দুবাই পুলিশের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ পুলিশ
২৩ মার্চ ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৮ পিএম
পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আলোচিত আসামি আরাভ খানের বিষয়ে দুবাই পুলিশের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছে বাংলাদেশ পুলিশ। পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে এ যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তবে আরাভ খান দুবাইয়ে গ্রেফতার বা আটক হয়েছেন এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই বাংলাদেশের পুলিশের কাছে।
অন্যদিকে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বাড়িধারা এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আরাভ খান একজন প্রজোযকের সহায়তায় যৌন ব্যবসা করতেন বলে তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট্র ডিবির কর্মকর্তারা। এছাড়া আরাভ খানের প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াও দেশ ছেড়েছেন। তিনি একই মামলার আসামি ছিলেন। কেয়া মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের মেয়ে। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামে শাহিন নামের একজনকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকে স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন কেয়া।
পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়া হয়েছে আরাভ খানকে গ্রেফতারের জন্য। তারা আমাদের চিঠি গ্রহণ করে ফিরতি মেইলও করেছে। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে নতুন করে অপরাধীর ছবি ও তথ্য আপডেট হতে তিন থেকে চারদিন সময় লাগে। আশা করছি, শিগগির আরাভ খানের ছবিসহ ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড পারসন ক্যাটাগরিতে দেখা যাবে। ইন্টারপোলকে সহয়তা করে পুলিশ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) নামে একটি শাখা।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ সদর দফতরের আরাভ খানের বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। দুবাইরে আরাভ খান গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের এনসিবির কর্মকর্তারা দুবাই পুলিশের সাথে সমন্বয় করে বিষয়টি মনিটরিং করছেন। যথা সময়ে সব কিছু পরিস্কার করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করার সময় ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। ভর্তি হন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজের প্যাথলজি বিভাগে। কলেজে গিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আপন ওরফে আরাভের সঙ্গে। ২০১৪ সালে কেয়া গ্রামে বেড়াতে আসেন। এর একদিন পর এক বন্ধুকে নিয়ে কেয়াদের বাড়িতে আসেন আরাভ। পরদিন কেয়ার মামার একটি মোটরসাইকেল ও কেয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান আরাভ। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে তারা ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। মোটরসাইকেল আর মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কেয়ার পরিবারের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক ছিল না।
কেয়ার মামা গাড়াডোব গ্রামের কামরুজ্জামান বলেন, মেয়ের বন্ধু হিসেবে তাকে আমরা যথেষ্ট সম্মান করতাম। কিন্তু সে যে এত বড় প্রতারক তা আগে জানা ছিল না। সে নিজেকে আপন জুয়েলার্সের মালিক পরিচয় দিয়েছে। আবার আমার শখের মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাকে অনুনয় করলেও মোটরসাইকেল ফেরত দেয়নি, তখন গাংনী থানায় একটি জিডি করেছিলাম। এই জিডি তুলে নিতে সে মেহেরপুরের কয়েকজন নেতাকে দিয়ে আমাকে চাপ দিয়েছিল। ওই নেতাদের কাছে আরাভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমাকে চাপ দিতে বলেছিল।
কেয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, কেয়ার মা তার খালাতো বোন। বাড়িও পাশে। তার নাম মনোয়ারা বেগম। ১৯৯৬ সালে মনোয়ারা বিএ পাস করলে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর থেকে তাদের সংসার জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০০ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন ভাই হত্যা মামলায় জেল হয় তার। তখন কেয়ার বয়স মাত্র তিন বছর। মাঝে মাঝে মেয়েকে নিয়ে দেখতে জেলে যেতেন তার স্ত্রী। কিন্তু দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরে। এরই মাঝে বড় হতে থাকে কেয়া। ২০১১ সালে জেল থেকে বের হয়ে আসেন। এসে শোনেন স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন, কিন্তু কোনও কাগজপত্র দেননি। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেননি। স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন বিয়ে করেন উজলপুর গ্রামের একজনকে। পরে তারা ঢাকায় চলে যান। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করেন কেয়া। তার মা তাকে বাবার অমতে ভর্তি করে দেন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে। সেখানে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা করতেন কেয়া। তারপর থেকেই মেয়ের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই আবুল কালামের।
গাংনী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পুলিশ হত্যা মামলায় সে জামিনে ছিল বলে জানতে পেরেছি। তবে সে আসলে কোথায় আছে, তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।
রবিউলের যৌন ব্যবসা: পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পর সুরাইয়া তার স্বীকারোক্তিতে বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে রবিউলের সঙ্গে তার প্রথমে পরিচয়, পরে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, রবিউল যৌন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নারীদের সঙ্গে পুরুষের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করতেন। একসময় তিনিও (সুরাইয়া) এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।
সুরাইয়া জবানবন্দিতে বলেন, যৌন ব্যবসার জন্য বনানীর ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি পাহারা দেওয়াসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন স্বপন, দিদার, আতিক, মিজান ও সারোয়ার। তিনি (সুরাইয়া) দুই-এক দিন পরপর ফ্ল্যাটে গিয়ে যৌন ব্যবসার টাকা সংগ্রহ করতেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যার পর পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে বনানীর ফ্ল্যাটে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। পরে তাকে খুন করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বসনিয়ার বিপক্ষে জয়ের ধারায় ফিরল জার্মানি
ক্রিকেটে দুর্ভাগ্যের সংখ্যা '৫৫৬'!
ভিএআরে প্রতিবাদ করে নটিংহ্যামকে গুনতে হল প্রায় ১২ কোটি টাকা!
চৌদ্দগ্রামে ওভারটেক করার সময় দুই মোটর সাইকেল আরোহী নিহত, আহত ১
সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ব্র্যাক ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নেটওয়ার্কের ২,০০০ কোটি টাকা নিট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি
ময়মনসিংহে ঐতিহ্যবাহী জিলা স্কুলের খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণে প্রতিবাদ সভা
শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানি সংগঠনকে অভিনন্দন ড. ইউনূসের
সবজি বাজারের সিন্ডিকেট এখনো বহাল কিভাবে?
সন্ত্রাস ও দুর্নীতিবাজদের দ্বারা কোনভাবেই বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় - ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
যশোরে নারীকে কুপিয়ে হত্যা করল প্রাক্তন স্বামী
স্বৈরাচার হাসিনা হিটলারেরর চেয়ে জঘন্যতম কাজ করছে
পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন জঘন্য অপরাধ, কথিত শিল্পীদের শাস্তির দাবি ইসলামী দলের
ফের হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী হলেন নায়াব সাইনিই!
শেখ হাসিনা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন : মাওলানা মামুনুল হক
৫৮ জন জেলেকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনলো কোস্টগার্ড
আরব সাগরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা, এক মাস পর উদ্ধার পাইলটের দেহ
গত ১৫ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করেছে আওয়ামী লীগ - নুরুল আমিন ভূঁইয়া বাদশা
যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবে লেবানন
সুন্নাহর মাঝেই রয়েছে বৈষম্যমুক্ত আদর্শ দেশ গড়ার চাবিকাঠি -মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক
অসাম্প্রদায়িক মনোভাব চাই