ঢাকা   রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ | ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
২০ মার্চ মার্কিন রিপোর্ট প্রকাশের পর ২২ মার্চ ওবায়দুল কাদের-পিটার ডি হাস বৈঠক করেন। ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগ নেত্রী ড. শাম্মী আহমেদের সাথে বৈঠক করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। ১২ মার্চ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ইইউ’র কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। প্রতিটি বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ-অবাধ এবং সব দলের অংশগ্রহণের বিষয় প্রাধান্য পায়। যুক্তরাষ্ট্র চায় জাতিসংঘের দলিলের আলোকে আন্তর্জাতিক মানদ-ের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া রিপোর্ট ‘বিচার বিশ্লেষণ’ করা হবে।

মার্কিন রিপোর্টে তোলপাড়

Daily Inqilab স্টালিন সরকার

২৩ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৩ পিএম

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারে নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার ইত্যাদি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০ মার্চ বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। জাপানের রাষ্ট্রদূতের ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়েছে এমন কথা কোথাও শুনিনি’র বক্তব্যের পর ‘২০২৮ সালের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট প্রকাশ পেল। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী রিপোর্ট ‘পক্ষপাতমূলক’ ‘নিরপেক্ষ হয়নি’ ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে’সহ নানান মন্তব্য করেন। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন এবং মানবাধিকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া রিপোর্ট ‘বিচার বিশ্লেষণ’ করে মতামত জানানো হবে।

মার্কিন রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশের পর যথারীতি বিএনপির মহাসচিব ‘সরকারের জন্য এটা লজ্জাকনক’ হিসেবে অবিহিত করেছেন। এ রিপোর্ট নিয়ে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিতর্ক হচ্ছে এবং বিশিষ্টজন ও নেটিজেনরা নিজেদের মতো করে মন্তব্য করছেন। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের নেতা-মন্ত্রীদের ‘মার্কিনীদের পাল্টা দোষারোপ’ এবং বিএনপি ও অন্যান্যদের ‘সঠিক চিত্র’ দাবির বিতর্ক চললেও ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস নির্বিকার। এই বিতর্কে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। বিতর্কের মধ্যেই ২২ মার্চ তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, একজন প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য এবং গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তিনি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া রিপোর্ট যথার্থ প্রমাণে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এমনকি সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকরে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন প্রশাসন গণতন্ত্র নিয়ে কোনো ছাড় দেবেন না। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন। ওবায়দুল কাদের-পিটার হাসের বৈঠকের ৩ দিন আগে ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের সাথে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের একাউন্ট থেকে পোস্ট করা এক টুইটে ২৭ দেশের ইউরোপীয় ওই জোটের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, নির্বাচন এবং পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এর আগে ১২ মার্চ রাজধানীর গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্ব দেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭টি দেশের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন চার্লস হোয়াইটলি। ওই বৈঠকে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। এরপর ইইউ’র তরফে জানানো হয়, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে তারা বিএনপি’র অংশগ্রহণ চান। ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাতে প্রস্তুত। বিএনপিকে বলেছি ইইউ-এর হাই রিপ্রেজেনটেটিভ জানিয়েছে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। এটা তখনই হবে যখন নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, নিশ্চিত হবে বিএনপির অংশগ্রহণ। দেশের নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউভুক্ত দেশগুলো স্পষ্ট করেছেন বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়। সে জন্যই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড, এ কে আবদুল মোমেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনী ব্লিংকেনকে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে রাজি করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন গতকাল বৃহস্পতিবার একটি টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিয়ে নির্বাচন ইস্যুতে কথা বলেন।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিষয় নিয়েও বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। এর আগে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা তাই মনে করি আগামীর নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ করতে পারে এই বিষয়টির ওপর জোর দিতে হবে বেশি। নির্বাচনের আগে মুক্তভাবে বিতর্ক করার সুযোগ থাকতে হবে।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা যখন নানাভাষায় মার্কিন রিপোর্টের সমালোচনা করছেন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক ওবায়দুল কাদের যখন ‘মার্কিনীদের নিজেদের নির্বাচন ও গণতন্ত্র চর্চার দিকে তাকানোর’ পরামর্শ দেন; তখনই পিটার হাস আওয়ামী লীগে নেতাদের নিজ বাসায় আমন্ত্রণ জানান। মধ্যাহ্নভোজসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা আলোচনায় পিটার হাস সামান্য বিচলিত না হয়ে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার তাগিদ দেন। শুধু তাই নয়, জো বাইডেন প্রশাসনের এটা এজেন্ডা বলে জানিয়ে দেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের জানান, তারা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরবেন না। এ সময় পিটার হাস জানান, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে ব্যক্তিগতভাবে তিনি খুশি, কিন্তু দেশি-বিদেশি কারোই সরকারের কথায় আস্থা নেই।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোট নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কঠোর সমালোচনার মধ্যেই গতকাল ঢাকা থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’এ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন পিটার হাস। এ সময় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে বলা হয়, আপনার মূল্যায়ন কি বলে যে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে? জবাবে পিটার হাস বলেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেয়ে আমি খুশি হয়েছি। তারা বলছেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। তবে আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে আমাদের জাতিসংঘের কিছু দলিলের দিকে তাকাতে হবে। কারণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদ- আছে। যেমন রাজনৈতিক সংগঠন করার স্বাধীনতা-শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার স্বাধীনতা, চলাচলের স্বাধীনতা, তথ্যের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার শিকার না হওয়া। নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়ার বিষয়টিকে এসব মানদ-ের নিরিখে যাচাই করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সরকারের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা ও মতামতও নেই। আমরা চাই, নির্বাচনের এই পূর্বশর্তগুলো যেন থাকে, যাতে সব দল মনে করে যে তারা ন্যায্যভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে এবং যদি বাংলাদেশের মানুষ চায়, তাহলে জেতার সুযোগ পাবে।

মার্কিন মানবাধিকার বিষয়ক এই রিপোর্ট বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রিপোর্টে বাংলাদেশ অংশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারে নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেফতার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকর, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধের বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্টে।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক রিপোর্টে বাংলাদেশের ২০২৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ওই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। নির্বাচনের আগে অনেক মানুষকে রাজনৈতিক বন্দি ও আটক হিসেবে রাখা হয়। রাজনৈতিক কারণে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও বিচার করা হয়। রিপোর্টে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর আইন ও নিয়ম লংঘনের অভিযোগও আনা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য অনেক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে আছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা। মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় মার্কিন প্রতিবেদনে। এ রিপোর্টে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। জোরপূর্বক গুম, অপহরণের ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, এসব গুম, অপহরণের শিকার বেশিরভাগই বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী। এসব অপরাধ প্রতিরোধে, তদন্তে এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে সীমিত প্রচেষ্টা নিয়েছে সরকার।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা ঘন ঘন এ অধিকারে হস্তক্ষেপ করে সরকার। মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ এবং মিডিয়ার রিপোর্টে অব্যাহত গুম এবং অপহরণের তথ্য উঠে এসেছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা এসব সংঘটিত করেছেন বলে অভিযোগ আছে। যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করে, তাদের চাপ দেয়া হয়। মুক্তভাবে অথবা বিধিনিষেধ না মেনে কোনো নিরপেক্ষ মিডিয়া কাজ করতে পারে না। ইন্টারনেট সুবিধায় বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার বা এই সুবিধায় বিঘœ ঘটিয়েছে। বহু ঘটনায় তারা অনলাইন কন্টেন্ট সেন্সর করেছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট অনেক নেটওয়ার্ক এবং ভিওআইপি ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে আইন দিয়ে। আইনগত যথাযথ কর্তৃত্ব না থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে বেসরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ মনিটরিং করছে সরকার। বিরোধী দলগুলো যেসব শহরে র‌্যালি ডেকেছিল, সেখানে সরকার অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল অথবা গতি কমিয়ে দিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার জনগণকে সংবিধান নিশ্চিত করলেও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা পুরো বছরেই বহুবিধ বিধিনিষেধের মুখোমুখি হয়েছেন। বিরোধী বিএনপিকে নিয়মিতভাবে সমাবেশের অধিকার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ভীতি প্রদর্শন করেছে।

বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন এই রিপোর্ট প্রকাশের পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক শুরু হয়। এ নিয়ে প্রথম আপত্তি তুলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে উঠে আসা বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের আপত্তি রয়েছে। এই আপত্তির বিষয়গুলো দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় তুলে ধরা হবে। রিপোর্টে মৌলিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। তবে ২০২১ ও ২০২২ সালের মার্কিন প্রতিবেদনের মধ্যে গুণগত কোনো তফাত নেই বলে উল্লেখ করেন শাহরিয়ার আলম। অতপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই রিপোর্ট প্রকাশের আগে নিজের দিকে তাকানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে ২২ মার্চ পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর একটি অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘পিটার হাসকে বলে এসেছি বাংলাদেশ আর কোনো দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাবে না।’ যদিও পিটার হাস বৈঠক সম্পর্কে টুইটারে লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়াও দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের সাথে জনগণের সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বাংলাদেশ নিযে মার্কিন রিপোর্টকে দেশের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এবং তা দেশের জন্য লজ্জার। দেশে এখন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা নেই।

মার্কিন রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে : ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দেয়া রিপোর্ট বিচার বিশ্লেষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। সেহেলী সাবরীন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের পয়েন্টগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। সেখান কার পয়েন্টগুলো যাচাই বাছাই করতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হবে। এটি নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিবাদ : যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনের প্রতিবাদ নিন্দা জানিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গতকাল এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছে তা আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে। এই প্রতিবেদনে ’৭১ গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বলা হয়েছে; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হয়রানির কারণে বাংলাদেশের বৃহত্তম মুসলিম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যবৃন্দ তাদের সংবিধান প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা ও সমাবেশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারছেন না। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের কারণে জামায়াত প্রার্থীরা দলের নামে নির্বাচন করতে পারছেন না। নিন্দনীয় এই মার্কিন প্রতিবেদন শুধু অসত্য নয়, বাংলাদেশসহ গোটা উপমহাদেশে জামায়াত পরিচালিত জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসকে ইন্ধন জোগাবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন যুক্তরাজ্যের

অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সমর্থন যুক্তরাজ্যের

যবিপ্রবিতে বারির কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবনী সেমিনার ও প্রদর্শনী

যবিপ্রবিতে বারির কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবনী সেমিনার ও প্রদর্শনী

ঢামেক হাসপাতালে ফের ‘ভুয়া নারী চিকিৎসক’ আটক

ঢামেক হাসপাতালে ফের ‘ভুয়া নারী চিকিৎসক’ আটক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাংলাদেশে আসবে ডিসেম্বরে

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি বাংলাদেশে আসবে ডিসেম্বরে

এক সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় যশোরের ৩ রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যু

এক সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় যশোরের ৩ রেমিট্যান্স যোদ্ধার মৃত্যু

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯৬ জন আক্রান্ত

না.গঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৯৬ জন আক্রান্ত

ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাসহ দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই

ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনাসহ দোষীদের দ্রুত বিচার করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই

পাকিস্তানকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে অস্ট্রেলিয়া

পাকিস্তানকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে অস্ট্রেলিয়া

ইকোনমিস্টের রিপোর্ট : বিপ্লবের পর বাংলাদেশ স্থিতিশীল, ড. ইউনূসের উচিত নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা

ইকোনমিস্টের রিপোর্ট : বিপ্লবের পর বাংলাদেশ স্থিতিশীল, ড. ইউনূসের উচিত নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা

ফ্যাসিস্ট সরকার হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও পঙ্গু করেছে: বাবুল

ফ্যাসিস্ট সরকার হাজারো মানুষকে গুম, খুন ও পঙ্গু করেছে: বাবুল

আশুলিয়ায় বিভিন্ন মামলার ৯ আসামি গ্রেপ্তার

আশুলিয়ায় বিভিন্ন মামলার ৯ আসামি গ্রেপ্তার

চিলমারীতে ইনকিলাব সংবাদদাতার পিতার উপর হামলা

চিলমারীতে ইনকিলাব সংবাদদাতার পিতার উপর হামলা

মুজিব কিল্লা প্রকল্পের এপিডির স্ত্রীর নামে নিজ দপ্তরে ঠিকাদারি

মুজিব কিল্লা প্রকল্পের এপিডির স্ত্রীর নামে নিজ দপ্তরে ঠিকাদারি

মির্জাগঞ্জে আইনজীবীকে কুপিয়ে জখম, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

মির্জাগঞ্জে আইনজীবীকে কুপিয়ে জখম, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার

হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন, যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার

রাজনৈতিক সরকারও যেন প্রশাসন দ্বারা চালিত না হয়

রাজনৈতিক সরকারও যেন প্রশাসন দ্বারা চালিত না হয়

ফ্রিজ হলো চিত্রনায়িকা শিল্পী ও ডা. ইকবালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ফ্রিজ হলো চিত্রনায়িকা শিল্পী ও ডা. ইকবালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

ভারতীয় হিন্দু আমেরিকানদের বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র যে কারণে সফল হবে না

ভারতীয় হিন্দু আমেরিকানদের বাংলাদেশ-বিরোধী ষড়যন্ত্র যে কারণে সফল হবে না

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে থাকছে না জমকালো আয়োজন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে থাকছে না জমকালো আয়োজন

৫৭% ব্যবসায়ী মনে করেন কর সংক্রান্ত সেবা পেতে ঘুষ দিতে হয়: সিপিডি

৫৭% ব্যবসায়ী মনে করেন কর সংক্রান্ত সেবা পেতে ঘুষ দিতে হয়: সিপিডি