দেশে উৎপাদিত পণ্য রফতানির নতুন বাজার খুঁজতে হবে
২০ মার্চ ২০২৩, ১১:২৯ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে টেকসই রফতানি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত এবং বাংলাদেশী পণ্যের জন্যে নতুন বৈশি^ক বাজার অন্বেষণে একটি উপায় খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার সরকারি বাসভবন গণভবনে রফতানি বিষয়ক ১১তম বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে টেকসই রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জনে পদেক্ষপ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী রফতানি পণ্যে বৈচিত্র আনতে এবং স্থানীয় বাজারকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি এসব পণ্যের জন্যে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশী পণ্যের জন্যে নতুন বাজার খোঁজার সুযোগ বিশ^ব্যাপী তৈরি হয়েছে। আমাদেরকে এসব বাজার ধরতে হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০২৪ সাল নাগাদ মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া বিদ্যমান রফতানি নীতিমালার সংশোধন, পরিবর্তন ও উন্নয়ন করে আরো চার কিংবা পাঁচ বছরের জন্যে নতুন রফতানি নীতিমালা প্রণয়নেরও আহ¦ান জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা, যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরনের পর বাংলাদেশে যেসব চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ তৈরি হতে পারে তা বিশ্লেষণ করে নতুন রফতানি নীতি গ্রহণ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, রফতানি বৃদ্ধির জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন, এছাড়া কিছুই অর্জন করা যাবে না। একটি দেশের অর্থনীতি মূলত রফতানির ওপর নির্ভর করায় আমরা রফতানি বাড়াতে অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে নিয়ে ভাবছি। কাজেই, আমরা এর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী রফতানি বাড়াতে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার তাদের সব ধরনের সহায়তা দেবে। রফতানি বাড়ানোর জন্য আমরা বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি এবং এর জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রফতানি খাতের বিকাশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য তার সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রফতানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৭.০৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি আয় ছিল ৩৩.৮৪ বিলিয়ন ডলার। আমরা কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও রফতানির প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় রফতানি থেকে আয় ছিল ১৬.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন ২০২১-২২ অর্থবছরে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৬০.৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
শেখ হাসিনা রফতানির জন্য নতুন বাজার খুঁজে বের করতে এবং পোশাক, ওষুধ ও ডিজিটাল ডিভাইসসহ রফতানি পণ্যে বৈচিত্র আনতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে, তাই একে গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের নতুন বাজার অন্বেষণ করতে হবে এবং রফতানি পণ্যের মধ্যে বৈচিত্র আনতে হবে। চার থেকে পাঁচটি রফতানি পণ্য ঠিক করতে হবে। অনেক দেশ আমাদের পণ্য আমদানি করতে চায়, তাই কোন দেশের কোন পণ্য দরকার সেটি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
বিশ্বজুড়ে প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা বৃদ্ধিকে বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে অনেক দেশ আমাদের খাদ্য আমদানি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করছে। এজন্য আমাদের খাদ্য সামগ্রী রফতানিতে মনোযোগ দিতে হবে।
দেশের নৌবাহীনিতে যুক্ত হল দুইটি শক্তিশালী সাবমেরিন
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, দেশের নৌবাহীনিতে যুক্ত হল দুইটি শক্তিশালী সাবমেরিন। আর এ নিয়ে কক্সবাজারের পেকুয়াতে উদ্বোধন হল দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দুপুরে গণভবন থেকে কক্সবাজারের পেকুয়াতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় পেকুয়ার সাবমেরিন ঘাঁটি থেকে যুক্ত ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল।
এ উপলক্ষে কক্সবাজারার পেকুয়ার সাবমেরিন ঘাঁটি এলাকাটি সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। দেশের ইতিহাসে প্রথম এই সাবমেরিন ঘাঁটিতে ইতোমধ্যেই বেশকিছু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে সাবমেরিনাদের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্রও।
২০১৭ সালের ১২ মার্চ চীন থেকে আনা বানৌজা ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ নামের সাবমেরিন দুটির কমিশনিং করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় সাবমেরিনের এই ঘাঁটি নির্মাণের ঘোষণা দেন সরকার প্রধান।
সাবমেরিনের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থেই বিশেষায়িত ঘাঁটির প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকে প্রায় ৭শ’ একর জায়গা নিয়ে তৈরি হয়েছে সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনা।
যুক্ত হওয়া সাবমেরিন দুটির প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার ও প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সুসজ্জিত সাবমেরিনগুলো শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও ডুবো জাহাজে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। পূর্ণ ধারণক্ষমতা নিয়ে এগুলোর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল।
আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, ‘চীন থেকে কেনা ০৩৫ জি ক্লাসের এ দু’টি সাবমেরিনে আছে নানা সুবিধা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনে আক্রমণ করার সক্ষমতা রয়েছে টর্পেডো ও মাইনে সুসজ্জিত এই সাবমেরিনগুলোর ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন দু’টির প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৭৬ মিটার এবং প্রস্থ ৭ দশমিক ৬ মিটার। নৌ-বাহিনীতে এগুলো যুক্ত হওয়ার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত সাগর এলাকা নিরবচ্ছিন্নভাবে পাহারা দেওয়া ও আঘাত করার সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, এই সাবমেরিন দু’টি চীন থেকে গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আমে। এরআগে ১৪ নভেম্বর সাবমেরিন দু’টি হস্তান্তরের আগে চীন ও বাংলাদেশের নৌ-বাহিনীর অফিসার ও নাবিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও ‘সি ট্রায়াল’ সফলভাবে সম্পন্ন করে বলে জানায় আইএসপিআর। এই সাবমেরিন দু’টি কিনতে ২০১৪ সালে ২০৬ কোটি ডলারে চীনের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ।
এ অঞ্চলে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের কোনো সাবমেরিন নেই। তবে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান ও ইন্দোনেশিয়ার আছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে ‘কার আছে, কার নাই এটা মুখ্য নয়। তাছাড়া বাংলাদেশ কারুর সঙ্গে যুদ্ধের মানসিকতা নিয়েও সাবমেরিন কেনেনি। বাংলাদেশ চায় তার নৌ-সীমা নিরাপদ রাখতে। আর এটা সত্য যে, সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী ত্রিমাত্রিকতার দিকে যাত্রা শুরু করলো।
মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদের মতে, ‘বাংলাদেশের এখন যা সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র সম্পদ, তার পাহারায় সাবমেরিনের প্রয়োজন আঝে শত্রু এবং জরদস্যুরা যখন জানবে বাংলাদেশের সাবমেরিন সক্ষমতা সম্পর্কে তখন তারা অনেক কিছু থেকেই নিবৃত হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রূপান্তর ও ক্ষমতা বাড়াতে ১০ বছরব্যাপী একটি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বর্তমান সরকার সাবমেরিন নৌ-ঘাঁটি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিল।
এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১’শ কোটি মার্কিন ডলার। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, সাবমেরিন উপযোগী কর্মকর্তা তৈরি করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। সে কারণে আগে থেকেই শুরু হয় প্রশিক্ষণ ট্রেনিং। নৌবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদেরকে এ বিষয়ে পারদর্শী হতে ট্রেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল ইউরোপ মহাদেশের একটি নৌ-ঘাঁটিতে।
সশস্ত্র বাহিনী সূত্র মতে এই সাবমেরিন নৌবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে পরিণত করবে। সাবমেরিন হচ্ছে বিশেষ ধরনের ডুবো যুদ্ধজাহাজ যা পানির তলদেশে এবং উপরিভাগে সমানতালে চলতে সক্ষম। বাংলাদেশ বিশ্বের উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সাবমেরিন যুদ্ধজাহাজ রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও গণচীন ছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে। তাই সাবমেরিন সংযোজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের শক্তিশালী দেশের কাতারে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
সাবমেরিন ঘাঁটি বিষয়ে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২০১২ সালের শুরুতে সেনা নিবাস অধিদফতর ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চাহিদামতো কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামার প্রায় ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল ওই এলাকা পরিদর্শন করে মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়াকে নৌ-ঘাঁটির জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে বিবেচনা করেন।
দেশের এ বৃহত্তম নৌ-ঘাঁটি পেকুয়ায় হওয়ায় এলাকার মানুষ খুশি। এর সাথে আরো বহু উন্নয়ন এবং পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এতে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন
গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু
শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি