকার যাত্রী আহত মহারাজ খাঁ বলেন, বাসটি শূন্যে উঠে লাফিয়ে নিচে পড়ে গেলে। অনেকবার উল্টে নিচে পড়ে বাসটি।
আরিফ শেখ নামের খুলনার আহত আরেক যাত্রী বলেন, দ্রুতগতিতে চলছিল বাসটি। মুহূর্তেই রাস্তার রেলিং ভেঙে উল্টেপাল্টে নিচে পড়ে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে মনে হয়েছিল।
মোস্তাকের আর সিঙ্গাপুর যাওয়া হলো
পাসপোর্টের ফিঙ্গার দিতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন মোস্তাক আহমেদ (৪২)। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী মাসেই মোস্তাক সিঙ্গাপুর যেতেন। কিন্তু এক সড়ক দুর্ঘটনায় মোস্তাকের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মোস্তাক আহমেদ গোপালগঞ্জ জেলার বনগ্রাম এলাকার সামসুল হকের ছেলে। তার লাশ গ্রহণ করতে দুই সন্তানকে নিয়ে শিবচর গেছেন স্ত্রী জোনাকি বেগম।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কোণে নির্বাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন মোস্তাকের স্ত্রী জোনাকি বেগম। স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বলেন, এক ঝড়ে আমার সব শেষ হইয়া গেল। আমার ছোট ছোট দুই পোলারে এতিম কইরা উনি চইল্লা গেল। ওগো আমি কি বুঝ দিমু। আল্লাহ আমার মরণ দিল না ক্যান। আমার স্বামীকে তোমরা ফিরাইয়া দাও।
জোনাকির ভাই মো. সেলিম বলেন, মোস্তাক আগে প্রবাসে ছিল, গত কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করে। এখন ব্যবসার অবস্থা ভালো না। তাই আবার সিঙ্গাপুর যাবে। আমার বোনের দুই ছেলে। বড় ছেলে ইশানের বয়স আট বছর আর ছোট তাসমিনের বয়স চার বছর। ছোট ছেলেটা বোঝে না যে ওর বাবা মারা গেছে। বাবাকে দেখবার জন্য আমার কাছে বারবার আসে। অনেক কান্নাকাটি করতেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা